সিম নিবন্ধন এবং প্রশাসন কর্তৃক ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে খুব একটা সহযোগিতা করতে পারবে না। যতক্ষণ না সরকার মেট্রোপলিটন শহর গুলি ও তার কাছাকাছি অবস্থিত রেল স্টেশন ও রেলের জায়গায় অবস্থিত সকল অননুমোদিত আবাসন বন্ধ করতে সক্ষম হবেনা।
অননুমোদিত আবাসন বলতে আমি বস্তিকে নির্দেশ করছি। বস্তিতে যারা থাকেন তাদের অধিকাংশের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। তাদের সঠিক তথ্যও প্রশাসনের কাছে থাকে না। এমনকি বস্তিবাসীদের মধ্যে যারা অপরাধে লিপ্ত তারা নির্দিষ্টভাবে কোন বস্তিতে থাকেও না।
যত বড় বা ছোট অপরাধই সংঘটিত হোক না কেন সকল অপরাধের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে এই সব ঠিকানা হীন মানুষগুলো। ভাড়াটিয়ার অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য যেহেতু বাড়ীওয়ালা অভিযুক্ত হন সেহেতু প্রতিটি বাড়ীওয়ালাই ভাড়াটিয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকেন। কিন্তু বস্তিগুলির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। বস্তি যিনি স্থাপন করেন তিনি সর্বদাই থাকেন চোখের আড়ালে। আর তার এই অবৈধ স্থাপনায় যে বৈধ লোকের আবাসন করে দেবেন এমন চিন্তা করাও তো বাতুলতা মাত্র। কাজেই যারা সেখানে থাকেন তাদের কোন জবাবদিহিতা থাকে না। প্রকাশ্যে এরা কোন কাজের সাথেও যুক্ত নয় অথচ তারা দিব্যি জীবন ধারণ করছেন। তাদের আয়ের উৎস কি তা সহজেই অনুমেয়।
রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তাও অনেক খানি বিঘ্নিত হয় রেলের জায়গায় অবস্থিত বস্তিবাসীদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের কাড়নে। শোনা যায় রেলে ছিনতাই এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদেরও আবাসও রেল লাইন ঘেঁষা বস্তিগুলো। ছিনতাই, রাহাজানি, দেহ ব্যবসা, রাজনৈতিক দলের হয়ে বোমাবাজি এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত যারা ঘটায় তাদের প্রধান আশ্রয় স্থল এই বস্তি-ঝুপড়ী। কাজেই সরকারের এই দিকটায় নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরী।
কতটা সম্ভব জানি না তবে এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হল ঢাকাসহ মেট্রোপলিটন শহর গুলিতে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিককে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচয় পত্র প্রদান করা হোক। যারা ঢাকায় থাকেন না কিন্তু কাজের তাগিদে প্রতিদিন যাওয়া আশা করেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের পরিচয় পত্র বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
কোন কোন প্রয়োজনে কারো কারো জন্য সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃক অস্থায়ী পরিচয়পত্রও প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কাজটি সহজ নয় মানি। তবে মেট্রোপলিটন শহরে বসবাসকারীদের নিরাপত্তায় এ ধরনের একটি ব্যবস্থা থাকলে বোধ হয় ভাল হত।
সেই সাথে এই সব উদ্বাস্ত মানুষগুলি মফস্বলে চলে গেলে সেসব যায়গায়ও কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে যা দেশের অর্থনীতির জন্যও মঙ্গলজনক।
kmgmehadi@gmail.com
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
বস্তিবাসীদের অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িত- এটা যেমন সঠিক, তেমনি সঠিক যে অনেক অপরাধী বস্তিবাসীদের জিম্মি করে সেখানে আস্তানা গড়ে। তাই সব অপকর্মের জন্য বস্তিবাসীদের দোষারোপ সঠিক মনে করি না।
যে কোন অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়র ক্ষমতা ও অধিকার সরকার সংরক্ষণ করে। কিন্তু যে লোকগুলো আশ্রয়হীন তাদের আশ্রয় দেওয়াও তো সরকারের দায়িত্ব। বস্তির শ্যাঁতশ্যাঁতে নোংরা পরিবেশে যারা থাকেন, তারা যে মহা আনন্দে সেখানে থাকনে, তাতো নয়। তারা সেখানে থাকতেবাধ্য হন।
কি কারণে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন, কেনইবা তারা এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন, সেটাও তো বিবেচনায় আনতে হবে।
বস্তিবাসীদেরঅনেকেই ভাসমান। তাদের নিজেদের এক খণ্ড জমিও নেই। তাদের যদি আপনি বস্তি থেকে উচ্ছেদ করেন, তারা কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে সেটা বিবেচনা করতে হবে।
এই ঢাকা শহরের একটা বড় জনগোষ্ঠী সামান্য আয়ের মানুষ। এরা ভাসমান ব্যবসা করেন, হকারগিরি করেন, আপনাদের, আমাদের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। অনেকে গার্মেন্টএ চাকরি করেন। এসব মানুষকে আমরা যে বেতন দেই তাতে কি তারা কোন ভদ্র এলাকায় তো দূরের কথা স্বীকৃত বস্তিতে বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে পারবে?
গ্রামে এখন কোথায় কর্মচাঞ্চল্য? এক কৃষকের যে জমি আছে, তার পরিবারের সদস্যরাই সেই জমির জন্য অতিরিক্ত জনশক্তি( Surplus Laborer) যে জমিতে দুজন লোক নিয়োগ করলেই চলে সেখানে এখন চারজন কাজ করেন। বিষয়টা নিরব বেকারত্ব দিয়ে বোঝানো যায়। আর কৃষি উপকরণের যে মূল্য তাতে কোন কৃষক আবাদ করে তার মূলধনটুকুও সংগ্রহ করতে পারেন না। তাই তার গ্রামে থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই।
এমতাবস্থায়, শহর বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোই হল এ বেকার গ্রামবাসীদের দু পয়সা রোজগারের জায়গা। তারা যখন গ্রামে চাষের জমি পায় না, জমিতে কাজ করে সংসার চালাতে পারে না কিংবা গ্রামে কোন কাজই থাকে না, তখন তারা চলে আসেন শহরে। তারা অত্যন্ত স্বল্পকালীন সময়ের জন্য আসেন। তারা রিকসা চালান, সিএনজি চালান, দৈনিক কামলা খাটেন, কিংবা হকারি করেন। এসব মানুষ দিন শেষে আশ্রয় নেয় বস্তিতে। এখন বস্তি উচ্ছেদ করলে তারা যাবে কোথায়?
তাই সমস্যার গোড়াতে হাত না দিয়ে যতই বস্তি সরান কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং বিষয়টি হয়ে পড়বে অমানবিক। সরকারকে তখন বিনা কারণেই সমালোচনার শিকার হতে হবে।
মোঃ গালিব মেহেদী খান বলেছেনঃ
রিকসা চালান, সিএনজি চালান, দৈনিক কামলা খাটেন, কিংবা হকারি করেন। এমন অসংখ্য লোক আছেন যারা ছোট ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। উদাহরণ স্বরুপ উত্তরার পাশেই এমন কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে এক একটি রুপ চার/পাচ হাজার টাকা করে ভাড়া দেয়া হয় এবং সেখানে এই শ্রেনীর লক গুলোই থাকেন।
আর গতকালকেই সুনামগঞ্জের ধান কাটার বিপাক নিয়ে কথা বলছিলেন কৃষকরা তারা বলছিলেন ধান কাটার লোক পাচ্ছেন না। আপনি জানেন কিনা প্রতিবছর কুমিল্লা, রংপুর সহ বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ধান কাটার মৌসুমে অসংখ্য মানুষ ভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করে থাকেন।
এ ছারাও যাদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই যারা ভুমিহীন সরকার তাদের বিষয়ে আরো মনোযোগী হবেন সেটা তো আমরাও চাই। তবে বস্তিকে রেখে আপনি এদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে মনে করি না।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
মানুষ সব সময় তার বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নততর অবস্থায় যেতে চায়। সরকারি ব্যবস্থা অপ্রতুল। সেগুলোর মানও অত্যন্ত নিচু। গুচ্ছগ্রাম, আবাসন, আশ্রয়ন ইত্যাদি প্রকল্প মাত্র সামান্য ভূমিহীনকে শুধু আশ্রয় দিতে পেরেছে, কিন্তু কর্মসংস্থান করতে পারেনি। আমার আশ্রয় তখনি আকর্ষণীয় হবে, যখন আমি পেটের ভাত যোগাড়ের পথটি পাব। যারা আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা তারাও ঢাকা শহরে দুপয়সা রোজগারের জন্য এসে বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
হ্যাঁ, ধান কাটার মওসুমে কামলার অভাব হয়। এর কারণ ধানের কাজে মামলারা যত রোজগার করে রিকসা চালিয়ে বা ফুটপাতে হকারি করে তার চেয়ে বেশি পায়। অধিকন্তু তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নতির ফলে কামলা জনশক্তি দ্রুতই হ্রাস পাচ্ছে।
অবস্থা যাই হোক, যদি বিকল্প ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে বস্তি উঠবে না। এক জায়গায় বস্তি ভাঙ্গবেন অন্য জায়গায় গজাবে। মানুষ রেললাইন, বাসলাইন সব স্থানেই ডেরা পাতবে। তাদের হয়তো সাময়িকভাবে উঠিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু তারা যাবে না। কারণ তাদের যাবার কোন জায়গা নেই।