প্রসঙ্গ: জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 12 August 2016, 06:18 AM
Updated : 12 August 2016, 06:18 AM


আলোচনা শুরুর পূর্বেই জেনে নেয়া ভাল যে ফতোয়া কি? ইসলামে ফতোয়া বা ফাতওয়া হোল বিধান ও সমাধান, যা কোনও ঘটনা বা অবস্থার প্রেক্ষিতে ইসলামি শরীয়তের দলিলের আলোকে মুফতি বা ইসলামি আইন-বিশেষজ্ঞ প্রদান করে থাকেন। যখন কোন ব্যক্তি সরাসরি কুরআন ও হাদিস কিংবা ফিকহের আলোকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান বের করতে অপারগ হন তখন তিনি মুফতির কাছে এই বিষয়ের সমাধান চান। এটিকে ইসলামের পরিভাষায় ইসতিফতা বলে। মুফতি তখন ইসলামী শরিআতের আলোকে স সমস্যার সমাধান জানিয়ে দেন। এই সমাধান প্রদান করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইফতা বলে এবং প্রদত্ত সমাধান বা বিধানটিকে ফতোয়া বলে।

সারা বিশ্বেই ইসলাম যখন জঙ্গিবাদ দ্বারা আক্রান্ত তখন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সর্ববৃহৎ ঐক্যমত্য গঠন করা হয়। যেখানে ভারতের ১,০৬০ জন আলেম একত্রে "আই এস" এর কার্যক্রম কে জঙ্গিবাদ আখ্যায়িত করে হারাম ঘোষণা করেন। আর ২০১৬ এর জুন মাসে একই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মানব কল্যাণে শান্তির ফতোয়া প্রদানের উদ্দেশ্যে শোলাকিয়ার ইমাম ফরীদ উদ্দিন মাসুদ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জমিয় তুল ওলামা নামক একটি সংগঠন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১ হাজার ৮৫০ জন মুফতি, আলেম-ওলামার স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে এদের মধ্যে ৯ হাজার ৩২০ জন নারী আলেম রয়েছেন। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে এই স্বাক্ষর নেওয়া শুরু হয়ে গত ৩১ মে শেষ হয়। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ইসলাম ও জঙ্গিবাদকে সমার্থক করে তোলার যে চেষ্টা চলছে তার থেকে রেহাই পেতে এমন ফতওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বের প্রতিটি কোনেই সমানভাবে অনুভূত হচ্ছিল। সে জন্যেই এ উদ্যোগ।

ইসলামের কোন ফতোয়াই নির্দিষ্ট কোন স্থান কাল বিশেষের জন্য নয়, সেটা সমগ্র বিশ্ব মুসলিমের উপরেই বর্তায়। শর্ত হচ্ছে সেই ফতোয়া হতে হবে সঠিক। আর এই ফতোয়াটির ন্যায্যতা প্রমাণ তো আরও অনেক বেশি জরুরী। কেননা এর সাথে ইসলামের মুল নীতির সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি ইসলাম শান্তির ধর্ম। মহানবী(সঃ) শান্তির পথেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রশ্ন হল, জঙ্গিবাদ বিরোধী এই ফতোয়া কি এ পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমের কাছে তুলে ধরা হয়েছে?

যদি এই ফতোয়া নিয়ে কোথাও কোন প্রতিবাদ উঠে তাহলে তা যেমন আলোচনার দাবী রাখবে অপরদিকে যদি ফতোয়াটি নির্বিবাদে গ্রহণ যোগ্যতা লাভ করে তাহলে এটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলেই বিবেচিত হবে। কিন্তু কাজটি এককভাবে কোন সংগঠনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ। আমরা এখন পর্যন্ত সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে দেখিনি। শুধুমাত্র কোন সংগঠন বা ব্যক্তি উদ্যোগে যে এত বড় একটি কাজ করা সম্ভব নয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে দেশেই ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ এই ফতোয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, ইসলামী আইনে বিশেষজ্ঞ মুফতিরাই শুধু ফতোয়া ঘোষণা করতে পারেন। সেখানে এক লাখ স্বাক্ষরকারীর বড় অংশ মুফতি না হওয়ায় এই ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হবে না।সূত্র: বিবিসি ২২/৬/১৬ যদিও ফতোয়া দেয়ার ব্যাপারে ২০১১ সালে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল, তাতে বলা হয়, ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দিতে পারবেন যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তিরা। সেখানে বিশেষ কোন শ্রেণীর ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মুফতি ফয়জুল্লাহর এই বিতর্কের জবাবে ফতোয়া ঘোষণাকারী শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেছেন, নেহাতই রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে জঙ্গি বিরোধী ফতোয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

"আলেম, মুফতি এবং ইমামদের স্বাক্ষর আমরা নিয়েছি। আমাদের দেশে নামের আগে মুফতি নেই, এমন অনেক আলেম আছেন। এখন যদি শ্রদ্ধেয় আলেম আহমেদ শফি ইসলাম নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেন আমি কি বলবো, সেটা বিশেষজ্ঞ মত হয়নি। আসলে বিতর্ক সৃষ্টির জন্য কিছু বক্তব্য তোলা হচ্ছে।" সূত্র: বিবিসি ২২/৬/১৬

আমাদের মত সাধারণ মুসলমানের কথা হচ্ছে বিতর্ক যখন উঠেছে তখন তার অবসানও প্রয়োজন। এই সব বিতর্ক কাটিয়ে উঠতেও এই ফতোয়াকে বিশ্ব মুসলিমের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের মতামত গ্রহণ জরুরি। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ একটি ভয়াবহ সমস্যা কাজেই আলোচিত ফতোয়াটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার দ্রুতই একে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন একে একটি স্থায়ী ফতোয়ায় রূপদানে সচেষ্ট হবেন। আমরা সেটাই কামনা করি।

kmgmehadi@gmail.com