পারিবারিক কলহ এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 26 Sept 2016, 00:23 AM
Updated : 26 Sept 2016, 00:23 AM

আমাদের সমাজে যত অপরাধ সংগঠিত হয় তার একটা বড় অংশই পারিবারিক সহিংসতা। যার মূলে পরিবারের সদস্যরাই প্রধানত দায়ী। একজন জেনে বুঝে অথবা না জেনেও কোন অন্যায় আচরণ করতে পারেণ। তার প্রতিবাদে তার স্বজনেরা কি আচরণ করছে তার উপরে নির্ভর পরবর্তী অন্যায়ের ধারাবাহিকতা।

এ ক্ষেত্রে স্বজনেরা দু'ধরনের কাজ করে থাকেন এক তাকে বোঝানো বা কাউন্সিলিং। দুই তার ঠিক উল্টোটা অর্থাৎ তাকে বোঝানোর পরিবর্তে উস্কে দেয়া বা তাকে অত্যধিক স্নেহে আগলে রাখার চেষ্টা করা। প্রকারান্তরে যা ঐ অন্যায় আচরনকেই বৈধতা দেয়। স্বজনেরা যদি প্রথম কাজটি করত তাহলে সে হয়ত নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হত। পরবর্তীতে আর একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাত না।

কিন্তু তারা যদি দ্বিতীয় কাজটি করেণ তাহলে ঐ অন্যায়ের মাত্রা ক্রমশই বাড়বে এবং পরিবারটি তখন নরক গুলযার হয়ে উঠবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি শিশু কোন অপরাধ করায় তার বাবা যদি তাকে একটি ধমক দেণ। তখন তার মায়ের দায়িত্ব শিশুটিকে বোঝানো। তার ভুল এবং এর পরিণতি এবং সর্বোপরি বাবা যে তার শত্রু নয় বরং তাকে শোধরানোর জন্যই ধমকটি দিয়েছেণ এটা শিশুটিকে বোঝানো। তাতে ঐ শিশু একই ভুল আর পরবর্তীতে করবে না। পক্ষান্তরে সেই মা যদি তখন শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে আদরে আদরে ভড়িয়ে দেয়। যদি বাবার সাথেই বিবাদে লিপ্ত হয় তখন এই শিশুর অপরাধের মাত্রা বাড়বে বৈ কমবে না।

একজন মানুষ যখন অনবরত অন্যায় আচরণ করতে থাকে তখন তার প্রতিপক্ষ হয় সাথে সাথে উল্টো অপরাধ করে বসবে। নয়ত তার স্বজনদের কাছে এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবে। যখন সে সেই সাহায্য কামনা করেন তখন তার স্বজনদের উপর দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। স্বজনদের তখন উচিৎ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সুপথ বাতলে দেয়া। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হল আমরা সেই কাজটি করতে ব্যর্থ হই। আমরা নিজেদের পক্ষ অবলম্বন করে সুবিধা অনুযায়ী একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেই।

নির্মম নির্যাতনে যেমন উর্বর আবাদি ভূমিও এক সময় রুক্ষ- নির্মম উপত্যকায় পরিণত হয় ঠিক তেমনি সমাজ সংসার যখন ব্যক্তি বিশেষের উপর কোন কিছু অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখন তারও আবেগ-বিবেক ক্রমশ ক্ষয় হতে হতে সেও এক সময় ঐ বনভূমির মতই রুক্ষ – নির্মম হয়ে ওঠে। একসময়ের হাসি খুশি প্রাণবন্ত নিপট ভদ্র লোকটাও তখন হিংস্র – উন্মাদের ন্যায় আচরণ করতে শুরু করে। তখন আমরা তাকে ঘৃণা করতে পারি, তাকে অভিশাপ দিতে পারি। এমনকি শাস্তিও দিতে পারি। কিন্তু সেটা তার প্রাপ্য ছিল কিনা সেটা ভেবে দেখার মত সুস্থ মানুষ হতে পারি না। এ কারণেই ভেঙ্গে যাচ্ছে সংসার। একারণেই নিত্য এ সমাজের গায়ে বড় বড় ক্ষত তৈরি হচ্ছে। সে ভয়ঙ্কর ক্ষত দেখে আমরা আঁতকে উঠছি সত্য কিন্তু নিজেদের ভুলগুলোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছি না।

কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। অপরাধ কারো নেশা নয় (ব্যক্তি বিশেষের কথা আলাদা)। সাধারণত মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে প্রতিকুল পরিবেশের কারণে। বেশীরভাগ সময়ে সে পরিবেশ তার কাছের মানুষেরাই তৈরি করে দেয়। এর বাইরেও আছে সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা। কখনো কখনো সমাজ তার সাথে অসহযোগিতা করে। আবার রাষ্ট্রও যে আইন তৈরি করে তাও অনেক সময় হয়ে যায় একপেশে। তখন পরিবারে, সমাজে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রতিটি মানুষের লক্ষ একটাই, আর তা হল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। এটা পেতে হলে যে অপরাধী হয়ে উঠতে হবে তা তো নয়। সেটা সবাই বোঝে তারপরেও কেন সে অপরাধী হয়ে উঠে। কেন সে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দেয় এটা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। গেল গেল বলে রব তুলে লাভ নেই। সমস্যার মুলে যাবার চেষ্টা করুন দৃষ্টি প্রসারিত করুন। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করুন।

kmgmehadi@gmail.com