সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার এটাই সময়

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 1 Nov 2016, 07:53 PM
Updated : 1 Nov 2016, 07:53 PM


কেউ কাবাঘরের ছবি এডিট করে কাবাঘরের উপর শিবমূর্তি বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে আবার এর প্রতিক্রিয়ায় আরেক দল হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করছে। পুরো বিষয়টাই যে পরিকল্পিত নয় সেটা কে বলতে পারে? সমাজে এক দল অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে এটা তো সবারই জানা তারপরেও কেন বা কিভাবে এটা ঘটতে পারছে?

রসরাজ দাস নামে দায়ী যুবককে স্থানীয়রা পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারপরেও এর প্রতিবাদে আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের নেতারা উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। খবরটা এমন হলেই যথেষ্ট ছিল, হয়নি। ঘটনাটা এখানেই থেমে থাকেনি ঐ সমাবেশ চলাকালেই এক দল দুর্বৃত্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাংচুর করে। যে ঘটনার পর প্রায় একশত হিন্দু পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এমন একটি স্পর্শ কাতর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন যখন আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতকে প্রতীবাদ সমাবেশের অনুমতি দিল তখন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেন করল না?

রামুতে ঘটা ঘটনাগুলো কি আমরা ভুলে গিয়েছিলাম না কি এটা দায়িত্ব হীনতার উদাহরণ। যারা সমাবেশের আয়োজন করলেন তাঁরাও নিশ্চয়ই এমন একটি ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু দায় কি এড়াতে পারেন? ফেসবুকে মুসলিম, হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের ধর্ম নিয়ে নিয়ত নানা রকম কটূক্তি করা হচ্ছে। যারা এই কাজগুলো করছে তাঁরা তো অনেকেরই ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে চাইলেই এদেরকে তাঁরা নিরুৎসাহিত করতে পারেন। ঐ সব একাউন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারেন। প্রশাসনকে জানাতে পারেন করছেন কি? এখন আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যদি একটি করে সাম্প্রদায়িকতার ভুত বাসা বেধে থাকে তাহলে উত্তরণটা ঘটবে কি করে।

না জেনে না বুঝে কেবলমাত্র হিরোগিরী ফলাতে গিয়েই এই উস্কানি মূলক আচরণ করা হয়। যারা করছে তাঁরা একজনও ধার্মিক নয়। একজনও নিজ নিজ ধর্মের প্রতি অনুগত নয়। সমাজের এই সব বিষাক্ত জীবগুলোর সমূলে বিনাশই এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। আর এ জন্যে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ জরুরী।

একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন এ দেশের শান্তিপ্রিয় প্রত্যেকটি মানুষ দেখেন। সাম্প্রদায়িক এই মানুষগুলোর সংখ্যা কি এতই বেশী যে তাদের উপর শান্তিপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না? তা কিন্তু নয়, আমাদের উদার নৈতিক এই সমাজে দুষ্ট লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। সমস্যা হল সাম্প্রদায়িক শক্তিটি যতটা সংগঠিত অসাম্প্রদায়িক শক্তি ততটাই অসংগঠিত। যার সুযোগটিই তাঁরা নিচ্ছেন।

বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত করতে হলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক শক্তির সুসংগঠিত হওয়ার বিকল্প নেই। আর বর্তমান সময়টিই সে জন্যে সবথেকে উপযুক্ত সময়।