ব্লগার ‘উৎপল চক্রবর্তী’ একটি নক্ষত্রের পতন!

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 21 May 2017, 06:06 PM
Updated : 21 May 2017, 06:06 PM


২০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন ব্লগার উৎপল চক্রবর্ত্তী। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পেশায় প্রকৌশলী উৎপল (৪৫) ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে নিয়মিত লিখতেন। ইস্টার্ন মল্লিকার পেছনে একটি বহুতল ভবনের নিচতলায় নিজের অফিসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে আহত হন উৎপল। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর উৎপলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে ধানমণ্ডির সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। উৎপল স্ত্রী এবং দুই মেয়ে চন্দ্রকথা ও রূপকথাকে রেখে গেছেন।

বাংলা ব্লগার প্ল্যাটফর্মে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন এই গুণি লেখক। আমরা চারদিকে যখন নৈতিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়ন আর সর্বগ্রাসী স্বার্থান্বেষী মানুষের দোর্দণ্ড প্রতাপে হাঁপিয়ে উঠেছি তখনও কিছু কিছু মানুষকে এই সমাজের মধ্যে থেকেই জেগে উঠতে দেখি। নিভৃতচারী এই মানুষগুলো কোন রকম কোন প্রাপ্তির আশা না করেই নিজেদেরকে উজাড় করে দেন। কেউ তার লেখনির মাধ্যমে, কেউ সামাজিক ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে, কেউ বা মানবিকতার মিছিলে সোচ্চার হয়ে।

উৎপল চক্রবর্ত্তী ছিলেন সমাজ সচেতন তেমনি একজন লেখক। 'উৎপল চক্রবর্ত্তী' ছিলেন ব্লগ ডট বিডিনিউজ২৪ ডটকমের একজন নিয়মিত লেখক। শুধু লেখাই নয় তার আর একটি বড় গুন ছিল সহব্লগারদের লেখায় উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য প্রদান এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করা। আমার মনে আছে 'মুসলমান বাঙালি যেভাবে পোশাকে অবাঙালি হয়ে উঠল (১ম পর্ব)' প্রকাশের পর উৎপল দা'র একটি দিক নির্দেশনামূলক মন্তব্যের কারণে আমি দীর্ঘ সময় একটি বিষয় নিয়ে ঘেঁটে দ্বিতীয় কিস্তির লেখাটা শেষ করেছিলাম। তিনি শুধু প্রেরণা দাতাই ছিলেন না তিনি ছিলেন দিক নির্দেশকও। তিনি তার সহব্লগারদের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার মৃত্যু সংবাদে সহব্লগারদের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া ছিল সেই ভালবাসা থেকেই উৎসারিত। এটা তার একান্তই নিজস্ব অর্জন। তিনি ভালবাসতেন বলেই ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

উৎপল চক্রবর্ত্তী দেশকে ভালবাসতেন, মানুষকে ভালবাসতেন। জাতি ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি মানবতার কথা বলতেন। যা তার লেখনীগুলোতে সর্বদাই স্পষ্ট হয়ে উঠত। তথ্য সমৃদ্ধ তার লেখনিতে উঠে এসেছে সমসাময়িক অসঙ্গতিগুলো। তিনি লিখেছেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাধর্মী লেখা।

ব্লগ ডট বিডিনিউজ২৪ ডটকমে উৎপল চক্রবর্ত্তীকে যেভাবে পরিচিত করা হয়-

ব্লগার: উৎপল চক্রবর্ত্তী
সর্বমোট পোস্ট করেছেনঃ ৫০ টি
সর্বমোট মন্তব্য করেছেনঃ ২২৭ টি
সর্বমোট মন্তব্য পেয়েছেনঃ ৩৯২ টি
নিবন্ধিত হয়েছেনঃ বৃহস্পতিবার ০৫মার্চ২০১৫
ব্লগিং করছেনঃ ২ বছর

উৎপল চক্রবর্ত্তীর যত লেখা-
এইচএসসি পরীক্ষা শেষের সাথে সাথেই হতে পারে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা। ২৮এপ্রিল২০১৭
নববর্ষে দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা কুমিল্লায়। ১৬এপ্রিল২০১৭
এইচএসসি পরীক্ষা শেষের সাথে সাথেই হতে পারে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা। ২৮এপ্রিল২০১৭
নববর্ষে দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা কুমিল্লায়। ১৬এপ্রিল২০১৭
'বাঁধন' স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সবচাইতে বড় সংগঠন। ১১এপ্রিল২০১৭
কুসিক নির্বাচন: মোশতাকের কারণে নৌকাডুবি ও নতুন সেলফি উৎসব। ০১এপ্রিল২০১৭
গণহত্যা ও নির্যাতন: গল্প উপন্যাসে নয়, লেখা আছে যুদ্ধ দলিলে। ২৫মার্চ২০১৭
নো ওয়ান কিলড মল্লিকা। পূর্বাহ্ন ২৪মার্চ২০১৭
পুত্রের কয়েকটি পত্র ও পরিবারে পিতার প্রত্যাবর্তন। ১৮মার্চ২০১৭
কাদম্বিনী ফ্লাইওভার তলে মরিয়া প্রমাণ করিল, সে বাঁচিয়া ছিল। ১৫মার্চ২০১৭
ভিনদেশী চিত্রগ্রাহক রবীন সেনগুপ্ত'র না জানা ১৯৭১। ০৮মার্চ২০১৭
ড্রাইভার, মালিক, জনগণ ও সরকার- দায় কতটুকু কার?। ০২মার্চ২০১৭
ভাসমান বজরার হাসপাতাল থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ডায়রিয়া হাসপাতাল আইসিডিডিআর, বি। ২৬ফেব্রুয়ারী২০১৭
পিয়ারু সরদার, প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের নেপথ্য নায়ক। ২১ফেব্রুয়ারী২০১৭
বিভাগের নাম- প্রথমত কুমিল্লা, দ্বিতীয়ত কুমিল্লা
কুমিল্লার 'রামমালা গ্রন্থাগার' -আলো থেকে অন্ধকারের পথে। ১১ফেব্রুয়ারী২০১৭
মানব সেতুতে মনিব, অপরাধ নয় গণতন্ত্র। ০৩ফেব্রুয়ারী২০১৭
বিদ্যাদেবী কথা ও 'চারুকলা'র অসাম্প্রদায়িক সরস্বতী। ০১ফেব্রুয়ারী২০১৭
নেতানেত্রী ভ্যান রিক্সায়, আমজনতা মূর্ছা যায়। ৩০জানুয়ারী২০১৭
রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মানববন্ধন ও অসহায় দেবী দুর্গা। ২৭জানুয়ারী২০১৭
শিশুর কাঁধে ভারী ব্যাগ – সবাই নিরুদ্বেগ। ২৪জানুয়ারী২০১৭
যে সূর্য সেনকে সাগরে ডুবিয়েছিলি ব্রিটিশ মূর্খ, সেই অগ্নিশিখাতেই ডুবে গিয়েছিল তোদের সূর্য। ১৪জানুয়ারী২০১৭
ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা হোক প্রেসক্রিপশন। ১০জানুয়ারী২০১৭
নাগরিক সাংবাদিকতা ও নাগরিকের দায় । ০৫জানুয়ারী২০১৭
ঈশ্বরপুত্র যিশু, পাপীদের পরিত্রাণে পুনরুত্থান। ২৩ডিসেম্বর২০১৬
শহীদ বুদ্ধিজীবী 'এ কে এম নূরুল হক' পরিবার জানে না আজও, মৃত্যু কিংবা নিখোঁজ! ১৬ডিসেম্বর২০১৬
'বাবার একাত্তরের আংটি'- শাওন মাহমুদ। ১৫ডিসেম্বর২০১৬
হাজার শিশুর মা 'প্যাট ক্যার' ও 'শ্রীপুর গার্লস ক্রিকেট টিম'। ১০ডিসেম্বর২০১৬
কিসিঞ্জারি আর নিউট্রন বোমা বুঝি, মানুষ বুঝি না আমি -হেনরি কিসিঞ্জার ০৭ডিসেম্বর২০১৬
পাকিস্তানে 'শান্তি' নয়, 'বুদ্ধ' ফিরে এলেন নয় বছর পর ০২ডিসেম্বর২০১৬
হত্যা নয় আত্মহত্যা, বলেছেন ক্রাইম রিপোর্টার, ফুলবাড়িয়া ২৮নভেম্বর২০১৬
'ফিদেল ক্যাস্ট্রো'- পৃথিবী নামক গ্রহের সর্বশেষ সাহসী মানুষ ২৭নভেম্বর২০১৬
কুমিল্লার 'মাতৃ ভাণ্ডার' রসমালাই, একটি বিশ্বরেকর্ড এবং জিআই নিবন্ধন ২৩নভেম্বর২০১৬
ব্লগ দিয়ে মোরা নেট চালাই, ঘরে খেয়ে বনে মোষ তাড়াই ১৮নভেম্বর২০১৬
চাঁদ সওদাগরের ফুলমুন-সুপারমুন আর বাংলার অর্ধচন্দ্র ১৫নভেম্বর২০১৬
ধইন্যাখোলার সুলেমান বাই, আমি 'ডোনাল্ড ট্রাম্প' ফ্রম ওয়াশিংটন ডিসি ১৩নভেম্বর২০১৬
চোখ খুলে দেখো, আমিও ছিলাম মানুষ তোমারি ০৯নভেম্বর২০১৬
'দ্য মিস্টার সাইকেল' ও বড় হুজুর ০২নভেম্বর২০১৬
মেয়ে জেনে রাখো, তোমার পিতাও একজন 'ধর্ষক' হতে পারেন, কেননা তিনিও ২৮অক্টোবর২০১৬
অল্প স্বল্প গণিত গল্প -পর্ব ১ ২৫অক্টোবর২০১৬
সমালোচনা করতে যেও না, যা তুমি বোঝ না – বব ডিলান ১৫অক্টোবর২০১৬
বাংলার সুস্বাদু 'কৈ' -অস্ট্রেলিয়ায় হৈচৈ। ১৪অক্টোবর২০১৬
ভিআইপি দুর্গা দর্শন। ১১অক্টোবর২০১৬
ম্যাম্‌ আমি এখন আর কোন নেশা-টেশা করি না। ০৭অক্টোবর২০১৬
সুন্দরবন ও দুর্গা। ০৩অক্টোবর২০১৬
পকেট হারকিউলিস। ২০সেপ্টেম্বর২০১৬
গম্বুজ স্থাপনা। ১৫সেপ্টেম্বর২০১৬
ভূমিকম্প বরং উদযাপন করুন, ২৮জুন২০১৬
বাঁশ বাগানে মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ ২৬জুন২০১৬
নিজেরাই গড়ি নিজেদের মৃত্যুকূপ ২৫এপ্রিল২০১৫
না শোনা গান ,সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় -"বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়"২৬মার্চ২০১৫

মানুষ মরণশীল আর তার জীবনের ব্যাপ্তিকালও খুব কম এই কম সময়ে একজন মানুষ চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। একটি শোষণ মুক্ত, সমতা ভিত্তিক, মানবিক সমাজ বিনির্মাণে একজন মানুষ যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন তেমনি নেতিবাচক ভূমিকাও রাখতে পারেন। মানুষ কেবল এই ইতিবাচক ভূমিকা রাখা মানুষগুলোকেই মনে রাখেন। মহান স্রষ্টার কাছে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। মানুষের এই ভালবাসা এই স্মরণই একজন নিভৃতচারী লেখকের সর্বত কৃষ্ট প্রাপ্তি। একজন উৎপল চক্রবর্ত্তী অসংখ্য নবীন ব্লগারকে পথ দেখাবেন। একজন উৎপল চক্রবর্ত্তী অগুনতি মানুষকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সোচ্চার হতে শিখিয়েছেন। তার অবর্তমানে তার লেখনি একইভাবে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।

যদিও বলছি নক্ষত্রের পতন, আসলে কি তাই? নক্ষত্র পতনের সাথে সাথেই তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। মুছে যায় তার সব নাম চিহ্ন। কিন্তু উৎপল চক্রবর্ত্তীর মত যারা লিখে গেছেন। যারা কিছু মানুষ তৈরি করে গেছেন। যারা আধমরাদের ঘা মেরে জেগে উঠতে প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁরা সেই মানুষগুলোর মধ্যে, তাদের সৃষ্টি কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।

তাই উৎপল দা চলে গেছেন আমরা এ কথাটি না হয় নাই বলি। হয়ত তার নতুন লেখা আমরা আর পাব না কিন্তু যে লেখাগুলো চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে তা তো আর মুছে যাবে না। আমরা না হয় সেখানেই খুঁজে নেব প্রিয় উৎপল দা'কে। অনুচ্চারিত কণ্ঠে বলব দাদা আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।