একটি আত্মসমালোচনা

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 23 May 2012, 03:33 PM
Updated : 23 May 2012, 03:33 PM

আমরা বড় বেশি হিপোক্রেট হয়ে যাচ্ছি। ১লা বৈশাখে আমাদের খাঁটি বাঙালি সাজার সে কি তীব্র প্রতিযোগিতা। পান্তা ইলিশ থেকে শুরু করে আটপৌরে শাড়ী কোনটাই বাদ যায় না। বাসায় এসে কিন্ত ঠিকই "ইস পেয়ার কি কেয়া নাম দিও" কিংবা "সাথিয়া" দেখতে বসে যাই।

২১শে ফেব্রুয়ারীতে বোঝা যায় বাংলা ভাষার জন্য আমরা কত দরদী। জিজ্ঞেস করুন ভাষা দিবস ইংরেজী মাসের তারিখে পালন না করে যদি বাংলা মাসের তারিখে পালিত হত তাহলে তা কোন মাসের কত তারিখ হত? দেখুন ক'জন জানে?

আর দেশপ্রেম? সে তো দুর্দান্ত, দেশপ্রেম সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার আগে খেয়াল করুন আপনার পিঠের কত জোর। কতটা মার সইতে পারবেন। আপনি কি ৭১ শব্দটির ব্যবহার দেখেও আঁচ করতে পারেন না আমাদের দেশপ্রেম কতটা গভীর।

এরপরেও যদি জানতে চান নিত্য ব্যবহার্য্য পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কাছে দেশীয় পন্য কতটা প্রাধান্য পায়। আমরা নির্দ্বিধায় বলে দেব "দেশপ্রেম থাকলেই যে আমার নিত্যব্যবহার্য্য পন্যের বা আমার পছন্দের তালিকায়ও দেশীয় পণ্যের অগ্রাধিকার থাকতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। দেশপ্রেম দেশপ্রেমের যায়গায় আর ভাললাগা ভাললাগার জায়গায়"। আশ্চর্য্ হওয়ার কিছু নেই। আমরা এমনই।

এদেশে এত যে টিভি চ্যানেল তাতে কি মানসম্পন্ন কিছুই পাচ্ছি না। যা আ্মাদের বিদেশি চ্যানেল নির্ভরতা কমাতে পারে? পাচ্ছি কিন্ত নিচ্ছি না। আমরা যে শুধূমাত্র একটি চ্যানেল দেখে ঐ চ্যানেলের ব্যাবসাই সমৃদ্ধ করছি তা তো নয়। সেই সাথে আমদানী করছি তাদের সংস্কৃতি, তাদের ভাষা, প্রচার এবং প্রসার করছি তাদের পন্যের। আমার গিন্নী সিরিয়ালে আর আ্মার সন্তান কার্টুনে হিন্দি রপ্ত করছে। এবং তা চর্চা করে অন্যদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, হিন্দি ভাষায় ক্রমাগত তাদের জ্ঞানবৃ্দ্ধিতে ঈষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রতিবেশিও আজকাল হিন্দি রপ্ত করতে শুরু করেছেন শুধু তাই নয় তিনি এখন তার বেশভূষাও সিরিয়াল অনুযায়ী শুরু করেছেন। আর তাই আগে যাও বা কালে ভদ্রে দেশীয় পন্য ব্যবহার করতেন এখন আর তাও করছেন না। আর এদিকে যে আ্মার সন্তান আধো আধো বাংলা বলে তবে তার চেয়ে ভাল হিন্দি বলতে শুরু করেছে তার কি হবে। ভাবছিই না।

সত্যি বড় অদ্ভুত আমাদের মনোজগৎ। আমরা যা বলি তা মীন করিনা যা মীন করি তা বলি না। আমরা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারছি না, আমরা ভালবাসার নামে ভন্ডামি করে বেড়াই। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ তো করিই না বরং যে করে তাকেও হেনস্তা করতে ছারি না। আমরা মা-বাবাকে গ্রামে বা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসে কত ঘটা করে "মা" দিবস, "বাবা" দিবস পালন করি। আমরা খুবই বন্ধুপ্রিয়। আর তাই অনলাইনে বন্ধুত্ব করার জন্যও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই মাঝে মাঝে একটু আধটু মিথ্যার আশ্রয় নেই এই আর কি।

চরম ধান্দাবাজ একজন যখন চোখের জল নাকের জল এক করে এসে বলে ভুল করেছি আবার সুযোগ দাও। দরদে আমাদের বুক উথলে উঠে। পারি তো তাকে পু্নর্বাসনের জন্য জানটা দিয়ে দেই। আর সৎ সজ্জন জেনেও একজনকে দূরে সরিয়ে রাখি । তার কথা নাকি শ্রুতিমধুর নয়! এই আমি। এই আমাদের একজন আমি।