চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 3 June 2012, 05:13 AM
Updated : 3 June 2012, 05:13 AM

আমার জানা মতে আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কোন ঔষধের বিজ্ঞাপন দেয়া নিষিদ্ধ আর তার ফলেই ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা প্রিন্ট মি্ডিয়ায় ভারতের মত কোন ঔষধ বা অয়েন্টমেন্ট-এর বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। এর ভাল-মন্দ কো্নটাই আমার আলোচ্য নয়। আমার আলোচনার বিষয় হল ঔষধের নামে যে অহরহ প্রতারনা করা হচ্ছে তা নিয়ে। বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখার স্বার্থে কোন না কোন ক্যাবল টিভি প্রোভাইডারের উপর নির্ভর করি। যাদের সবারই একটি বা দুটি নিজস্ব চ্যানেল রয়েছে। এইসব চ্যানেলের এখন আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে বিশেষ কিছু রোগের বিভিন্ন ঔষধের বিজ্ঞাপন। এবং তারা সফলতার শতভাগ নিশ্চয়তাও এই বিজ্ঞাপনে দিয়ে থাকে। পূর্বে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজন জড়ো করে অদ্ভূত কিছু যৌন রোগের ঔষধের এক ধরনের বিকিকিনি চলত। মুলতঃ যা ছিল চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। এই অপচিকিৎসা আজো অনেক জায়গায়ই চোখে পড়ে। রাস্তার ধারে ফুটপাতে ক্যাসেট প্লেয়ারে রেকর্ড করা কথা শোনা যাচ্ছে। একজন তার সাথে ঠোঁট মিলিয়ে এবং অঙ্গ ভঙ্গী করে সেই কথা বোঝানোর চেষ্টায় রত। এভাবে কেউ অষ্ট ধাতুর আংটি বিক্রী করছে। আবার কেউ মহামুল্যবান, স্বপ্নে পাওয়া অথবা কয়েক পুরুষের গবেষনা লব্ধ এক বিস্ময়কর আবিস্কার মহৌষধ বিক্রী করছে। এইসব গুনি ডাক্তার/কবিরাজ মহাশয়দের কাছে সবরোগেরই ঔষধ পাওয়া যায়। এবং খুবই সল্প মূল্যে। ঔষধের গুনাগুনের সাফল্যের প্রমান স্বরূপ কিছু ভোক্তাও আশেপাশে পাওয়া যায়। যারা নিজেরা সেবন করে উপকৃ্ত হয়ে এখন মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে উপযাজক হয়েই এই গুনি ডাক্তার/কবিরাজ এবং তার ধন্বন্তরী ঔষধের গুণকীর্তনে আত্মনিয়োগ করেছেন। এইসব চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে তারা রোগীর অর্থ অপচয় যাতে না হয় সে দিকে বেশি লক্ষ রাখেন। আর তাই তারা কখনো রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে অহেতুক অর্থ খরচ করান না। এমনকি তারা রোগী সেবাও দিয়ে থাকেন বিনামূল্যে। শুধুমাত্র ঔষধের দামটা দিতে হয়। সমস্যা একটাই, আর তা হল আজ পর্যন্ত কেউ তাদের কাছে গিয়ে সুস্থ হতে পারেননি। তবু কেন লোকে তাদের কাছ থেকে ঔষধ কিনছে?

হ্যা এখানেই তারা সবচেয়ে বেশি সফল। এর পেছনে কারন হতে পারে একাধিক।

হতে পারে আমরা মিষ্টি কথায় সহজে ভুলে যাই, ঝোঁক চাপলে আমরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। আমরা বিচার বিশ্লেষণ না করেই অন্যের কথা বিশ্বাস করে বসি। এছাড়া এই গুণিজনদের নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে। অর্থাৎ একজন এক এলাকায় সাধারনত একবারই ঠকাতে আসেন বারবার নয়। এটাও তাদের ঔদার্যের পরিচায়ক। আর সর্বোপরি হতে পারে আমরা প্রতারিত হতে ভালবাসি। যেমন প্রায় সময়ই আমরা জেনে-শুনে-বুঝেই তাকে ভোট দেই যিনি কথা দেন কথা না রাখার জন্যে। যিনি কিছু তো দেবেনই না। পারেন তো যা আছে তাও কেড়ে নেন। আবার এই তিনিই যখন নিজ কান মলে, দাতে জিহ্বা কেটে বলেন ভূল হয়ে গেছে আর হবে না। তখন যেমন আমরা তাকে সাক্ষাত ভগবান মেনে নেই তেমনি এইসব গুনী চিকিৎসকগনও কখনোই গনপিটুনির স্বীকার হন না। বরং মাঝে মাঝে তারাও ভগবানের কাতারে নাম লিখিয়ে ফেলেন। এমনই তাদের কথার যাদু!!

নির্বিকার আমাদের প্রশাসন, এত এত সমস্যার মাঝে এটা যে কোন সমস্যা তা হয়ত মাথায়ই আনতে চান না। আর তাই দেখে এই মহান চিকিৎসকগন বিভিন্ন নামের হোমিও হল এবং কবিরাজি দাওয়াখানা খুলে বসেছেন গলির মোড় থেকে শুরু করে অভিজাত শপিং কমপ্লেক্সে পর্যন্ত। যাদের ঢাকার গনপরিবহনে চলাচলের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা জানেন কুরুচিপূর্ণ হ্যান্ডবিল/লিফলেট কাকে বলে। আর এগুলো কতখানিই বা অস্বস্তিকর । আর সেই অস্বস্তি এখন আপনার ড্রয়িং রুমে। তবু কি টনক নড়ে আমাদের প্রশাসনের? নড়ে না। নড়বে কিভাবে। এমনি এমনি তো আর কোন কিছু জায়েজ হয় না। জায়েজ করে নিতে হয়। রাস্তায় আছে এলাকার বড় ভাই, আছেন পুলিশের ডিউটি অফিসার। স্থানীয় চ্যানেলে হয়ত আর একটু উপরের কেউ। ইদানিং নতুন কিছু টিভি চ্যানেলেও শুরু হয়েছে এই বিজ্ঞাপন। প্রতিকার কি? শেষই বা কোথায়?