বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২: প্রাপ্তি এবং শ্রমিকের বঞ্চনা

মোঃ গালিব মেহেদী খান
Published : 4 June 2012, 06:52 PM
Updated : 4 June 2012, 06:52 PM

নরওয়ের অসলোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশন। এ বছর লতিফুর রহমানকে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ব্যবসায় নৈতিকতার জন্য "বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড,২০১২"-এ ভূষিত করেছে। আমরা যারা প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত নই তাদের কাছে যে কোন আন্তর্জাতিক পুরস্কারই গর্বের। সেটা যিনিই অর্জন করুন না কেন? আর তা নোবেল থেকে শুরু করে সেরা বাঙ্গালী যাই হোক না কেন। সাধারন মানুষ কখনোই কারো অর্জনকে খাটো করে দেখে না। কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও অধিকাংশই তাতে বিব্রতবোধ করে। শুধু ব্যাবসায়ীরা কেন আমরাও তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি অন্তরের অন্তস্থল থেকে। এই সব অর্জন বেশিরভাগ সময়ই আমাদের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এ দেশের অর্থনীতির গতি সঞ্চালনে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। আর এই উদ্যোগের প্রান হচ্ছে এ দেশের অগনিত শ্রমিক। যারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিনির্মাণ করে চলেছেন দেশের অর্থনীতিকে।

সমস্যাটা হল তাদের দেখভালের কেউ নেই। এ দেশের শ্রমিকরা যে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন তার শুভাকাংখি সে নিজেই। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান (নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে চাকুরী থেকে অব্যহতি গ্রহন বা প্রদান পর্যন্ত) চলছে তাদের নিজস্ব নিয়মে। যা সাধারনত তৈ্রী করা হয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী প্রত্যক্ষ বা পরক্ষ তত্ত্বাবধানে। যাতে স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধার দিকটা অনেকাংশেই উপেক্ষিত থাকে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। যদিও এর বহিঃপ্রকাশ অতটা স্পষ্ট নয়। আর তার কারন হল বেসরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দাবী আদায়ের কোন প্লাটফর্ম নেই, তারা সংগঠিতও নয়। আমাদের দেশের ট্রেড ইউনিয়নের যে আচরন, যে অবস্থা তাতে মনে হয় না কেউ চাইবেন এর আরো বিস্তার ঘটুক। কিন্ত তাই বলে কি তারা এভাবেই নিগৃহীত হতে থাকবে? নাকি তারাও খুজে নেবে দাবী আদায়ের কোন ধ্বংসাত্নক প্লাটফর্ম? তারা এর কোনটাই চান না। তারা চান মালিকপক্ষ, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের শুধুমাত্র শ্রমিক হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখুক। টাকা বানানোর মেশিন নয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভাবুন। এটুকু তো তারা চাইতেই পারেন? আর এ চাওয়াটা পুরন করাও মালিকপক্ষের জন্য খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। যা পালটে দিতে পারে যে কোন প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ। এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর।দুঃখজনক হলেও সত্য এই বিষয়টা তা্দের অধিকাংশই মেনে নিতে চান না।(যদিও গার্মেন্টস শিল্প মানেই অনেক বেশি শ্রমিকের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ আর তাই সেখানে শ্রমিকদের পক্ষে একটি প্লাটফর্ম থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে সেটাও যেন হয় সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এটাই সংশ্লিষ্টদের কামনা।)

বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে একটা কথা বেশ প্রচলিত তা হল এখানে দুই ধরনের কর্মকর্তা বা কর্মচারী চাকুরিচ্যুত হয়। এক যারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে না। দুই যারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন ঠিকই, কিন্ত পুরাতন। পুরাতনদের চাকুরিচ্যুত হওয়ার প্রধান কারন হল বিভিন্ন সময় বেতন বৃ্দ্ধির ফলে এমন একটা বেতন কাঠামো দাঁড়ায় যা তার জন্য এই দুর্মূল্যের বাজারে অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। যদিও এই প্রবনতা সব জায়গাতেই এক রকম নয়। তবে অনেকাংশেই পরিলক্ষিত হয়। আর এটা বেশি দেখা যায় বিপনন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। যা একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

এ প্রসংগে তাদের নিগৃহীত হওয়ার আরও কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করছি।

*চাকুরীর নিশ্চয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হওয়া স্বত্ত্বেও তা দারুণভাবে উপেক্ষিত।

*বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ চাকুরী থেকে যখন অব্যহতি নেন তখন তাদের বাড়ী ফিরতে হয় রিক্ত হস্তে। চাকুরী পরবর্তী সময়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবসরপ্রাপ্তদের ভাতা প্রদান হয়ত অসম্ভব কিন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড এর ব্যবস্থা অন্তত সকল প্রতিষ্ঠানেই থাকা উচিৎ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই এ ব্যবস্থা রাখা হয়।

*এছাড়া সরকার যখনই সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী'র জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারনের ঘোষনা দেয় তাৎক্ষনিক তার প্রভাব পড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উপর। অথচ দেশের বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অসংখ্য কর্মকর্তা বা কর্মচারী'র জন্য তা হয়ে যায় আরো কষ্টকর। কেননা সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তখন বেতন বৃদ্ধি করেনা। আর সরকারও এই মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবেন না বলেই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উপর এমন কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করে না।

যে দেশের নীতিনির্ধারকগণ তার জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর না করে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেন তার জনশক্তির মূল্য কম বলে তাদের কাছে ঐ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের মত চিন্তা করারও আশা করিনা।

বরং দৃষ্টি আকর্ষন করছি লতিফুর রহমান সাহেবদের। যারা ইচ্ছে করলেই পারেন এই সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান দিতে। যা তাদের নিয়ে যাবে ভিন্ন উচ্চতায় করবে মহিমান্বিত। সেই সাথে এই পুরস্কার প্রাপ্তিও হবে স্বার্থক এবং সাফল্যমণ্ডিত।

kmgmehadi@yahoo.com