প্রযুক্তি: বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৩)

রিং
Published : 13 Jan 2012, 03:57 AM
Updated : 13 Jan 2012, 03:57 AM

তারিখ: ১২ই-জানুয়ারী-২০১২ইং

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে "উইন্ডোজ" অপারেটিং সিস্টেম কে আমি "খিড়কী" বা "জানালা" নামে ডাকতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। আমার এ লেখায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি লেখাটা পড়ে আহত হোন বা কষ্ট পেয়ে থাকেন তো সেইজন্যে আমি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। কিন্তু করার ও তো কিছু নেই। আমার লেখায় যদি আমিই শান্তি না পাই তো লিখবো কি করে‍‍? এই কাজটুকু করাই হতো না যদি না "প্রজন্ম ফোরাম" আর "উবুন্টু বাংলাদেশ" এর মেইলিং লিস্টে কিছু মানুষের ভুল ধারনা কে ভেঙ্গে দিতে কিছু কঠিন মন্তব্য না করতাম আর সেখানে আমাদের গৌতম দা আমাকে এই বিষয়ে বিশদভাবে লেখার জন্য উৎসাহ না দিতেন। গৌতম রয় কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ভেতরের আমি কে টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসবার জন্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি আমি পর্ব আকারে বিগত ২৯শে ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতিটি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করছি এবং করবো ইনশাল্লাহ। আজ প্রকাশিত হলো তৃতীয় পর্ব। অষ্টম পর্বে লেখার উপসংহার প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব আপনার আগ্রহ থাকলে পড়ে নিতে পারেন।

শারীরিক অসুস্থতার কারনে আমার আজকের লেখাটুকুর মান খারাপ হতে পারে। পাঠকগণ নিজগুনে ক্ষমা করলে আগামীতে আরো কিছু লেখার ভরসা পাবো।

আজকের লেখায় আমি, ৩। একচেটিয়া ব্যবসার লক্ষ্যে অনৈতিক আচরন (Monopoly Behavior) বিষয়ে আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছি।

দখল? বেদখল?? নাকি জবর দখল!!! পন্য ক্রয়-বিক্রয়ের বাজারে পৃথিবীর সব বিক্রেতাই চাইতে পারেন তাঁর পন্য ছড়িয়ে যাক, সবার নজর কাড়ুক আর সবাই সেই পন্যকে ভালোবেসে/পছন্দের সাথে/মানসম্পন্ন পন্য হিসেবে জেনে ব্যবহার করুক। এই ইচ্ছেটা অনৈতিক কোন কিছু নয়। কিন্তু যদি ইচ্ছেটা হয় এরকম যে, "আমার পন্য হবে বিশ্বের একমাত্র পন্য যা মানুষ বুঝে/না বুঝে, জেনে/না জেনে, গুনগত মান যাচাই না করেই ব্যবহার করবে এবং করতে বাধ্য হবে।" তাহলে এই চাওয়াটা কে আপনি কি বলবেন? নৈতিক, না অনৈতিক? আমার হিসেবে দ্বিতীয় ইচ্ছেটা সম্পূর্নই অনৈতিক এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

কেন বললাম এমনটা? !!! যদি এখনো বিষয়টা নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার না হয়ে থাকে তো জেনে নিন সৃষ্টির আদি থেকে একজন মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো কি কি? ১) খাদ্য, ২) পানি, ৩) পরিধেয় বা বস্ত্র, ৪) বাসস্থান, ৫) চিকিৎসা ও ৬) শিক্ষা। এই অধিকারগুলোর প্রতিটার সাথে জড়িয়ে রয়েছে একজন মানুষের অস্তিত্ব, সমগ্র মানবজাতির ভূত-ভবিষ্যৎ। আপনি হয়তোবা আমার কথার আগামাথা এখনো অবদি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নাই। একটু কষ্ট করে পড়তে থাকুন, বুঝে যাবেন। মানুষের এই অধিকার গুলো রহিত করে দেয়া সম্ভব যদি তাঁকে বিরত রাখা সম্ভব হয় এমন একটি জ্ঞান বা বোধ থেকে যে, "আসলে তাঁর প্রাপ্য কতটুকু?"

মাইক্রোসফট ঠিক এমনটাই অতীত সময়ে সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সাথে করেছে, এখনো করছে, আগামীতে আরো ভয়ংকররূপে আরো ভয়াবহ কিছু করতে চাইছে।

কিভাবে সম্ভব? সব পাবলিকরে কি বলদ পাইছে??? যত্তসব ফালতু . . . !!! আমি মোটামুটি নিশ্চিত আমার আজকের লেখার উপরের দুটো অনুচ্ছেদ পড়ে এই অবদি আসার সময়ে আপনার মনের প্রতিক্রিয়া এই অনুচ্ছেদের শুরুর বাক্যটার মতোই। তবে এখন যে প্রমাণগুলো আপনার সামনে পেশ করবো একটার পর একটা তাতে করে লেখাটা পড়ে শেষ করার পর যদি নিজেকে এর চাইতেও খারাপ পর্যায়ের কোন প্রানী কিংবা অনুজীব বলে মনে হয় আর প্রতিক্রিয়ায় হাতের কাছে যা পান তা ছুঁড়ে মারার অভ্যাস যদি থেকে থাকে তো সাবধান হোন। পারলে লেখার পরবর্তী অংশে একটা করে অনুচ্ছেদ পড়বেন আর তারপর পড়া বন্ধ করে উঠে গিয়ে পানি খেয়ে আসবেন। তারপর কিছুক্ষন নিজেকে শান্ত করে নেবেন এবং পরবর্তী অংশ পড়বেন।

ভাবুন দেখি? এই অংশে কতগুলো প্রশ্ন থাকছে কম্পিউটার জীবনের সর্বপ্রথমে গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে "উইন্ডোজ" বা "খিড়কী" ব্যবহারকারী আমজনতার জন্য। আসুন, দেখে নিই এই "আমজনতা" নিজেরা কতটুকু সচেতন?
১. আপনার ব্যবহৃত প্রথম ওয়েব ব্রাউজার কোনটি? এটা কি "খিড়কী"র সাথেই দেয়া ছিলো?
২. বর্তমানে আপনি কোন ব্রাউজার ব্যবহার করেন? কেন?
৩. বর্তমানের ব্যবহৃত ব্রাউজারটার বিষয়ে আপনি কিভাবে জানতে পেরেছেন?
৪. আপনার ব্যবহৃত প্রথম অফিস প্যাকেজ কোনটি? এটা কি বিনামূল্যের ছিলো?
৫. বর্তমানে আপনার ব্যবহৃত অফিস প্যাকেজ কোনটি? এটা কি আপনার নিজের ইচ্ছেয় আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করেছেন? নাকি কর্মক্ষেত্রের অন্য সবার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যই কাজটা করা?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমার লেখার অধিকাংশ পাঠকের ভাবনায় যেগুলো আসবে তা আমি নিচে উত্তরমালা হিসেবে দিয়ে দিলাম। মিলিয়ে নিন। 🙂
উত্তর ১. ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। হুমম! দেয়া ছিলো। ডেস্কটপেই তো শর্টকার্ট/লিংক দেয়া ছিলো।
উত্তর ২. অপেরা/ফায়ারফক্স। গতি এবং নিরাপত্তা। অনেক আনওয়ান্টেড পপ-আপ আর অ্যাড থেকে বেঁচে নিজের কাজটুকু শান্তিমতো করে নিতে পারি।
উত্তর ৩. আমার এক পরিচিত জানিয়েছিলেন। উনি নিজের ব্যবহার অভিজ্ঞতায় আমাকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন।
উত্তর ৪. মাইক্রোসফট অফিস ৯৭/২০০০/এক্সপি/২০০৭/২০১০। না এটা বিনামূল্যের ছিলো না। আমি ৪০/৫০/৬০ টাকায় ডিভিডিতে কম্পিউটার দোকান থেকে কিনেছিলাম/কম্পিউটারের দোকান থেকেই কম্পিউটারটা ক্রয় করার সময় দিয়ে দিয়েছিলো।
উত্তর ৫. মাইক্রোসফট অফিস ২০১০। ভূতে কিলায় নাকি??? যে শখ করে একটা প্যাকেজের শেখা কাজের হাতের দক্ষতাটুকু নষ্ট করে নতুন প্যাকেজে আপগ্রেড করবো? ঠেলায় পড়লে বাঘেও ঘাস খায়, আর আমি তো . . .

এবারে পড়া বন্ধ করুন এবং মনিটরের সামনে থেকে উঠে যান। আমি বুঝতে পারছি আপনার কপালে চিকন ঘাম দেখা দিয়েছে এবং আপনি মোটামুটি দুই চোখের ভুরু কপাল কুঁচকে এক করে ফেলেছেন। কোন একটা অজানা আশংকা আপনার মনে দানা বাঁধছে এবং আপনি লেখার এই পর্যায়ে এসে হুট করেই আমার এই সিরিজের ১ম পর্ব এবং ২য় পর্বের লিংক হাতড়াচ্ছেন। চিন্তার কোন কারন নাই লিংক এই লেখার একেবারে শেষে পেয়ে যাবেন। তবে আপাতত নিজেকে শান্ত করুন। (দশ মিনিটের বিরতি) . . .

আসুন এবারে একটু অন্যরকমের কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হই —
১. আপনি কি কখনো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কে সিস্টেম থেকে আনইন্সটল/রিমুভ করেছেন? করতে চেষ্টা করেছেন?
২. উদ্যোগে পূর্নাঙ্গরূপে সফল হয়েছেন?
৩. বর্তমান এমএসঅফিস ২০১০ এর পূর্বনির্ধারিত আদর্শমানে সৃষ্টি করা যে কোন কাজ/নথি পূর্বের অফিস এক্সপি/ অফিস ২০০০ এ নিয়ে পড়া কিংবা কোন কাজ করতে পেরেছেন?

উত্তরমালাঃ (আপনার ধারনার সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ন বকতালীয় :D)
উত্তর ১. হুমম!! চেষ্টা করেছিলাম। মোটামুটি সিস্টেমটা বেশ দ্রুতগতির হয় এতে।
উত্তর ২. আরে ধুর! তা হয় নাকি? পুরোপুরি মুছে যায় দেখায়। কিন্তু যদি কখনো Adress Bar এ কোন রকমের ওয়েব এড্রেস লেখা হয়ে যায় তো দুম করেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার চালু করার চেষ্টা করতে থাকে।
উত্তর ৩. দিলেন তো দিলে দাগা!!! এই ঝামেলার জন্যেই তো এই নতুন অফিস প্যাকেজের ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাইরের থেকে কতোজনে মেইলে ডকুমেন্ট পাঠায় নতুন এডিশনে আমি পুরোনোটা ব্যবহার করি বলে গালমন্দ শুনতে হয়। তাই কষ্ট করে হলেও এখন নতুনটাতেই থাকতে হচ্ছে।

এই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সহ আরো কিছু কুটমতলব আর ব্যবসায়িক ধান্দাবাজির কারনেই মাইক্রোসফটকে ১৯৯৮ সালে এন্টিট্রাস্ট বা অধিকার সংরক্ষন মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। তবে মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠান অর্থ আর পেশী শক্তির বলে এই মামলার রায়কে অনেকটাই অমান্য করে চলেছে আজো। এই মামলার কাজ চলার সময়েই মাইক্রোসফট দুটো ভিডিও উপস্থাপন করে আদালতে যাঁর একটার মধ্যে প্রমাণের চেষ্টা ছিলো এই যে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজার ব্যতীত এই বিখ্যাত "খিড়কী" সিস্টেম স্লো হয়ে পড়ে। আর অপরটিতে দেখানো হয়েছিলো যে কতো সহজে আমেরিকা অনলাইন বা এওএল ব্যবহারকারীরা নেটস্কেপ নেভিগেটর "খিড়কী" সিস্টেমে ইন্সটল করা যায়। মজার বিষয় হলো আদালতে উপস্থাপিত তথ্যচিত্রের দুটোই বানোয়াট প্রমাণিত হয় এবং মাইক্রোসফট আদলতকে ফাঁকি দেবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।

এটা অত্যন্ত সহজ বিষয় যে মাইক্রোসফটের একটা অপারেটিং সিস্টেম যেটার প্রতিটা সংস্করন বাজারজাত করনের আগে সে এমনভাবে বিপনন ও বিজ্ঞাপন ছড়ায় যে এটার চাইতে শক্তিশালী আর কোন অপারেটিং সিস্টেম ডেক্সটপের দুনিয়ায় হতেই পারেনা তা কিনা একটা ওয়েব ব্রাউজারের কারনেই সমস্যাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। আর নেটস্কেপ নেভিগেটর তো তৎকালীন সময়ে "খিড়কী" তে ইন্সটল করা ছিলো বিশাল একটা জটিল প্রক্রিয়া যা কিনা মাইক্রোসফট সেই তথ্যচিত্রে ছেঁটে বাদ দিয়ে তারপর উপস্থাপন করেছিলো। মজার বিষয় হলো আদালত এই দুইটা বিষয়ই আদালতের কম্পিউটারে নিরীক্ষা করে দেখতে এবং প্রমাণ করতে বলেন মাইক্রোসফটের দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে। এবং তাঁরাই কাজগুলো করতে ব্যর্থ হন ও স্বীকার করে নেন যে মাইক্রোসফট এ বিষয়ে প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে।

ফলাফলে আপনি এতদিন ধরে যে চটকদার বিজ্ঞাপনের মোহে মোহাবিষ্ট হয়ে/না জেনে-বুঝেই আবর্জনা আর ছাইপাশ গিলছিলেন, গিলেছেন, গিলছেন এবং গিলবেন তা তো নিশ্চয়ই পরিষ্কার বুঝে উঠতে পারছেন।

এছাড়া এই মামলায় মাইক্রোসফট সবচাইতে বড় যে ধাক্কাটা খায় তা ছিলো "গোপন ও অনৈতিক ব্যবসায়িক চুক্তিতে বাধা", যা মাইক্রোসফট ইন্টেল, এইচপি, ডেল এইরকম নামীদামী প্রতিষ্ঠানের সাথে করতো। কি থাকতো এইসব চুক্তিতে? এই চুক্তিগুলোর মূল উদ্দেশ্যই থাকতো হার্ডওয়্যার ভেন্ডরদেরকে বাধ্য করা যেনো তাঁরা মাইক্রোসফট বাদে আর অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার ড্রাইভারের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে। এছাড়াও উইন্ডোজের ওইএম এডিশন প্রিইন্সটলড অবস্থায় এই সব নির্মাতার পিসি/ল্যাপটপ/নেটবুক গুলোতে দিতে বাধ্য করা যাঁর মাধ্যমে মাইক্রোসফটের পরবর্তী প্রজন্মের ক্রেতা সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে সফটওয়্যার পাইরেসী আর অসচেতন ব্যবহারকারীর বদৌলতে অবশ্য এইসব চুক্তি না করেও প্রচুর পরিমানে স্বয়ংক্রিয় বিপনন আর বিজ্ঞাপন পেয়ে গিয়েছে, পাচ্ছে আর পাবে। আরো বিস্তারিত জানতে পড়ে নিতে পারেন — http://en.wikipedia.org/wiki/United_States_v._Microsoft

আসুন এবারে অফিস প্যাকেজের বিষয়টাতে। এখানে তো আপনি নিজেই ভুক্তভোগী। বুঝতেই পারছেন মাইক্রোসফট কিভাবে বাধ্য করতে পারে একজন ব্যবহারকারীকে নিজের পছন্দের সফটওয়্যার ব্যবহার ছেড়ে নতুন আসা পন্যের ব্যবহারে। একবার ভাবুন তো যদি এটা আপনি বাজারে ৬০টাকা ঐ ডিভিডিটাতে কিনতে না পেতেন কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠান লাইন্সেসিং করতে দেরী করতো তো আপনার কাজের কি দশা হতো? আর যদি এমন হতো যে আপনি আপনার নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স করবেন সফটওয়্যারগুলোর তো তাতে বছর পাঁচেকের মধ্যে কি ঘটবে? খেয়াল করে দেখেন মাইক্রোসফট একটা পন্য থেকে নতুন একটা পন্যে আপগ্রেড করতে দেয় ঠিকই তবে লাইসেন্সিংয়ে কিন্তু পুরোনো ব্যবহারকারী হিসেবে আপনাকে কোন ছাড় দেয় না। বরংচ নতুন পন্য হিসেবে দামটা কমই দিচ্ছেন এই হিসেব দেখিয়ে যে পয়সাটুকু কেটে নেয় তাতে আপনি নতুন আসার সফটওয়্যারের প্যাকেজটা আপগ্রেড না করে নতুন লাইসেন্স করেই নিতে পারতেন।

শুধু ব্রাউজার কিংবা অফিস প্যাকেজই নয়। মাইক্রোসফট এগুলো ছাড়াও আরো কিছু অপরাধ করে থাকে যাকে "মনোপলি" বলা চলে। যেমন —
১. নির্দিষ্ট কিছু হার্ডওয়্যার ব্যতীত তাঁর কোন সাপোর্ট পাবেন না বলে একপ্রকারে প্রযুক্তিপন্যের ক্রেতাকে বাধ্য করা হয় মাইক্রোসফট অনুমোদিত প্রস্তুতকারকের পন্যটাই কিনতে।
২. মাইক্রোসফটের প্রতিটা নতুন অপারেটিং সিস্টেম/অফিস প্যাকেজ রিলিজের সাথে সাথে হার্ডওয়্যার রিকয়ারমেন্টস এতটাই বদলে ফেলা হয় যে নতুন হার্ডওয়্যার কিনতে ব্যবহারকারী বাধ্য হন।
৩. নিজের পন্য/সফটওয়্যার ব্যতীত ব্যবহারকারীর পছন্দের সফটওয়্যার "জানালা" সিস্টেমে ধীরে ধীরে ধীরগতির করে দেয়া হয়/কখনো কখনো প্রোগ্রাম রান করার সময় হুট করেই ক্রাশ করে যায়। যেনো ব্যবহারকারীর মনে ঐ ব্যবহারকারীর মনে বিরূপ ধারনার জন্ম নেয়।
৪. নিজের অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটি আড়াল করে মাইক্রোসফটের "জানালা" সিস্টেম কখনো কখনো অন্য কোন সুখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতার পন্যকেও "ম্যালিশাস" হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ইন্সটল ও ব্যবহারে বাধা দেয়। কখনো কখনো ঐ সফটওয়্যার অতিপ্রয়োজনীয় হলে "জানালা" সিস্টেমের নিরাপত্তা/ফায়ারওয়াল ব্যবস্থাকে বন্ধ করে কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। এই ধরনের জটিল প্রক্রিয়ায় কাজ করতে অনেক সাধারন ব্যবহারকারীই অস্বস্তিবোধ করেন এবং যন্ত্রনা এড়াতে মাইক্রোসফট পন্যই ব্যবহার করতে উদ্যোগী হন।
৫. কোন সফটওয়্যার হুট করে কাজ বন্ধ করে দিলে কিংবা সিস্টেমের কোন কাজ আটকে গেলে তা ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রনের বাইরে রাখা হয় এবং এই বিষয়টা নিয়ে মাইক্রোসফটকে রিপোর্ট করা ছাড়া আর কোন উপায়ই রাখা হয়নি। ফলে অফিসিয়াল সাপোর্ট একমাত্র মাইক্রোসফট স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি ছাড়া পাওয়া সম্ভব না। একই সাথে এই অবস্থায় বিকল্প কোন সফটওয়্যারের ব্যবহারে কাজটুকু করে নেয়া সম্ভব হবে সেটার কোন নির্দেশনা/তথ্য অপারেটিং সিস্টেমের ভেতরের সহায়িকাগুলোয় পাওয়া অসম্ভব। মানে জ্ঞানের বিকাশে বাধা সৃষ্টির সর্বোত্তম প্রচেষ্টা।

সবচাইতে বিরক্তিকর বিষয়টা যা এ অবদি আমি নিজে মাইক্রোসফটের প্রতিটা লাইসেন্সিং নথি পরীক্ষা করে পেয়েছি সেই মতে —
মাইক্রোসফটের প্রতিটা সফটওয়্যারই গ্যারান্টি/ওয়ারেন্টি/তথ্যের ক্ষতিতে ক্ষতিপূরনে অস্বীকার করে। তাহলে ব্যবহারকারী কি সম্পূর্ন নিজ দ্বায়িত্বে এই পন্যের ব্যবহার করবে? যদি তাই হয় তো এত বিশাল মূল্যমানের বিদেশী অর্থের বিনিময়ে কেনা পন্যের ব্যবহারকারীর স্বার্থ বা ক্রেতাস্বার্থ সুরক্ষিত হলো কোথায়? এটা কি খাবার দিয়ে পানি না দেবার মতো কাজ না? এটা কি ছাদ ছাড়া দালানে থাকতে দেবার মতো ব্যবস্থা নয়? এটা কি ডাক্তার ছাড়া সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়ার মতো ফাজলামো না? এটা কি শিক্ষার নামে কুশিক্ষা নয়?

আশা করি এবারে নিজেকেই নিজে বলতে ও বোঝাতে পারবেন যে মাইক্রোসফটের এহেন কাজকর্ম কি ব্যবসা? নাকি জোর-জবরদস্তি করে লুট করা?

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ৪) প্রকাশিত হবে আগামী ১৯শে জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।

বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ১) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ২৯শে ডিসেম্বর ২০১১ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।
বাঁচতে হলে জানতে হবে, শিখতে হবে, বুঝতে হবে (পর্ব – ২) প্রকাশিত হয়েছিলো বিগত ৫ই জানুয়ারী ২০১২ইং, বৃহস্পতিবার রাত্রে।