প্রসঙ্গ ইনকিলাব, মুক্তমতের প্রকাশ ও তথ্যজালিয়াতি

শওগাত আলী সাগর
Published : 28 April 2011, 05:48 PM
Updated : 18 Jan 2014, 09:25 AM

২৮ নভেম্বর ২০১৩ তৃতীয়বারের মতো গ্রেফতার হন সাংবাদিক মাইলস হাউ। এর আগেও কানাডার নিউব্রান্স উইক পুলিশ তাকে দুইবার গ্রেফতার করেছিল। প্রতিবারই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তৃতীয়বার গ্রেফতার হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানায় 'দ্য কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস'(সিএজি)। ২ ডিসেম্বর সংগঠনটি একটি বিবৃতি পাঠায় কানাডার মিডিয়াগুলোতে।

তাতে 'গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রমাণযোগ্য কোনো অপরাধ থাকলে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার জন্য কানাডার পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়'। সিএজি তার বিবৃতিতে একই সঙ্গে 'প্রমাণযোগ্য কোনো অপরাধ না থাকলে তাকে হয়রানি না করার আহ্বান জানায়'। সিএজি পুলিশকে এও মনে করিয়ে দেয় যে, একমাসের মধ্যে একজন সাংবাদিককে দফায় দফায় গ্রেফতার করা, কোনো চার্জ গঠন না করেই ছেড়ে দেওয়া, আবার গ্রেফতার করা হয়রানিরই নামান্তর।

ঢাকার দৈনিক ইনকিলাব অফিসে র‌্যাব-পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তিনজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে। তার পরদিনই জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করে গ্রেফতার হওয়া ইনকিলাবের সাংবাদিকদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ। অবশ্য এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ইনকিলাবের সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করেছেন।

রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা ইনকিলাবের সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করলেও পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। 'সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলেও তার বিচার করা যাবে না'– অনেকটা এই ধরনেরই বার্তা পাওয়া যায় রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতাদের বক্তৃতা থেকে।

কানাডিয় সাংবাদিক মাইলস হাউ আর ইনকিলাবের তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের চরিত্রগত পার্থক্য যোজন যোজন। মাইলস গ্রেফতার হয়ছিলেন নিউব্রান্সউইকে স্থানীয় ইস্যুতে নাগরিকদের বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। আরসিএমপি প্রথম দফায় তাকে গ্রেফতার করে তার সেলফোন এবং ক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ধরনের অভিযোগ গঠন না করেই দ্বিতীয় দফায়ও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তৃতীয় দফায় গ্রেফতার হওযার পরই সাংবাদিকদের সংগঠনটি প্রতিক্রিয়া জানায়।

কানাডার সাংবাদিকদের সংগঠন সিএজি কিন্তু সরাসরি গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেনি। তারা বলেছে, গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সত্যি যদি কোনো অভিযোগ থাকে তবে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন কর, তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাও, কিন্তু চার্জ গঠন না করে দফায় দফায় গ্রেফতার করাটা হয়রানি, সেটি তোমরা করতে পার না। ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ওই সাংবাদিককে নির্দোষ দাবি করা গেলেও সিএজি সেটি করেনি। তারা বরং আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে; বলেছে, আইনি প্রক্রিয়ায় তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নাও, কিন্তু তাকে হয়রানি কর না।

বাংলাদেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মতো দ্য কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস (সিএজি) কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে না। পুরো কানাডার সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল একমাত্র সংগঠন এটি। সংগঠনটি মূলধারার সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নেই নিয়োজিত থাকে, কোনো ধরনের রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মাথা ঘামায় না।

ঢাকার ইনকিলাবের ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সমাবেশ এবং সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করেছে যে সংগঠনটি সেটিও অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য এবং পেশাদার সাংবাদিকদের নির্দলীয় ফোরাম হিসেবেই পরিচিত। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হওয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের চেয়েও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। যদিও সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তিগতভাবে বিপরীতমুখী দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থক।

জাতীয় প্রেসক্লাবও গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে। সেটিকে আমি বিবেচনায় নিতে চাই না। সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতদের 'বিনোদন ক্লাব'কে আসলেও তেমন গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তবে যেভাবে ইনকিলাব অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়াটির আমি বিপক্ষে। ছাপাখানা সিলগালা করে দেওয়ার ব্যাপারেও আমি আপত্তি জানাই। কোনো অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়াও আইনবিরোধী কাজ।

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে বিএনপি-জামাতপন্থী সাংবাদিক নেতারা ইনকিলাবের ঘটনাকে 'স্বাধীন সংবাদপত্রের ওপর হস্তক্ষেপ' বলে যে বাণী দিচ্ছেন তার সঙ্গে আমি পুরোপুরি ভিন্নমত। ইনকিলাবের ঘটনাটির সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পুরোপুরি একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তদন্ত এবং তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার ব্যাপার।

ইনকিলাব সরকারবিরোধী কোনো খবর প্রকাশ করে সরকারের রোষানলে পড়েনি। তারা একটি জালিয়াতি করেছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্যাড জাল করে তাতে রাষ্ট্রীয় লোগো বসিয়ে মিথ্যা দলিল বানিয়ে খবর হিসেবে প্রকাশ করাকে তো আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলা যায় না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করে অস্থিতিশীলতা তৈরিই যে এদের লক্ষ্য ছিল সেটি তো পরিষ্কার।

ইনকলিাব অবশ্য পরবর্তীতে সংবাদটি প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু তার মধ্যেও এক ধরনের ঔদ্ধত্য আছে। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে দায়সারা গোছের 'আমরা দুঃখিত' শিরোনামে পত্রিকাটি লিখেছে, "গত ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় 'সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর অপারেশনে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা' শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ায় আমরা দুঃখিত। এ ব্যাপারে সম্পাদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।"

লক্ষ্য করার ব্যাপার, ইনকিলাব কিন্তু ভুল স্বীকার করছে না, কিংবা রিপোর্টটি যে বানোয়াট ছিল তা বলছে না। বরং প্রকারান্তরে রিপোর্ট যে সত্য এমন একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা আছে দুঃখ প্রকাশের বার্তার মধ্যেও। তার মানেই হচ্ছে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ইনকিলাব সংবাদটি প্রকাশ করেছে।

ইনকিলাবে ছাপা হওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে খবরটি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। পশ্চিমের একটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ফ্রিডম পার্টির সাবেক এক ক্যাডারের নামের প্রথমাংশ দিয়ে বানানো একটি নিউজ পোর্টাল (ব্লগ) প্রথম খবরটি প্রকাশ করে এবং সামজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তার লিংক দেয়।

ফ্রিডম পার্টির এই ক্যাডারটি এর আগেও এই ধরনের জালিয়াতিপূর্ণ কাজ করেছে। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর স্বল্পতম সময়েই এই দলিলটি যে বানানো এবং জাল তা যুক্তিসহকারে বিশ্লেষণ করে পাল্টা পোস্টও আসে। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালও খবরটি প্রকাশ করে। মুদ্রিত পত্রিকা হিসেবে দৈনিক ইনকিলাব এই মিথ্যা খবরটি প্রকাশ করে দালিলিক প্রমাণ রাখার ব্যবস্থা করে দেয়।

যারা ইনকিলাবের ঘটনায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ খুঁজছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই– বিশেষ কোনো রাজনৈতিক ক্যাডারের ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশ পাওয়া একটি তথ্য, যা আবার অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তা যাচাই-বাছাই না করে, সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো মিডিয়া তা প্রকাশ করতে পারে কি না? ইনকিলাবের দুঃখপ্রকাশের ধরন থেকে অনুমান করা যায়, ঘটনাটিকে তারা এখনও 'সত্য' বলেই মনে করে। সে ক্ষেত্রে প্রকাশিত দলিলাদির এবং তথ্যের সঠিকতা প্রমাণের দায় তো তাদেরই। সরকারের উচিত হবে আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে তাদের এই তথ্যের সত্যতা প্রমাণে বাধ্য করা।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ নানা ধরনের দলিলাদি জাল করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচনের আগে ফেসবুকে 'বাংলাদেশ আর্মি' নামে একটি পেজ থেকে সেনাবাহিনীর নামে নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে জরিপ চালানো হয়েছে। সেনাপ্রধানের ছবি দিয়ে মতামত আহ্বান করা হয়েছে, জনগণ সেনা হস্তোক্ষপ চায় কিনা। ফেসবুকে সেনাবাহিনীর অরিজিনাল যে পেজটি আছে, তাকে হুবহু অনুকরণ করে ভুয়া এই পেজটি বানানো হয়েছে।

সাতক্ষীরার অভিযান নিয়ে জাল দলিল বানানোর যে চক্রটি অনলাইন কমিউনিটিতে গুজব ছড়াচ্ছে, সেনাবাহিনীর নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ করা তাদের কাজ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ইনকিলাব যে সেই চক্রের হয়েই কাজ করছে না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্যও আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর তাদের নিয়ে যাওয়া দরকার।

তবে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করা বা পত্রিকার প্রকাশনায় বিঘ্ন ঘটানোর পক্ষে আমি নই। ইনকিলাব যে অপরাধ করেছে, আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যদি এটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু অপরাধী গ্রেফতার করতে এসে প্রতিষ্ঠানে সিলগালা মেরে দেওয়াটা আইনসম্মত নয়, গ্রহণযোগ্য তো নয়ই। পত্রিকা অফিসে দলবেঁধে পুলিশ পাঠিয়ে তল্লাশি চালানোটাও সমর্থনযোগ্য নয়।

কানাডার অত্যন্ত প্রভাবশালী পত্রিকা 'অটোয়া সিটিজেন'-এর রিপোর্টার ও নেইল-এর ঘটনাটা বলি। সেটা ২০০৪ সালের কথা। দ্য রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) ভোরবেলা তল্লাশি চালায় তার বাড়িতে। সিরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কানাডিয় নাগরিক মেহের আরারকে নিয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রতিবেদন লিখেছেন ও নেইল। আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন মাহের আরার। আছেন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে। কেবলমাত্র সরকারের কাছে থাকা রাষ্ট্রীয় একটি গোপন দলিলের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি লিখেছেন ও নেইল।

পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশি করেই ক্ষান্ত হয়নি। সিটি হলে তার অফিসও তল্লাশি চালিয়ে নথিপত্র, কম্পিউটার, ডায়েরি, সেলফোন জব্দ করে নিয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় গোপন দলিলটি ওই রিপোর্টারের হাতে কীভাবে গেল তার সূত্র খুঁজতেই এই তল্লাশি চালানো হয়। অটোয়া সিটিজেন-এর মালিকপক্ষ রাষ্ট্রের চেয়েও কম ক্ষমতাধর নন। 'মিডিয়া চেইন' হিসেবে পরিচিতি প্রতিষ্ঠানটি পুলিশের এই তল্লাশি চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়। পরে আরও কয়েকটি পত্রিকা এবং টেলিভিশন ওই মামলায় পক্ষ হয়। নিম্ন আদালত গড়িয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেয়, তা বিশ্বের গণমাধ্যমের জন্য যুগান্তকারী একটি ঘটনা।

কানাডার মন্ট্রিয়লের 'ল্য জর্নাল দ্য মন্ট্রিয়ল'-এর রিপোর্টার এরিক ইভান লিমের ঘটনাটা বলে এই লেখার ইতি টানব। ২০১২ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। মন্ট্রিয়লের চারটি হাসপাতালে রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যসম্বলিত ফাইলপত্রের গোপনীয় রক্ষিত হয় না এমন একটি রিপোর্ট করতে গিয়ে টেবিলের ওপর পড়ে থাকা রোগীদের ফাইলের ছবি ছেপে দিয়েছিলেন তিনি। ছবিতে কয়েকজন রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য দৃশ্যমান ছিল। রিপোর্টেও তিনি রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করেন।

আর যায় কোথায়! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করে দেয় রিপোর্টারের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল থেকে বিনা অনুমতিতে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করাটা বিবেচিত হয় ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে। মন্ট্রিয়লের পুলিশ ভোর পৌনে সাতটায় স্ত্রী এবং সন্তানের পাশ থেকে তাকে উঠিয়ে এনে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে যায়।

এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করে আমি ইনকিলাবের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপের সাফাই গাইতে চাচ্ছি না। কিন্তু কানাডার মতো মানবাধিকারের দেশ, অবাধ বাকস্বাধীনতার দেশেও মিডিয়া যে প্রচলিত আইনের কাঠামোয় যে কোনো নাগরিকের মতোই আবদ্ধ, সেটি তুলে ধরতে চাইছি মাত্র। বাংলাদেশে কোনো মিডিয়া বা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয় না। তথ্যপ্রযুক্তি আইনটিও সংশোধনের মাধ্যমে আরও নমনীয় করার জন্য সুশীল সমাজের কোনো কোনো প্রতিনিধি দাবি তুলছেন।

কিন্তু পশ্চিমের যে দেশগুলো বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার নিয়ে নসিহত করে, তাদের দেশেও মিডিয়া কিন্তু আইনি খড়গের মধ্যেই থাকে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে যেখানে মিডিয়া জগতে সত্যিকারের পেশাদারিত্বের বিকাশ এখনও আশানুরুপ নয়।

আমরা মনে করি, ইনকিলাবের স্বাভাবিক প্রকাশনা অব্যহত রাখার সুযোগ দিয়েই বানোয়াট খবর প্রকাশ এবং সরকারি নথি জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অনলাইন জগতে জালিয়াতি এবং গুজব রটনাকারীদের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করারও এটি একটি যুৎসই সূত্র হতে পারে।

বিশ্বের সব দেশের মতোই বাংলাদেশেও মিডিয়ার একটি সীমানা আছে এবং সেই সীমানাটি আইন দ্বারা নির্ধারিত। মিডিয়ার স্বাধীনতার শ্লোগান দিয়ে জাল জালিয়াতির পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ নাই। মিডিয়ারও বিষয়গুলো অনুধাবনের সময় এসেছে।

শওগাত আলী সাগর: দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক বিজনেস এডিটর; টরন্টো থেকে প্রকাশিত নতুনদেশ ডটকমের প্রধান সম্পাদক।