বিদ্যুৎ এবং আমাদের গ্রাম

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
Published : 1 July 2012, 06:03 AM
Updated : 1 July 2012, 06:03 AM

গত বুধবার রাত আনুমানিক এগারটার দিকে আমাদের এলাকায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এটা নিত্যদিনের ঘটনাই মনে করেছিলাম। কিন্তু পরদিন সকালে জানতে পারলাম স্থানীয় ট্রান্সমিটার নষ্ট হয়ে গেছে শর্টসার্কিটের কারনে। আমাদের গ্রাম থেকে বিদ্যুৎ অফিস বেশি দূরে নয় । এলাকার ব্যাক্তিবর্গ বিষয়টি তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ অফিসে জানান। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা দ্রুত বিষয়টি দেখবে বলে এলাকাবাসীকে নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সেই আশ্বাস নিরাশায় পরিণত হয়।

গত বুধবার রাত থেকে আজ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই বিষয়টির সুরাহা এখনো হয়নি। পরিশেষে এলাকার লোকজন চাঁদা উঠিয়ে বেশ কিছু টাকা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ট্রান্সমিটার খুলে নিয়ে গেছে আজ তিনদিন হল এলাকায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি। এতে করে লাকসাম উপজেলার ৩নং কান্দিরপাড় ইউনিয়নের আমুদা, কান্দিরপাড় এবং পশ্চিম ফতেপুর এই তিন গ্রামের সাত থেকে আট হাজার লোক চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। একদিকে প্রচণ্ড ভ্যাপসা ঘরম অন্যদিকে তাদের ঘরে রক্ষিত ফ্রিজের সকল খাবার নষ্ট হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে কান্দিরপাড় এলাকার মুদি এবং চায়ের দোকানদার মুসলিম বলেন
"আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি, আমার দোকানের ফ্রিজে রাখা প্রায় দুই হাজার টাকার আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে, ব্যাংক এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আমি দোকান চালাই, এখন আমার কি হবে"
আসলে আমাদের সকলের এরকম প্রশ্নের জবাব দিবে কে? সরকার প্রতিটি বিদ্যুৎ বিলে সার্ভিস চার্জ এবং ভ্যাট প্রতিনিয়ত নিচ্ছে কিন্তু অফিসে বসে থাকা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের এই সকল হয়রানি বুঝে ও না বুঝার ভান করে ।কিছু উপরি কামাইয়ের জন্য (যাকে সোজা কথায় বলা চলে ঘুষ নেওয়ার জন্য) এসব কর্মকর্তার কাছে আজ শুধু আমার এলাকা নয় অনেক এলাকা জিম্মি হয়ে আছে।

আজ সকালে হিসেব করে দেখাগেছে এই তিন গ্রামে ২৫ টির মত চায়ের স্টল এবং মুদি দোকান আছে , সেই দোকানীরা সমাজের সাধারণ মানুষ। মানুষের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে তারা বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সেইসব দোকানে ফ্রিজ রেখেছেন । তাতে আইসক্রিম এবং অন্যান্য পানীয় ঠাণ্ডা বিক্রি করেন । গত কয়েকদিন একটানা বিদ্যুৎ না থাকায় এসব ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িরা ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন । কেউ কি তাদের কথা ভাববে। আর আট দশটা ঘটনার মত এটিকে ও একটি সাধারণ ঘটনা মনে হবে । কিন্তু দুর্নীতির কারনে এই সব সাধারণ মানুষ কতটুকু ভোগান্তির মাঝে পড়ছে কিংবা ভবিষ্যতে পড়বে তার খবর আমরা কয়জনে রাখি ।

কান্দিরপাড় গ্রামের দিনমজুর মনু মিয়া বলেন "গত সপ্তাহে একটা ব্রয়লার মুরগী এনে পাশের বাড়ির একজনের ফ্রিজে রেখেছিলাম , গতকাল গিয়ে দেখি সেই মুরগী পচে গেছে;এমন অবস্থা এর আগে আর দেখিনি"

মনু মিয়ার মত অনেকের ছোট ছোট অনেক ক্ষতি বিগত তিন চারদিনে হয়েছে এবং হবে। তাতে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের কি আসে যায়। একজন অসহায় মনু মিয়ার একটি মুরগী , একজন অসহায় মুদী দোকানী মুসলিমের ক্ষতি তার কাছে কোন আবেগের বিষয় নয়। তার কাছে বড় হচ্ছে টাকা। সরকারি অফিসী বসে সরকারী একটু কাজ করে জনগনের কল্যান করতে তারা আজ ভুলে গেছেন। তারা মনে করেন এই দেশে এরচেয়ে আরো অনেক বড় বড় অপকর্ম হচ্ছে তাতে কার সাজা হচ্ছে না , আমারই বা কি হবে ? সত্যিই তো তাদের কি হবে।
উল্লেখ্য আজ থেকে বছর দেড়েক পূর্বে ও নাকি এমনি করে এলাকার মানুষ থেকে চাঁদা আদায় করে ট্রান্সমিটার ঠিক করে দিয়েছিল সরকারী কর্মকর্তারা। হায়রে দেশ, ভাবতে আজ সত্যিই খারাপ লাগে।