শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
Published : 18 Oct 2011, 03:43 AM
Updated : 18 Oct 2011, 03:43 AM

আমার মরহুম দাদা মৌলভী মকবুল আহমেদ ছিলেন একজন ইমাম,সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং একই সময়ে পোষ্ট মাষ্টার । তিনি ছিলেন একেবারে সৎ ব্যাক্তি । তার এগার জন ছেলেমেয়ে সকলে বিয়ে পাশ করেছে । বড় ছেলে ডাক্তার অন্য এক ছেলে সিটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার সাত মেয়ের মধ্যে তিনজন চাকুরী করেন । তিনি আমাদের এলাকায় একজন সন্মানি আলেম এবং শিক্ষক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখন তার মেধাবী ছেলে মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়াননি। এমনকি আমাকে পর্যন্ত কখন প্রাইভেট পড়তে দেননি।

তার কথা ছিল নিয়মিত স্কুলে গেলে এবং বাড়িতে দু'বেলা সময় মত লেখাপড়া করলে ভালোছাত্র হওয়া যায়। এমনকি তার ধারনা মতে আমরা সকলে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল হয়েছি বলা চলে মেধাবি হিসাবেই।

এখন দেখছি প্রাইভেট টিউশন ছাড়া ছাত্ররা ভাল পাশ করছে না । আমরা যতই এই দোষ মাষ্টার দের উপর চাপাই না কেন । আসলে এর দায়ভার একান্ত আমাদের। মানে সঠিক গাইড লাইনের। আপনি যদি আপনার সন্তান কে সঠিক গাউড লাইন প্রদান করতেন তাহলে আজকে আপনার ছেলে কিংবা মেয়ে প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভরশীল হত না। আপনি আপনার দায়ভার আজ শিক্ষক দের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন।

হাইকোর্টে রুল জারি হয়েছে প্রাইভেট টিউশন কেন বন্ধ করা হবে না। সরকারি মাষ্টার'দের জন্য। সরকারি এমন কিছু মাষ্টার আছে যাদের আয়ে সংসার চালাতে তারা হিমসিম খায়। একসময় স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কম ছিল , সে সময় মাষ্টার মহাশয় তাদের কে বুঝাতে সক্ষম হতেন । বর্তমানে প্রতিটি ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় একঘণ্টার ক্লাসে সকল পাঠদান করা সম্ভব হয় না । প্রথমত হাজিরা ডাকতে ডাকতে পনের মিনিট শেষ । এরপর হোমওয়ার্ক দেখতে দেখতে আরো পনের মিনিট শেষ । বাকি ত্রিশ মিনিটে সেই বিষয়ের উপরে আর কতটুকু পাঠদান সম্ভব তা আমার জানা নাই।

হ্যাঁ প্রাইভেট টিউশন এবং কোচিং সেন্টার একবারে বন্ধ করে দিলে ছাত্র ছাত্রীদের উপর বিরাট একটা চাপ আসবে । সেই চাপ সামাল দেবার মত কি আপনি আপনার সন্তান কে গাইড দিতে পারবেন? আবার আমি এটি বলছি না কোচিং সেন্টারগুলো তাদের মনমতো ব্যাবসা করে যাক । তাদের জন্য কিছু নীতি মালা প্রনয়ন করা যেতে পারে । প্রাইভেট টিউশনের ক্ষেত্রে ও তাই ।

হুট করে একটা কিছু বন্ধ করে দিলে এর সমাধান হয়না । প্রথমে এই সমস্যার প্রধান কারন খুঁজে বের করতে হবে । তারপর ধীরে ধীরে এসব বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে । আমার জানামতে শুধু ঢাকা শহরে ছয় হাজারের ও বেশী বেকার শিক্ষিত এই পেশার সাথে জড়িত আছে । সবার আগে সবদিক বিবেচনা করে দেখা উচিত।