ইসরাইলের এক ‘শালিত’ সমান ’এক হাজার সাতাশ’ ফিলিস্তিনি

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
Published : 19 Oct 2011, 04:23 AM
Updated : 19 Oct 2011, 04:23 AM

আমার 'বস' হিসাবে একবছর আগে কাজ করতেন ফাদি ওধাহ নামক এক ফিলিস্তিনি । তিনি ছিলেন পেশায় একজন প্রফেসর। ফিলিস্তিনের একটি কলেজে তিনি অধ্যাপনা করতেন । ২০০৬ সালের জুন মাসে তাকে সন্দেহ করে ইসরাইলী "মোসাদ" বাহিনী আটক করে নিয়ে যায় ইসরাইলে। সেখানে তার উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয় দিনের পর দিন । তিনি নির্দোষ বিধায় বেঁচে গিয়েছিলেন সাময়িক ভাবে। দীর্ঘ তিন বছর ইসরাইলের মোসাদ তাকে আটকে রাখে । পরিশেষে তার পরিবারের আর্তনাদ আর কোর্টের বিচারে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ২০০৯ সালের শেষ দিকে সৌদি চলে আসেন। সৌদিরা ফিলিস্তানি নাগরিকদের উপর সদয়। তারা জানে তাদের জাতভাই কত কষ্ট আর নির্যাতন সহ্য করে বেঁচে আছে ফিলিস্তিনে।

২০০৬ সালে সুড়ঙ্গপথে ইসরায়েলে প্রবেশ করে শালিতকে অপহরণ করে হামাস-যোদ্ধারা। সেটাই ছিল হামাসের হাতে অপহৃত কোন ইসরাইলী । সেই সুত্র ধরে শালিত কে আটক রেখে হামাস তাদের অনেক বন্দীদের মুক্তির দাবী করলে সেই সময় বিষয়টি উড়িয়ে দেয় ইসরাইল ।

দীর্ঘ দিনের দেন দরবার এবং মিসরের মধ্যস্থতায় অবশেষে ইসরায়েল বন্দিবিনিময় চুক্তিতে রাজি হয় । মিসর এই ব্যাপারটিতে মুখ্য ভুমিকা পালন করে। দীর্ঘদিনের দেনদরবারের পর গত সপ্তাহে শালিতকে মুক্তির বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। বন্দিবিনিময়-প্রক্রিয়া বিলম্ব করতে ইসরায়েলের উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিল বিভিন্ন সময়ে হামলায় নিহত ইসরায়েলি নাগরিকদের পরিবারগুলো। তবে গত সোমবার আদালতে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।

চুক্তির আওতায় হামাস-যোদ্ধাদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার দেশে পৌঁছেছেন ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিত। অন্যদিকে ৪৭৭ ফিলিস্তিনি বন্দী গতকাল মুক্তি পেয়ে ইসরায়েল ছেড়েছেন। যুগান্তকারী ওই চুক্তি অনুযায়ী শালিতের বিনিময়ে মোট এক হাজার ২৭ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।

২৫ বছর বয়সী শালিতকে গতকাল সকালে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গাজা ও মিসরের রাফা সীমান্ত এলাকায় মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তান্তর করে হামাস।

এর মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের বন্দী জীবনের অবসান হলো শালিতের। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়োয়াভ মরদেচাই বলেন, শালিত স্বদেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

মিসরীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে শালিত আশা প্রকাশ করেন, এ বন্দিবিনিময় চুক্তি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। মধ্য প্রাচ্যের এই দুটি দেশে দীর্ঘ দিন যাবত সহিংসতা চলে আসছে। যদি সেই অবস্থা নিরসনের জন্য আরব বিশ্ব তেমন কোন ভুমিকা রাখতে পারছে না তাদের পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থের কারনে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে বরাবর সহযোগিতা করে আসছে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং গ্রেট ব্রিটেনের মত দেশ গুলো । ফিলিস্তিনি সাধারন জনগন সবসময় আতংকের মাঝে দিন কাটান। ছেলেদের বয়স আঠার হলেই বিপদ । কখন ধরে নিয়ে যায় মোসাদ বাহিনী।

তবে দীর্ঘ দিনের অচল অবস্থার মাঝে এই বন্দী বিনিময়ে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা হলে ও শান্ত হবে বলে সকলে মনে করেন । চুক্তি অনুযায়ী গতকাল ৪৭৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৫০ জন বন্দীকে আগামী মাসে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। গতকাল মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের প্রথম দলটি কেরেম শালম সীমান্ত হয়ে মিসরে প্রবেশ করে। তারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি কারাগারে বন্দী ছিল। এ ছাড়া বন্দীদের ছোট একটি দল কড়া নিরাপত্তায় ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলের একটি কারাগার ছাড়ে।

মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের স্বাগত জানাতে গাজার রাফা সীমান্ত এলাকায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। তাঁদের বিরোচিত সংবর্ধনা দেয় হামাস। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা বাসে চড়ে রাফা এলাকায় পৌঁছান। বাসের ভেতরে থেকেই তাঁরা বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন করেন।

বাস থেকেই একজন বলে ওঠেন, 'আমরা মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরতে পারছি, এ জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।' অন্য একজন বলেন, 'অন্যদের মতো ফিলিস্তিনের নাগরিকদেরও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের স্থায়ী স্বাধীনতার পথে এই বন্দিবিনিময় চুক্তি প্রথম পদক্ষেপ।'