লেখাটি জাগো ফাউন্ডেশন -কে উৎসর্গ করা

তুহিন৯১
Published : 6 Nov 2011, 06:08 AM
Updated : 6 Nov 2011, 06:08 AM

অনেক দিন আগে একটা কৌতুক পড়েছিলাম। স্মরণশক্তি খুব বেশি ভালো না হয়ায় পুরোপুরি হয়তো লিখতে পারব না কিন্তু যতটুকু মনে আছে লিখলাম।

নরকের এক গর্তে তিন বাঙ্গালী ছিল। ওই গর্তের উপরে কোন প্রহরী নেই। তো একদিন ঈশ্বর পরিদর্শনে আসলেন। এসে দেখলেন যে এই গর্তের কোন প্রহরী নেই। তিনি তো অবাক। তিনি পাশের গর্তের প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলেন যে এই গর্তের কোন প্রহরী নেই কারন কি? এই কথা শুনে ওই প্রহরী মিট মিটিয়ে হাসা শুরু করল। ঈশ্বর তা দেখে খুব রাগ করলেন এবং প্রহরীকে প্রচণ্ড এক ধমক দিলেন। ধমক খেয়ে প্রহরী বলা শুরু করলো। এই গর্তে যে তিন জন আছে তারা যখন পৃথিবীতে ছিল বাংলাদেশ নামক একটি দেশে ছিল। আর ওদের তিন জনের স্বভাব একটু অন্যরকম। আর যা কিনা পৃথিবীর অন্য অংশের লোকেদের সাথে মিলে না। ঈশ্বর প্রহরীর হেয়ালিপনায় এবার চরম বিরক্ত হলেন। তা বুঝতে পেরে প্রহরী ভয়ে ভয়ে বলল ওরা কেউ একজন যখন ওই গর্ত থেকে বের হতে চায়, বের হতে পারে না কারণ বাকি দুজন তখন ওকে নিচ থেকে টেনে ধরে। এই কারনেই ওদের কোন প্রহরী লাগে না। ওরা নিজেরাই নিজেদের পাহারা দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

উপরের ঘটনাটি কৌতুক হলে ও তা কিন্তু আমাদের বাংলাদেশীদের ব্যাপারে পুরোপুরি সত্য। নিজে ভালো কিছু করব না, অন্যদের ভালো কিছু করাকে উৎসাহ তো দিবই না তা সম্পর্কে আরো অপপ্রচার চালাবো।

আমরা যারা সুশিক্ষিত হয়ার জন্য পড়াশুনা করি তারা হয়তো জানি যে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন, কর্ম জীবন বলে কিছু ব্যাপার আছে। এ গুলো একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু তার পরে ও প্রতিটির রয়েছে আলাদা আলাদা স্বত্বা। মানুষের ব্যক্তি জীবনের সাথে তার সব কিছুকে মেশালে চলবে না। যেমন- আমরা যারা জগত বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোকে জানি তারা হয়তো জেনে থাকবো যে তিনি তার জীবনের একটা বিশাল অংশ পতিতালয়ে কাটিয়েছেন। এই কারনে তো আমরা তার সৃষ্টিকে অবহেলা করতে পারব না। মানুষের ব্যক্তি জীবনের সাথে তার কর্ম জীবনকে মিলিয়ে তো লাভ নেই। এরকম শত উদাহরণ আমি দিতে পারব যাদের ব্যক্তি জীবন আর কর্ম জীবনে বিস্তর ফারাক।

কয়েক দিন আগে একটি ঘটনা জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তা হল সোনাবরু নামের এক ছোট মেয়ের ভাত না পেয়ে আত্মহত্যার কাহিনী। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর (বিশেষ একটি শ্রেণী বাদে) লোকজন ওই ঘটনায় তীব্র শোক প্রকাশ করে। এবং ওই ছোট মেয়েটির জন্য ব্যথিত হয়। সেই সাথে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হয় (যদিও কয়েকদিন আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, অতি দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ইতিবাচক সূচকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পত্র-পত্রিকাগুলো এখন মঙ্গা শব্দটি লিখতে পারছে না। যাই হোক রাজনৈতিক আলোচনার দিকে যাচ্ছি না। আমার আজকের লেখার বিষয় এটি না।) । দেশের ভালমন্দ দেখার ভার অবশ্যই সরকারের কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ নিয়ে কেউ বা কারা যদি দেশের মঙ্গলের জন্য কিছু করে তা কি প্রশংসনীয় নয়?

সম্ভবত দেশে থাকাকালীন সময়ে একটা বাংলা চলচ্চিত্রের নাম শুনেছিলাম। নামটা এমন, মা বড় না বউ বড় বা এই টাইপের কিছু। না আমি বাংলা চলচ্চিত্রের সমালোচনার দিকে যাচ্ছি না। অতটা আধুনিক এখনো হতে পারি নি যে আমার দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সমালোচনা করব (বিভিন্ন জায়গায় দেখি বলিউডের খান দের টেনে আমাদের শাকিব খানকে নিয়ে উপহাস করা হয়। তাদের উদ্দেশে বলি, হয় শাকিব খানের জায়গায় গিয়ে ভালো কিছু করে দেখাও নয়তো গঠন মূলক সমালোচনা কর)। আমার কথা হচ্ছে ওই ফিল্মটার নাম টা নিয়ে। মা আর বউ কি এক জিনিস হল না তাদের মধ্যে তুলনা সম্ভব। তেমনি কয়েক দিন আগে দেখলাম একজন ব্লগ লেখক ডঃ জাফর ইকবাল স্যার কে নিয়ে ধর্মের সাথে তুলনা করিয়েছেন। আবার পাঠকদের উদ্দেশে যে কোন একটিকে বেছে নেয়ার কথা বলেছেন। ব্লগ লেখকের ওই লেখাটি পরে আমার ফিল্মটির কথা মনে পরে গিয়েছিল। তবে হে জাফর ইকবাল স্যার দোষী। অবশ্যই দোষী। কারণ যে তিনি আমাদের মতো তরুনদের স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন দেখতে শেখান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলেন। জাফর ইকবাল স্যার আপনি বিচলিত হবেন না। আপনার সমালোচনা আপনার সমকক্ষ কেউ করে না। আমরা তরুন সমাজ জানি কারা আপনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। কতো প্রজন্মকে ওরা অন্ধ করে রাখবে? একাত্তরে যেহেতু পারে নি আর পারবেও না।

এবার আসা যাক মূল এবং শেষ কথায়। আমার এই পুরো লেখাটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা। লেখাটি JAAGO Foundation কে উৎসর্গ করা। বন্ধুরা আমরা কি ভুলে গেছি শেখ শাদীর গল্প। পোশাকে কি আসে যায়। কর্মই তো আসল। আমরা সবাই তো কম বেশি এই প্রবাদটির সাথে পরিচিত আঙ্গুর ফল টক। যারা আমরা চাইছিনা দেশের দশের জন্য কিছু করতে তাদের বিশ্বাস হয়তো এমন যে আঙ্গুর ফল টক। তাই এসব অপপ্রচার। আমরা সবাই তো নবম দশম শ্রেণীতে পড়েছি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা দুরন্ত পথিক। বাধা তো আসবেই। হাল ছেড়ো না বন্ধুরা। দোষ ত্রুটি নিয়েই মানুষ। যদি বা নিজের মধ্যে দোষ ত্রুটি কিছু থেকে থাকে সংশোধন করে নাও। মনে রেখো একটি কথা, পাছে লোকে কিছু বলে। তোমাদের উদ্যোগ মহৎ আর মহৎ কাজে বাধা আসবেই। বন্ধুরা জাগো, আর অন্যদের জাগাও। অবশ্যই বৃথা যাবে না আমাদের পঠিত কবিতা পাঞ্জেরী।