কে সংখ্যালঘু?

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 15 August 2015, 12:39 PM
Updated : 15 August 2015, 12:39 PM

পাকিস্তানে হিন্দু আছে? নেই বললেই চলে। খ্রিস্টান আছে? তাও নেই বললেই চলে। তাহলে সেখানে কি সংখ্যালঘু নেই? অবশ্যই আছে। প্রতি মাসেই ওখানে দুএকটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। কারা মরে তাতে? কে কাদের মারে?

ইরাকে? শিয়া এবং সুন্নি একে অপরকে মারছে, মারছে না? বাংলাদেশে ওসব ঝামেলা নেই, তাই না? সত্যিই এখন ওসব ঝামেলা নেই, কারণ, সংখ্যালঘুর একটা দৃশ্যমান মডেল সামনে আছে। ধরুণ, আগামী বিশ-ত্রিশ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু প্রায় আর থাকল না, তখন তো সাম্প্রদায়িকতা থাকার কথা না, নাকি?

আচ্ছা, একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক- ধরুণ, আমরা দুই ভাই, দুই ভাইয়ের দুই বউ, সম্পর্ক ভালো না, একেবারে সাপে নেউলে। এটা ঘরের ব্যাপার, বাহিরের শত্রু থাকায় এখনো সমস্যাটা চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। প্রতিবেশী কারো সাথে বোঝাপড়ার বিষয় আসলে তখন আমরা দুই ভাই এক, দুই বউও এক। কারণ, সেখানে উভয়ের স্বার্থ রয়েছে বলে মনে করছি আমরা। ঘরে এসে আবার কামড়াকামড়ি। প্রতিবেশীর সাথে সমস্যাটা চলমান থাকায় ঘরের বিষয়ে আমাদের এখনো পুরোপুরি যুদ্ধংদেহী হওয়া থেকে বিরত রাখছে, কারণ, দুই ভাই-ই আমরা ভাবছি প্রতিবেশী তাড়ানো মধ্যে আমাদের উভয়ের বড় স্বার্থ আছে।

প্রতিবেশী এক সময় চলে গেল। এবার ভেতরের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ভাই অপর ভাইয়ের উপর নানান মতবাদ চাপিয়ে দিতে শুরু করল, এক সময় অর্থ সম্পদ দখল করে নিতে শুরু করল। বিষয়টা এরকম। অর্থাৎ ষড়যন্ত্রের তত্ত্বটা হচ্ছে- সে সবসময় প্রতিপক্ষ খোঁজে। খুন করা যার নেশা খুন সে করবেই, এক অজুহাতে আজকে একজনকে, অন্য অজুহাতে কালকে আরেকজনকে। তাই হিন্দু শূন্য হওয়ার একটা বড় বিপদ বাংলাদেশে আছে। তিনপাশে ভারত, একপাশে মিয়ানমার এবং বঙ্গোপসাগর নিয়ে বাংলাদেশ নামক যে ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছিল সেখানে হিন্দু জনসংখ্যাটুকু এক ধরনের বাফার হিসেবে কাজ করেছে, এখনো কাজ করছে, বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হলে এদেশে অস্থিরতা এবং অশান্তি বাড়বে বৈ কমার কোন সম্ভাবনা নেই। ইন্ডিয়া এখনও যতটুক যা ভালোটালো বাসে তখন তো মোটেও বাসবে না। শুধু সম্প্রিতি টম্প্রিতির কথা বলে কাজ হবে না, যৌক্তিক আলোচনায় আসতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্প্রিতি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে যথেষ্ট এদেশে আছে, কিন্তু জাতিগত দিক বিবেচনা করলে এই দুটি সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি খুবই বৈরি এখনো।

মুসলামানরা মনে করছে ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের সাথে মিলে হিন্দুরা এ অঞ্চল থেকে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, হিন্দুরা মনে করছে আরব থেকে ১২০৪ সালে (এর আগেে এসে ধর্ম প্রচার করেছে বলে শোনা যায়) মুসলমানরা এসে অস্ত্রের মুখে হিন্দু রাজাদের সিংহাসনচ্যূত করেছে। ঐতিহাসিক এ সমস্যার সাথে যোগ হয়ে আছে ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ নামক আরো দুটি বিষ ফোঁড়া। ভয়াবহ সমস্যা রয়েছে ভেতরে ভেতরে, উপরে সম্প্রিতির একটা প্রলেপ রেখে খানিকটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আসলে এই চেষ্টাটা করে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করারও নেই। কারণ, এ অঞ্চলের মানুষ মানবিক ভাবাদর্শে উদ্ভুদ্ধ নয়, ধর্মান্ধ এবং ইহকাল-পরকাল লোভি এখানকার বেশিরভাগ মানুষ, তাই খুব বেশি আশাবাদের জায়গা নেই, একধরনের ভারসাম্য তৈরি করে রাখাটাই এ অঞ্চলের একমাত্র সমাধান।