হিজাবের প্রশ্ন এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 23 March 2016, 07:36 PM
Updated : 23 March 2016, 07:36 PM

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এটা স্রেফ বর্বরতা এবং এদেশে তা বিরল কিছু নয়। এই বছরই, জানুয়ারির ১৬ তারিখে মাদারীপুরের রাজৈরে একইভাবে এক যুবতীকে হত্যা করা হয়। এই বছরেরই ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ পিরোজপুরের মঠাবড়িয়ায় শিরিণ আক্তার (১৮) নামে একইভাবে এক তরুণীকে হত্যা করা হয়। চলতি মাসের ৬ তারিখে গুলশান ফুটপাতে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে রেখে যাওয়া এক তরুণীর লাশ পাওয়া যায়।

বান্দরবানের নাইখং ছড়িতে উপ্রু মারমা (২০) নামে এক আদিবাসী তরুণীকে একইভাবে হত্যা করা হয় এবং এটিও এ বছর। উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলায় এ ধরনের ঘটনা সবচে' বেশি ঘটে। সবক্ষেত্রেই অভিযোগ থাকে ইনট্রুডার বাঙ্গালীদের প্রতি।

একরম ঘটনা বিগত তিন মাসে শুধু মিডিয়াতেই এসেছে অন্তত দশটা! তাহলে ধরাণা করা যায় প্রতিমাসেই এরকম একাধিক ঘটনা ঘটছে।

সবক্ষেত্রেই তীব্র প্রতিবাদ কাম্য এবং এটা আশাব্যঞ্জক যে সোহাগীর ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হচ্ছে। হতাশার বিষয় হচ্ছে অপরাধীরা এখনো ধরা পড়ে নাই। তার চেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে- আমাদে মন্তব্য এবং মিডিয়া কর্মীদের অত্যন্ত কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে সংবাদ পরিবেশন। যেমন-

১। সোহাগীর পরিচয় এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে নাট্যকর্মী ছিল কিনা, সে প্রশ্ন এখানে অপ্রয়োজনীয়।

২। হিজাবের প্রসঙ্গ টেনে আনা এখানে আরো বড় কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। কোন মেয়ে যখন বর্বরতার শিকার হয় তখন সে বস্ত্রহীন ছিল নাকি বোরকা পরা ছিল সে প্রশ্ন তোলার অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে। সোস্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে যারা কথা বলছে তাদের আরো দায়িত্বের পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

বুঝলাম- আমজনতা অত দায়িত্বশীল হবে না। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন যে কোলাজটি প্রচার করছে সে সম্পর্কে অবশ্যই কিছু বলার আছে। এই সমাজে এ ধরনের বর্বরতা পরিকল্পিতভাবে ঘটানোর মত 'প্রাইড অব হায়েনা' এদেশে আছে। এক্ষেত্রে হিজাবের প্রসঙ্গ টানা মানে কিন্তু হিজাব অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে না, বরং যারা হিজাব করছ না তাদেরকে সংঘবদ্ধ বর্বর দলের কাছে টার্গেটে পরিণত করে দেওয়া হচ্ছে। এক জনের বিপরীতে তারা অহিজাবী পাঁচজনের একই পরিণতি ডেকে এনে আপনাদের ভুল প্রমাণ করতে চাইতে পারে।

সুযোগ পাইলেই র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুরকে খ্যাপাতে নেই, চেষ্টা করতে হয় কুকুরটাকে আটকানোর, তা না করে আমরা শুধু খেপিয়েই যাচ্ছি। পরিকল্পিতভাবে প্রতিরক্ষা বুহ্য তৈরি করতে পারছি না। না মানুষের জন্য, না আলাদাভাবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নারীর জন্য।