শিশু হত্যাগুলো দুর্বলের উপর অত্যাচারেরই চিরাচরিত দৃষ্টান্ত

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 17 April 2016, 05:05 AM
Updated : 17 April 2016, 05:05 AM
ডান্ডি দিয়ে পিটিয়ে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সিলেটের শিশু রাজন হত্যার কথা এখনো নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। রাজনের পিতা ছিল তরকারি বিক্রেতা, সেও তরকারি বিক্রি করত।
ডাকাত সাজিয়ে গণপিটুনি দিয়ে কিশোর মিলন হত্যার কথা মনে আছে? পুলিশের ভ্যান থেকে তাকে টেনে নামিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। অনেক আগের ২০১১ সালের ২৭ জুলাইয়ের ঘটনা এটি। জানি না বিচার হয়েছে কিনা। অভিযুক্ত খোঁজার প্রয়োজন ছিল না। কারণ, ঐ ঘটনার ভিডিও এখনো ইউটিউবে খুঁজলে পাওয়া যাবে। না, মিলন ব্লগার ছিল না, ধর্মাবমাননা করে মিলন কিছু লেখেনি। সে ছিল ছেড়া-ময়লা পোশাকে দুর্বলতম পরিবারের কোনমতে বেঁচে থাকা একটি কিশোর ছেলে।
খুলনার শিশু রাকীব কাজ করত গাড়ির গ্যারেজে, মলদ্বার দিয়ে কম্প্রেসারের বাতাস ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। জানি না, রাকীবের কোনো বিতর্কিত লেখাটেখা পেয়ে বিচারকাজ স্থগিত রাখা হয়েছে কিনা।
সিলেটের রাজন হত্যার পরপর বরগুনায় মাছ চুরির অভিযোগে ১১ বছর বয়সী রবিউল নামে এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
এরকম ঘটনা প্রতি বছর শতশত ঘটছে। সর্বশেষ বরিশালের বানারিপাড়ায় রিক্সাওয়ালা ভাড়াটিয়ার তিন বছরের শিশুর কান্নায় 'অতিষ্ঠ' হয় বাড়িলি আছাড় দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করেছে। খবরটি বিস্তারিত পড়ে জেনেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার মত টাকা না থাকায় শিশুটি ঠিকমত এবং সময়মত চিকিৎসাও পায়নি। অর্থাৎ, কেউ এগিয়ে আসেনি।
প্রত্যেকটি ঘটনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে- শক্তিহীন এবং কোনোমতে বেঁচে থাকা পরিবারের সন্তান এরা। অর্থাৎ, লুকিয়া থাকা বর্বরতা বেছে নিচ্ছে দুর্বলদের, দলহীনদের; সে গরীবের শিশু সন্তান হোক, আর একা মানুষ কোনো ব্লগারই হোক।
এখান চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে- রিক্সাওয়ালার ছেলে কাঁদলে সেটি সহ্য করতে হবে কেন? এটাই হচ্ছে ঐ বাড়িওয়ালির এটিচুড। অর্থাৎ, ভেতরের লুকিয়ে থাকা বর্বরতা প্রকাশের একটি সহজ সুযোগ পেয়েছিল সে। মেরে ফেলতে তো আর চাইছিল না। 'ধরে আছাড় মারা' সেই প্রবাদটিকে রিক্সাওয়ালার তিন বছরের সন্তানের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
* ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।