‘স্কুল অফ ড্রিম’ এর স্বপ্নযাত্রা এবং আমরা

দিব্যেন্দু দ্বীপ
Published : 13 April 2017, 04:01 AM
Updated : 13 April 2017, 04:01 AM

"এসো স্বপ্ন বুনি, এসো ছাড়িয়ে যাই নিজবৃত্ত" স্লোগান সামনে রেখে 'স্কুল অফ ড্রিম' স্কুলে স্কুলে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ড্রিম স্কুলের মূল্য প্রতিপাদ্য হিসেবে উদ্যোক্তারা বলছেন- জীবনব্যাপী গাইডেন্স এবং কাউন্সিলিং প্রদানের একটি প্রচেষ্টা।

গত ১০ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে স্কুল অব ড্রিম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত খুপী বাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রথমে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অ্যাসেমব্লি অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসেমিব্লিতে শপথপাঠ, জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং জাতীয় সংগীত অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর ড্রিম স্কুলের সদস্যরা চারটি দলে ভাগে হয়ে ক্লাসে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্তরিক শিক্ষামূলক আলোচনা করেন। আলোচনার বিষবস্তু উন্মুক্ত থাকলেও প্রধানত উদ্দীপনামূলক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা এবং জানার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তাদেরকে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, অবসরযাপন, বই পড়া এবং জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগের কথা বলা হয়। কিছু বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হয়, বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাথীদের পড়াশুনায় দুর্বলতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

ড্রিম স্কুলের অংশগ্রহণকারী সদস্যরা জানান, দেখা গেছে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাথীরাও গণিতের সাধারণ সূত্র পারছে না, তারা সহজ গুণ করতে পারছে না, মৌলিক সংখ্যা ঠিকমত চিনছে না। ইংরেজিতে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে আরো বেশি। তারা feel শব্দটির অর্থ বলতে পারেনি, এমনকি শব্দটি বুঝতেই পারেনি বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।  তবে ক্লাসে তারা আগ্রহ নিয়ে অতিথিদের কথা শুনেছে এবং তাদের ইচ্ছা এবং সীমাবদ্ধতার কথা নির্ভয়ে বলার সুযোগ পেয়েছে।

ক্লাস শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল, ড্রিম স্কুলের সদস্যদের সাথে স্কুলের শিক্ষার্থীদের একটি সংসদীয় বিতর্ক বিতর্ক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় মূলত শিক্ষার্থীদের 'বিতর্ক' সম্পর্কে ধারণা দিতে বিতর্কের বিষয় ছিল, "এই সংসদ মনে করে ফেসবুক একটি সামাজিক ব্যধি" সরকারি দল তথা ড্রিম স্কুলের সদস্যারা প্রতিযোগিতায় পরাজয় মেনে নেন এবং প্রস্তাবটি প্রত্যাখাত হয় অর্থাৎ, ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার এবং ইতিবাচক দিকটিই উঠে আসে

এর আগে লেখক সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল লেখা পর্যালোচনা করেন, এবং বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। আগেই ড্রিম স্কুলের পক্ষ থেকে লেখার কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল

এটি আসলে প্রচলিত ধারার কোনো স্কুল নয় স্কুলের পাঠ্যক্রমে বা কার্যক্রমে কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করাও ড্রিম স্কুলের উদ্দেশ্য নয় কার্যক্রমটির মূল উদ্যোক্তা, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের একজন সহকারি কমিশনার হিসেবে কর্মরত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, ফিনল্যান্ড হতে পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত জনাব ইমদাদুল হক তালুকদার প্লাবন জানালেন, "কার্যক্রমটি পরিচালিত হবে শিক্ষার্থীদের চিন্তার সীমানাটা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য, তারা যেন স্বপ্নের বীজ বুনতে পারে, সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে তারা যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি স্কুলে স্কুলে কার্যক্রমটি পরিচালিত হলে পরোক্ষভাবে শিক্ষকগণও একটি নির্দেশনা পাবেন। স্কুলের সমস্যাগুলো জানা হবে, শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার জায়গাটি স্পষ্ট হবে। সর্বোপরি আমাদের দেশের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার একটি পরিষ্কার চিত্র উঠে আসবে, যার মাধ্যমে পর্যালোচনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।"

তিনি আরো বলেন, "দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করে স্কুলের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হচ্ছে না। তারা প্রশাসন, ব্যাংক সহ অন্যান্য অনেক চাকরিতে যাচ্ছে। আমরা ড্রিম স্কুলের পক্ষ থেকে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে যুক্ত করে নিয়ে স্কুলে স্কুলে যাচ্ছি, আমরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছি। আসলে আমাদের কার্যক্রমটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে এখনো, তাই ভবিষ্যতে আরো পর্যালোচনা করে নীতি নির্ধারণ করা হবে।"