গ্লোবাল ভিলেজে বাস
টালত মোর নাহি পড়বেসী।
হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী॥
-বৌদ্ধগান ও দোহা: ৩৩
গ্লোবাল ভিলেজে বাস করে এক বিষণ্ন বলদ
এ নিয়ে স্বাধীন পঞ্চাশ বছর পরাধীনতার
গুজবে দিচ্ছে না কান, দেখছে না জগদপিতার
শব কাঁধে মর্তের মানুষ ধরছে স্বর্গের গলদ।
বসে আছে ফিলাডেলফিয়া কবিতার সম্মেলনে
দুই পা সামনে নিবিড় রিপোর্ট ভনে বিজ্ঞানের
জয় মা বল বিবরবাসী পত্রিকায় লেখে ফের
(ইংরি)জিলিপি সম্পাদকীয় সত্যমিথ্যা প্রয়োজনে।
কোন ভয় নেই, আম্মা, আমাদের কবিতার বদ-
নাম করে যারা মিটিঙ্গে বাহবা নেয় মিছিলের
তালি পায় গায়েবী জানাজা আমি পড়াবো তাদের
আমার বিবরবাসী ভূগোলের গ্রামের সনদ।
তুমি আল্লাহ রাহমান শেষ নাই তোমার দয়ার
যাকে ইচ্ছা কবি কর যাকে খুশি গোকুলের ষাঁড়॥
মুক্তিযুদ্ধে যায়নি বলদ
বেঙ্গসঁ সাপ চঢ়িল জাই।
দুহিল দুধু কি বেণ্টে সামাই॥
-বৌদ্ধগান ও দোহা: ৩৩
মুক্তিযুদ্ধে যায়নি বলদ। সে বছর ছিল তাঁর
পবিত্র বিবাহ, বিদ্যাসাগরের সুযোগ্য পুত্রের
বিধবা অবশ্য নয়–ঝুঁটিদার লাল মোরগের
হাতে নুদুশ কুমারী মুরগি মাত্র পাতাল সংসার।
যত পারে নিয়েছে সে যুদ্ধের খবর, ত্রিপুরার
বর্ডার পেরিয়ে কতবার মন তাঁর হিশাবের
বাইরে চলেছে ইণ্ডিয়ার দিকে, কিন্তু কপালের
লেখা খণ্ডায় কে! কে নেয় শেয়ার শেরেকগোনার!
তাই সে নিয়েছে ভার খালাম্মার স্মৃতিরচনার
আমেরিকায় এসেছে শুধু যুদ্ধে না যাবার জের
শুধু অনিবার স্ত্রীগমন পাপ শাপমোচনের
দুঃসহ জ্বালায়! সার একটা মোডেম দরকার
একটি ছাপার যন্ত্র নিয়ে এক মনিবের জোর
দিনকে রজনী ঠারে সন্ধ্যা হয় বলদের ভোর ॥
বলদের প্রিয় কবি
বলদ বিআএল গবিআ বাঁঝে।
পীঢ়া দুহিঅই এ তীনি সাঝে॥
-বৌদ্ধগান ও দোহা: ৩৩
বলদের প্রিয় কবি শামসুর রাহমান, গান
ভীষণ পছন্দ তাঁর কবি আবদুল চৌধুরীর।
পথের পাঁচালী তাঁর কাঁধে প্রায় চীনের প্রাচীর
তুলে দেয়, ঋত্বিক ঘটক বড় বলদ ঠকান
কাজ করেন হামেশা। বলদের রাগে মুখ কান
লাল হয়, রি রি করে কমবকত নাদান শরীর,
মার্কিন মুলুকে লেখক স্টিফেন কিঙ্গ পেটে চির
কির্মি আনে-মরণরে তুঁহু তেঁহ রবীন্দ্রসমান।
শিঙ্গ কাঁপে বলদের লিঙ্গ কাঁপে অস্থির গাভীর
গ্লোবাল ভিলেজ কাঁপে, কাঁপে শিঙ্গা সপ্ত আসমান
যে জন মার্কিন দেশে বসে হিংসে ইংরেজ জবান
রৌরব দোজখ তাঁর রায় হয় বলদ বিধির।
আপনার না পছন্দ আমাদের বয়সী বলদ!
'জানবেন কান্টের নন্দনতত্ত্ব আজ থেকে রদ।'
বলদ শুনেছে আব্বাজান
নিতি নিতি সিআলা সিহে সম জুঝই।
ঢে›ঢণ পাএর গীত বিরলেঁ বুঝই॥
-বৌদ্ধগান ও দোহা: ৩৩
বলদ শুনেছে আব্বাজান তশরীফ এনেছেন
হেরাত কাবুল থেকে, এনেছেন মৌলানা আবুল
কালাম আজাদ সাহেবের বাবাও। যেমন সেন
রাজাদের কুলীন বামুন সৈয়দ বংশের ফুল
তেমন ফুটেছে বাংলা ভাষার গোবরে। কি ব্যাকুল
বিষফোঁড়া গোদের উপর কাটে! ভুক্ত অহিফেন
সাফ করে নিত্য নতুন জঙ্গল! আরব্য দুলদুল
চলে চাটিগাঁর দিকে সত্যপীর বামন মোমেন
বলদ সোয়ার। আব্বার পীরের গদীতে রেহেন
সৈয়দ আব্বাকে রেখে মোহাম্মদ চলেছে নির্ভুল
সাংবাদিক হতে। এক নেতা এক দেশে সে নিদেন-
পক্ষে পেটেভাতে কামিনীচিকুরে জড়াত আঙ্গুল।
কামনার দেশে লোকে ওকে ডাকে বাঙ্গালি বলদ
মনে পড়ে মাইকেল ফিরে পায় কপোতাক্ষ নদ ॥
তুমি কি বাঙ্গালি বলদ
তুমি কি বাঙ্গালি বলদ না বাংলাদেশি বৃষ? রাজা
রাম্মোহন রায়ের সদৃশ শির গৌড়ীয় উষ্ণীষ
গাবতলি হাটে হাঁকে পাকা দাম হাজার চল্লিশ
তোমার মালিক, বিয়ায় পোয়াতি গাই তুমি বাঁঝা।
অখণ্ড বস্টন গ্লোবাল ভিলেজে একশ পঁচিশ
হাজার ডলার বদলাও হাত, পুরষ্কার সাজা
বল যা ইচ্ছা! দুপুরে সোপ অপেরা পাঁপড়ভাজা
মুখে ঝাড়া এক ঘণ্টা, বিকেলে চার্লস জলে বিষ
তেমন মন্দ না এই না বলদ না বৃষ হা যাযা-
বর্বর জীবন! আলি আকবর শোনান বন্দিশ
মাঝে মাঝে ইস্টকোস্টে, দীনবন্ধু বঙ্কিম গিরিশ-
নট দাস শতকের বিয়াতির সাধ করে কাজা।