শহীদ বুদ্ধিজীবী ‘এ কে এম নূরুল হক’ পরিবার জানে না আজও, মৃত্যু কিংবা নিখোঁজ!

উৎপল চক্রবর্তী
Published : 16 Dec 2016, 11:35 AM
Updated : 16 Dec 2016, 11:35 AM

আমার বিজয় দিবস নিয়ে তেমন কোন স্মৃতি নেই । সংবাদপত্রে নানা ফিচার , একদিন স্কুল ছুটি  বাস্‌ এতোটুকুই  ছিল শৈশবে'র বিজয় দিবস!  স্কুলে পড়া অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে টেলিভিশন নাটক গুলো আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগতো , সেখানে হানাদার বাহিনী নামক একটি প্রতিষ্ঠান কর্ত্তৃক বাঙ্গালী মা বোন'দের অত্যাচারের কাহিনী , আমার হৃদয়'কে মথিত করেছে সেটা বললে মিথ্যা বলা হবে। ছাত্রাবস্থায় একবার পাড়ায় আমার নেতৃত্বে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে , আমরা ক'জন 'আই এম এ ডিস্কো ডেন্সার' মঞ্চস্থ করেছিলাম, এবং সবাই তা উপভোগ করেছিল। একটি সংগঠনের ব্যানারে বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম একবার, সেখানে আমি একটি লুচি ও একটি সিঙ্গারা পেয়েছিলাম এবং একজন বড় ভাই আমাকে আরও একটি সিঙ্গারা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ ইং সাল থেকে ১৯৯৪ ইং সাল পর্যন্ত প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যয়ন কালে প্রত্যক্ষ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম । তখন ব্যানার , দেয়ালিকা , চিকা , ম্যাগাজিন, মিছিল , মিটিং , নাটক , গল্প কবিতা , কিঞ্চিৎ মারামারি যখন যেমন প্রযোজ্য আমি করে গেছি । সাদা কালো ৭১'এর কিছু নৃশংস ছবি , কোরেল ড্র কিংবা কোরেল পেইন্ট দ্বারা -তাতে লাল সবুজ কটি রেখা টেনে দিলেই নিদারুণ গ্রাফিক্স হয়ে যাবে তা আমি জানতাম। সেই সব এলোমেলো গ্রাফিক্সে বাজার চাহিদা অনুযায়ী মহান কিছু বাণী সংযোজন করলেই উৎপাদিত হয়ে যায় একটি দৃষ্টি নন্দন ফেসবুক কভার । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দুই চারখান ইমোশনাল পোস্ট দেবার সক্ষমতা আমার আগেও ছিল । অবশ্য ফেসবুক তখনও কারবালা কুরুক্ষেত্র কিংবা পলাশীর মাঠ হয়ে উঠে নি , তাই আমিও মহান ফাটাকেস্ট ফাইটার ছিলাম তার প্রমাণ দিতে পারিনি । কিন্তু এখন আমার টাইম লাইন দেখলে, আমার প্রোডাক্ট এবং আমার বিপণন ব্যবস্থায় -আপনি জেনে যাবেন আমি কে ?

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে , আমার দায়মুক্তি আবশ্যক । তাই আমি এই মর্মে প্রত্যয়ন করিতেছি যে , আই এম নট রিয়্যাল ফাইটার । আমার পিসিতে গুগুল নামীয় সার্চ ইঞ্জিনটি ছাড়া আমার ঘটে আর দ্বিতীয় কোন বিদ্যা নেই । তাই আমি বিনীত অনুরোধ করছি , ক্যান এনিবডি হেল্প মি প্লিজ? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর , সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক কিংবা কেউ একজন -যিনি কিছুটা জানেন ।

এ কে এম নূরুল হক ,

ছবিতে বাদিকের প্রথম, একাত্তরে তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী, কর্মস্থল ছিল ঢাকা । ২৯ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল মহাখালীর ওয়্যারলেস ক্যাম্পাসে তাঁর সরকারি বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্যাতনের পর হত্যা করে তাঁকে অজ্ঞাত গণকবরে মাটিচাপা দিয়েছে।

পাকিস্তানের হরিপুর স্টাফ কলেজে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম ডেভালাপ ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য, ১৯৬১ সালে তিনি 'তমঘা-ই-ইমতিয়াজ' খেতাব পেয়েছিলেন । অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব পরিত্যাগ করেছিলেন স্বেচ্ছায়। সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল তাঁর। এ ছাড়া এমন কথা প্রচলিত আছে যে ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারে তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।

 '…খোকা (এ কে এম নূরুল হক) ও তার সহকর্মী লোকমান হোসেন সাহেব মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। এদের দুজনকে বাসা থেকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কোনো খবর তখন পর্যন্ত কেউ জানে না। লোকমান সাহেব সত্যি ভাগ্যবান, যুদ্ধের নয় মাস বন্দী অবস্থায় থেকেও প্রাণে বেঁচে যান। খোকা আর কোনো দিন ফিরে আসেনি।'- তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন , সাবেক সচিব নূরুদ্দিন আহমদ।

 

 '…২৫ মার্চ বেলা গড়িয়ে দুইটা বা আড়াইটার সময় ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক সাহেবের সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ।…পূর্বের একটি আলোচনার সূত্র ধরে তিনি বললেন বঙ্গবন্ধু আমাকে একটি ট্রান্সমিটার আনতে বলেছিলেন। সেটি খুলনা থেকে আমি আনিয়ে রেখেছি। আমি এখন ওটা দিয়ে কী করব, সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে নির্দেশনা চাই।''স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও আমাদের সংবিধান' গ্রন্থে লিখেছেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম

তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদ লিখিত নেতা ও পিতা বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহযোগী হাজি গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, 'এরপর এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বাজে বাজে এমন সময় একটি টেলিফোন আসল, বলে আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি। মেসেজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে। মেশিনটি কী করব? আমি দৌড়ে মুজিব ভাই-এর কাছে গেলাম, বললাম মেজেস পাঠানো হয়ে গেছে। উনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন, মেশিনটি ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বলো।

আজ ৪৫ বছর পরেও পরিবার জানেনা, কী হয়েছিল তাঁর, মৃত্যু কিংবা নিখোঁজ!

যিনি সাক্ষাৎকার টি দিয়েছিলেন আনফরচুনেটলি তিনিও এখন আর জীবিত নেই । সার্চ ইঞ্জিনে বাংলা বা ইংরেজি 'এ কে এম নূরুল হক' এই নামে তেমন কিছুই পেলাম না।