নাগরিক সাংবাদিকতা ও নাগরিকের দায় 

উৎপল চক্রবর্তী
Published : 5 Jan 2017, 05:52 AM
Updated : 5 Jan 2017, 05:52 AM

নাসা ওয়ার্কশপ মিস্‌ করলেন, ডিজিটাল মানব

রাজার নির্দেশে মন্ত্রী মহোদয় কবুতরের পায়ে বেঁধে দিয়েছিলেন চিঠি । কবুতর , রাইট টাইমেই অচিনপুরের রাজদরবারে পৌঁছে দিয়েছিল সেই চিঠি । তদানুযায়ী  চার মাস পর শুক্লপক্ষ পূর্ণিমার রাতে ছিল -তাদের বিয়ের লগ্ন । অচিনপুর থেকে রাজপুত্তুর ডালেম কুমার , রাজকন্যা লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার আগেই এসে পড়েছিলেন বিয়ের আসরে । টাইম শিডিউল জনিত বড় ধরনের বিভ্রাট ছাড়াই সম্পাদিত হয়ে গেছিল- রাজপুত্তুর ডালেম কুমার ও রাজকন্যা কঙ্কাবতী'র বিয়েটা । পাঁচ হাজার বা দুই হাজার বছর আগের গল্প।

জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ , দাঁড়িয়ে ছিলেন বাটা সিগনাল। ভাবছিলেন , কিভাবে যাবেন-সিএনজি , বাস না উবার-ট্যাক্সি , গন্তব্য মহাখালী । আপনি আপাদমস্তক একজন ডিজিটাল মানুষ । স্ট্রিট ভিউয়ারে, চেক করে নেবেন লোকেশন, সকল ফোন কন্টাক্ট -গুগল একাউন্টে সিঙ্ক করা আছে  এবং ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের ইনভাইটেশন কার্ডটিও আপলোড দেয়া আছে ফটোস-এ।  পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটি বের করবেন জাস্ট, কিন্তু মাথা চক্কর দিয়ে উঠল ! মোবাইলটি সম্ভবত পকেটমার হয়ে গেছে আপনার ! নিজের ফোন নম্বরটিও ঠিক ঠিক মনে পড়ছে না এখন ! পুরোপুরি  ডিজিটাল হবার আগে, একটু এনালগ হবার দরকার ছিল । যাই হোক মারাত্মক মুশকিলে পতিত হলেন -এই মাত্র।

হে ডিজিটাল মানব , আপনার সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ভবিষ্যৎবাণী করতে চাই।

-আপনি ফেসবুক গুগল চালান, মোবাইলটি কেনার পর থেকেই আপনি তাতে লগইন, তাই আপনি সম্ভবত ভুলে গেছেন আপনার একাউন্ট নেম এবং পাসওয়ার্ড দুটোই । এম আই রাইট?

-বাই, একদম রাইট কথা বলেছেন।

-আপনি কীপ ,ক্যালেন্ডার কিংবা নোটে  লিখে রেখেছিলেন ঠিকানাটি, এখন রোড নাম্বার  হাউজ নাম্বার কিছুই মনে নেই, তাই তো?

-ইয়েস বাই, হান্ড্রেডে হান্ড্রেড।

-আপনি মোবাইল ফোন'টি হারিয়ে এখন প্রায় ব্লাইণ্ড হয়ে গেছেন ।

-ইয়েস বাই, আমি এখন কী করব বাই?

-আপনি পাশের দোকানে যান, সেখান থেকে মুড়ি কিনে খান ভাই , বাই ।

একদিন কবুতর উড়ে ,বহুদূরে পৌঁছে দিয়েছিল খবর। আর এদিকে ২০১৭ সালে , একজন তার মোবাইল ফোনটি  হারিয়ে এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। 'নাসা'র চোখে বাংলাদেশ' অথবা 'নাসা বাঁচলে , বাঁচবে দেশ' এইরকম কিছু একটা ছিল ওয়ার্কশপ শিরোনাম । নাসা মানে সম্ভবত তারা বোঝাচ্ছিলেন নাগরিক সাংবাদিকতা -এ ছাড়া তেমন আর কিছুই মনে পড়ছে না এখন ।

সংবাদ দিন , সন্দেশ নিন

একসময় রাজার 'অর্ডার' , রাজ্যের প্রধান নগর গুলোতে প্রকাশের নিয়ম ছিল । কথিত আছে লিখিত ভাবে সংবাদ প্রচারের ব্যাপারটি সর্বপ্রথম মিশর অঞ্চলে সংগঠিত হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন  খ্রিষ্ট-পূর্ব ২৪০০ বছর পূর্বেই  ফারাও  শাসন আমলে -হাল আমলের জনপ্রিয় কুরিয়ার সার্ভিসের মত রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আদেশনামা প্রচারের ব্যবস্থা চালু ছিল। প্রাচীন রোম সভ্যতায়  সরকারের তরফে জুলিয়াস সিজার কর্ত্তৃক ঘোষিত ইস্তেহার জনগণের উদ্দেশ্যে তৈরি করে বিতরণ করা হত, যা ছিল ধাতব পদার্থ অথবা পাথরের উপর লিখিত।

প্রচলিত অর্থে 'সংবাদ' মানে হচ্ছে 'খবর' যা মূলত একটি ফারসি শব্দ । নতুন ঘটনা সমূহের বিবরণ ও প্রকাশ। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত,  প্রথম বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষিক মাসিক পত্রিকাটির নাম ছিল 'দিগ দর্শন' । যখন কোন 'খবর' কারো বাড়ি পর্যন্ত বহন করে নিয়ে আসা হতো , তখন সংবাদদাতাকে মিষ্টান্ন কিংবা সন্দেশ খাইয়ে আপ্যায়ন করাটা ছিল বঙ্গীয় সংস্কৃতির প্রাচীন প্রথা। যেহেতু 'খবর' বিনিময়ে 'সন্দেশ' , তাই 'সংবাদ' কে কেউ কেউ 'সন্দেশ' নামেও অভিহিত করেছেন । তাই 'সন্দেশ'কে সংবাদের বিনিময় মূল্য ধরলে, আড়াইশ বছর আগেও 'নিউজ ওয়াজ এক্সপেন্সিভ' মানে 'ফিরি ফিরি' সংবাদ কেউ কাওকে শোনায়নি তখনও !

নিউজ, নতুন ঘটনাসমূহ ও প্রকাশ

বলা হয়েছে News হচ্ছে 'presentation of new information' অর্থাৎ নিত্য নতুন সংবাদ সমূহের প্রকাশ । 'জুলিয়ান হ্যারিস' এবং 'স্ট্যানলি জনসন' মতানুযায়ী 'সংবাদ' হচ্ছে চলমান ঘটনা সমূহ , যা মানুষ জানতে চায় , আর যা অধিকাংশকে আগ্রহী করে তোলে সেটি হচ্ছে 'সেরা সংবাদ'

'নিউইয়র্ক সান' পত্রিকার সম্পাদক জন বি বোগার্ট (১৮৪৮-১৯২১) বলেছিলেন-

"When a dog bites a man, that is not news, because it happens so often. But if a man bites a dog, that is news."

'একটি কুকুর কাউকে কামড়ে দিলে তা খবর নয় কেননা তা  হরহামেশাই ঘটছে, কিন্তু মানুষ কুকুরকে কামড়ে দিলে সেটি অবশ্যই খবর'।

এটি সংবাদ প্রকাশের 'মূল সূত্র-কথা' । ষোড়শ শতাব্দীতে 'থমাস ওইলসন' প্রথম অবতারণা করেছিলেন । পরবর্তীতে 'রুডিয়ার্ড কিপ্লিং' নামীয় একজন ব্রিটিশ, ১৯০২ সালে তাঁর ক্লাসিক শিশু সাহিত্য 'Just so stories' গ্রন্থের "The Elephant's Child" নামীয় একটি কবিতায় লিখেছিলেন­-

" I keep six honest serving-men

They taught me all I knew,

Their names are What and Why and When

And How and Where and Who."

এর সংক্ষিপ্ত রূপটির নাম "5W1H",  প্রকাশিত সংবাদে যার এর জবাব থাকা আবশ্যিক।

  • What happened? কী ঘটেছিল ?
  • Who is involved? কারা জড়িত ছিল?
  • Where did it take place? কোথায় সেটি ঘটেছিল?
  • When did it take place? কখন সেটি ঘটেছিল?
  • Why did that happen? কেন সেটি ঘটেছিল?
  • How did it happen? কীভাবে সেটি ঘটেছিল?

সংবাদপত্র ইন্ডাস্ট্রি, নট চ্যারিটি

এটি হতে পারে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান মাথা নত করা সংবাদপত্রের সর্বশেষ আপডেট । বলা হয় নিউজ এজেন্সি,  অনাথ শিশু লালন পালনের কোন  চ্যারিটি হাউজ নয় । "News" is whatever the news industry sells"। অর্থাৎ পত্রিকা খবর ছাপে , আমরা তা কিনে পড়ি। বিশ্বব্যাপী সংবাদ পত্র কিংবা বিখ্যাত মিডিয়াহাউস গুলোর 'নিউজ উৎপাদন' আদতে  বিহাইন্ড দ্য কিচেন -এক বিরাট ব্যবসার নাম । কর্পোরেট হাউজ আর কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির গাড়ির চাকা ঘোরে । মালিকগণের বিশ্বাস ,মতাদর্শন এবং স্ট্রেটিজি অনুযায়ী তৈরি হয় সংবাদ। যেহেতু মালিকের বেতনের টাকায় সাংবাদিকরা বাঁচেন, তাই অনেক ক্ষেত্রে মালিক যেমন চান সাংবাদিক তেমন লেখেন। নীতি শাস্ত্র -মানে যা ইথিক্স হয় , প্রয়োজনে তা কমিক্স হয় , ফাইনালি তা পলিটিক্স হয় – সূর্য তখন দক্ষিণে উঠলেও , কেউই খুব অবাক না হয় !  মানে যখন যা দরকার, বিরোধী  না হয়  সরকার! সংবাদ মানে – পাবলিক যেটা খায় তার সাথে তাল মিলিয়ে তাল, বিজ্ঞাপন বাণিজ্য , পত্রিকার কাটতি -যেন না হয় বেসামাল!

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ  ৩.৬৭ বিলিয়ন মানুষের হাতে  যখন ইন্টারনেট, তখন মেইন স্ট্রিম মিডিয়াকে পাত্তা না দিয়ে নাগরিক নিজেই শুরু করে দেবেন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ , তাতে অবাক হবার কিছু নেই।  আর এভাবেই বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকের 'সংবাদ' জন্মাবার আগেই জন্ম নিয়ে নেয় নাগরিকের 'সংবাদ' ।

www আকাশে নতুন নক্ষত্র,  'ব্লগ'

১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাধিত হয় তথ্য প্রযুক্তি'র এক অনবদ্য সংযোজন www ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব । URI Uniform Resource Identifier হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিতে কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে সনাক্তকরণের একটি অভিন্ন পদ্ধতি যাকে পরবর্তীতে URL Uniform Resource Locator  দ্বারা আরও সুস্পষ্ট ভাবে অবস্থান সুবিধাসহ সনাক্তকরণে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ১৯৯০ সালেই  চালু হয় ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ IMDb ।  ১৯৯৫ সালে আত্মপ্রকাশ  করে আমাজান ডট কম । ১৯৯৬ সালে জন্ম হয় ফ্রি ওয়েব বেজড ই-মেইল । ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও ইয়াহু গ্রুপ । ২০০১ সালে উদ্ভব  হয় ফ্রি এন্সাইক্লোপেডিয়া উইকিপিডিয়ার । ২০০৩ সালে হাজির হয় আইটিউন স্টোর, লিংক্‌ডইন এবং স্কাইপে। ২০০৪ সালে  ইমেজ হোস্টিং ফ্লিকার এবং ২০০৪ সালেই হার্ভার্ডের ডরমিটরিতে উদ্বোধন হয়  দ্য ফেসবুক.কম । ২০০৫ সালের আগস্টে 'দ্য ফেসবুক ডটকম' হয়ে যায়  শুধু 'ফেসবুক' এবং একই বছরে  গুগল আর্থ চালু করে  গুগল । ২০০৬ সালে জন্ম নেয় টুইটার । ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর ৩০ তারিখে একটিভ ফেসবুক ইউজার  সংখ্যা হয়ে যায় ১৭৯ কোটি।

মার্কিন সাংবাদিক 'জাস্টিন হল' সোয়ার্থমোর কলেজে অধ্যয়ন-কালীন সময়ে সর্বপ্রথম 'ব্লগিং' শুরু করেন, সেটি ছিল ১৯৯৪ সালের ঘটনা। ১৯৯৮ সালে  'ব্রুস আবেলসন' নামীয় মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার শুরু করেন 'ওপেন ডায়রি', সেটি ছিল প্রথম ব্লগ কমিউনিটি, যেখানে পাঠকেরা অন্য লেখকের ব্লগ অন্তর্ভুক্তিতে মন্তব্য করতে পারতেন। ১৯৯৯ সালে মার্কিন প্রোগ্রামার 'ব্র্যাড ফিটজপ্যাট্রিক' শুরু করেন লাইভ জার্নাল । ১৯৯৯ সালে  'ইভান উইলিয়ামস' এবং 'মেগ হুরিহান' (পাইরা ল্যাবস) চালু করেন 'ব্লগার.কম' -যা গুগল কিনে নেয় ২০০৩ সালে। ওয়ার্ডপ্রেস, গুগলের ব্লগার, টেকনোরাতি, ব্লগ ডট কম, হোপব্লগ ইত্যাদি  বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগিং সাইট।

ব্লগ শব্দটি এসেছিল মূলত weblog ওয়েব-লগ থেকে,  এক ধরনের ভার্চুয়াল ডায়েরি কিংবা দিনলিপি যা প্রকাশিত হয় অনলাইনে- যেখানে একজন লেখক তার মুক্তমত প্রকাশ করতে পারেন নির্দ্বিধায়। যিনি ব্লগে লেখেন তিনিই ব্লগার। এটি সামাজিক গণমাধ্যমের এমন এক সংযোজন -যেখানে একজন  সাধারণ আমজনতা-  লেখক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, বিশ্লেষক কিংবা সাংবাদিক না হয়েও বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন অবলীলায়। পোস্টগুলো সাধারণত কালানুক্রমিক-ভাবে প্রদর্শিত হয়, সাম্প্রতিক পোস্ট প্রদর্শিত হয় পেজের প্রথমে। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়বস্তু যুক্ত করেন, যেখানে লেখক ও পাঠকগণ পরস্পর মন্তব্য দ্বারা আলোচনা এবং বিশ্লেষণের সুযোগ পান।

'ব্লগিং' , সিটিজেন জার্নালিজম

শুরুর দিকে 'ব্লগ' সংবাদ বা তথ্য আদান প্রদান নির্ভর তেমন কিছু ছিল না , ছিল  আলাপ আলোচনা ঘটনা প্রবাহ এবং নানা বিধ স্টোরি- যা একেবারেই ছিল ব্যক্তিগত কথন। কিন্তু আস্তে আস্তে ব্লগের এই রূপটি পরিবর্তিত হয়ে যায়।  ব্লগার'রা রাজনীতি ,সমাজনীতি , সাহিত্য , দর্শন, ধর্মতত্ত্ব,  বিজ্ঞান , খেলাধূলা, ভ্রমণ , যুদ্ধ , মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে লিখতে শুরু করেন। এবং আজ এই কথাটি প্রতিষ্ঠিত -মূলধারার লেখক গবেষক না হয়েও ব্লগারগণ প্রমাণ করেছেন -তাদের ভাষা যদিও বা অপ্রচলিত, আক্রমণাত্মক এবং অনেক ক্ষেত্রে তা সংবাদপত্রে অপ্রকাশযোগ্যও বটে – কিন্তু তারা পক্ষপাতদুষ্ট বলেন নি , তারা সঠিক বলেছেন , সত্যটি উদঘাটন করেছেন, লজিক্যাল বলেছেন এবং সর্বোপরি যা বলেছেন – সেটাই প্রকৃত জনমত।

প্রফেসর জার্নালিজম, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি , জ্যা রোসেন বলেছেন- 'এখন যারা সিটিজেন জার্নালিস্ট একসময় তারা শ্রোতা ছিলেন। সেটাই তারা বলেন যতটুকু সেখানে ঘটেছে , রহস্যময়তা তারা বোঝেন না এবং অদ্ভুত ভবিষ্যৎবাণী তারা করেন না'।

Joshua Micah Marshall- "I think of us as journalists; the medium we work in is blogging."  

Brian Clark- "Don't focus on having a great blog. Focus on producing a blog that's great for your readers."

Matt Wolfe- "There's a lot of information out there for free, so you've got to figure out what makes your information different."

একজন আম নাগরিক , যিনি সরকারে খান না , মন্দিরে প্রার্থনা সভা পরিচালনা করেন না , যিনি সাংবাদিক নন। যিনি কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন , লেখার জন্য যার কোন অর্থ প্রাপ্তি ঘটে না। তথ্য, খবর ও খবর সম্পর্কিত মতামত,  বিশ্লেষণ , জীবনযাপনের অগ্রন্থিত গল্প , ঘটনার আড়াল , আলোর নীচে অন্ধকার , যেমন খুশি তেমন -লিখে , ছবি তুলে  কিংবা ভিডিও দ্বারা -ব্লগ, ফেসবুক , টুইটার, ইউটিউব কিংবা অনলাইন যে কোন মাধ্যমে -স্বদ্যোগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যিনি তা পাবলিশড করে দেন – তিনিই সিটিজেন জার্নালিস্ট।

'ব্লগার', মৃত্যু উপত্যকা যার দেশ

'বাঁধ ভাঙার আওয়াজ' নামে 'সামহোয়ারইন ব্লগ' দেশের প্রথম 'ব্লগ', যার আত্মপ্রকাশ হয় ২০০৫ সালে । পরবর্তীতে সচলায়তন , আমার ব্লগ , মুক্তমনা , নির্মাণব্লগ ইত্যাদি । বিডিনিউজ২৪.কম দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র , যার ব্লগ বিডিনিউজ২৪. কে বর্তমানে  'নাগরিক সাংবাদিকতা' চর্চার সবচাইতে প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সন ১৮২৮। রাজা রাম মোহন রায় বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে ব্যাপক জ্ঞানার্জনে জানতে পারেন, বস্তুত প্রত্যেক ধর্মেরই উদ্দেশ্য অভিন্ন -মানবের কল্যাণ। তাই তৎকালীন হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি, শাস্ত্রীয় আচারপালন ও কুসংস্কার বাদ দিয়ে প্রিন্স দ্বারকা নাথ ঠাকুরকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সর্ব ধর্মের ভাবধারা নিয়ে গঠিত "ব্রাহ্ম সমাজ"। ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভায় , অন্য সকল অনুবাদ কর্ম বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদের  সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । জ্ঞানবৃদ্ধ মৌলবী এহসান আলী কাছ থেকে আরবি ব্যাকরণ শিক্ষা নিয়ে তত দিনে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে "ব্রাহ্ম ধর্ম" গ্রহণ করেছেন সুপন্ডিত ভাই গিরিশচন্দ্র সেন । যার কাঁধে অর্পিত হয় পবিত্র আল-কোরান সহ আরও অনেক হাদিস-এর বাংলা করার দায়িত্ব। ১৮৭৯ সালে গঠিত সেই ব্রাহ্ম সমাজকে তৎকালীন হিন্দুসমাজ নাস্তিক হিসেবে গণ্য করত, প্রিন্স দ্বারকা নাথ ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ ।

১৩৪ বছর পর ২০১৩ সাল , বাংলাদেশ নামীয় এক দেশ । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য -ব্লগাররা গঠন করেন গণজাগরণ মঞ্চ , শুরু হয় সুতীব্র আন্দোলন , যার কেন্দ্রস্থল হয় রাজধানীর 'শাহবাগ' নামক চত্বর । সেই আন্দোলন সূচনার পরে পরেই , স্বাধীনতা বিরোধীরা -যারা জড়িত ছিল যুদ্ধাপরাধে , এই আন্দোলন নস্যাৎ উদ্দেশ্যে -সকল ব্লগারদের নামের সাথে সেঁটে দেয় ট্যাগ- এরা 'নাস্তিক'। শুরু হয় টার্গেট ব্লগার কিলিং, নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ব্লগারদের, একের পর এক । প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান অনেক ব্লগার । মত প্রকাশকে স্তব্ধ করার প্রয়াসে  এইরূপ নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সাম্প্রতিক সময়ে , বিশ্ব ইতিহাসের সবচাইতে বর্বরতম ঘটনা ।

দ্য ফার্স্ট 'সিটিজেন জার্নালিস্ট'

মিডিয়া সিফটের প্রধান উদ্যোক্তা মার্ক গ্লেসার মত অনুযায়ী, সিটিজেন জার্নালিজম শুরু'টা হয়েছিল মূলত আঠারশ শতকে । টমাস পেইন ( ১৭৩৭ – ১৮০৯) নামীয় একজন ইংরেজ ও আমেরিকান রাজনৈতিক কর্মী যিনি ছিলেন দার্শনিক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং বিপ্লবী । আমেরিকা বিপ্লবের শুরুর দিকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু 'প্যাম্ফলেট' বা পুস্তিকা রচনা করেন , যার দ্বারা  বিপ্লবীরা  ব্যাপক ভাবে অনুপ্রাণিত হন । সেই পুস্তিকা গুলোর দাম ছিল নামমাত্র । জানা যায় সেই সময় অধিকাংশ বিপ্লবীর  তাঁর সর্বাধিক বিক্রিত প্যাম্ফলেট 'কমন সেন্স'টি  পাঠ করা ছিল। পরবর্তীকালে ১৭৭৬ সালে বৃটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র রচনায় ,এই প্যাম্ফলেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য হিসাবে ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে , ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর এক রাজনৈতিক সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তিনি তখন মোটরগাড়িতে করে যাচ্ছিলেন । অকস্মাৎ আততায়ী'র গুলিটি এসে তাঁর গলায় বিদ্ধ হয় , দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের আধা ঘণ্টা'র মধ্যেই  মারা যান প্রেসিডেন্ট । এব্রাহাম জাপ্রুডার  যিনি পেশায়  ছিলেন একজন মহিলাদের পোশাক নির্মাতা , ছিলেন প্রেসিডেন্টের একজন ভক্ত , তিনি আগে থেকেই প্রেসিডেন্টের  কিছু ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন । কিন্তু সেদিন সকালে বৃষ্টি থাকায় বাসায় ক্যামেরাটি রেখেই চলে এসেছিলেন তিনি , যা পরে তার সহকর্মী নিয়ে আসে। এব্রাহাম জাপ্রুডার মটর শোভাযাত্রার ছবি ধারণ করতে যেয়ে , প্রেসিডেন্টের গুলিবিদ্ধ হওয়ার পুরো ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত ভাবে ধারণ করে ফেলেন ক্যামেরায় । যদিও সেটি দিয়ে কেনেডি হত্যার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয় নি। 'এব্রাহাম জাপ্রুডার' –কে অনেকে বলেন  -দ্য ফার্স্ট 'সিটিজেন জার্নালিস্ট' ।

https://www.youtube.com/watch?v=JbXI0WSlTGw

নাগরিক সাংবাদিকতা 'যেই সাবানে কাপড় কাঁচা , সেই সাবানেই গোসল'

আপনার হাতে একটি ডিভাইস আছে যেটি মূলত একটি মোবাইল এবং যা ক্যামেরা সুবিধা সম্বলিত। আপনি ছবি কিংবা ভিডিও মোবাইলে  ধারণ করলেন , লিখলেন এবং মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগটি চালু করে তা অনলাইনে পাবলিশ করে দিলেন -আপনি হয়ে যেতে পারেন একজন 'সিটিজেন জার্নালিস্ট' মানে 'নাগরিক সাংবাদিক'। কিন্তু শুরুতেই যেই রূপক ঘটনাটি বলেছি,  অর্থাৎ সেই ডিজিটাল মানবের মত- মোবাইল হারিয়ে যাওয়া মাত্রই আপনি যদি অকার্যকর হয়ে যান । তাহলে আপনি আদতে ফার্মের মুরগী ছাড়া আর বিশেষ কিছুই  নন, সেটাও জেনে যান । বলা বাহুল্য,  মোবাইল নির্ভরতা আমাদের মুক্ত চিন্তক হয়ে উঠার ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা । আমাদের জীবনে অলস বসে বসে ভাবার অবকাশ এখন খুব কম , মোবাইল দ্বারা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে নিয়ত পরিভ্রমণ কেড়ে নিয়েছে -আমাদের অবসর, খেলাধুলা, আড্ডাবাজি, বই পড়া । তাই নাগরিক সাংবাদিক – জ্ঞানী কিংবা পণ্ডিত না হলেও চলবে , চোখ কান খোলা থাকবে, বিচার বুদ্ধি বিবেচনায় অন্ধ হবেন না । মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন একজন সত্যানুসন্ধানী মানুষ হতে হবে আগে।

কতিপয় নাগরিক সাংবাদিকতা

তার আনুমানিক বয়েস ২৫ বছর , ইতিহাসে তার নাম লেখা নেই , তার মোবাইলটি চাইনিজ এবং কম দামি এবং তার ক্যামেরার মাপ অতি সাধারণ মে বি সামথিং মেগাপিক্সেল ।  দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ৪ঠা আগস্ট । পিনাক-৬ নামীয় লঞ্চটিতে প্রচণ্ড ভিড় , যুবক অনেক চেষ্টা করেও তাতে উঠতে  বিফল হল । অগত্যা সে  বাধ্য হয়ে ফেরিতে চেপে বসল।   কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া যাওয়ার পথ , পদ্মা নদী তখন প্রচণ্ড রুদ্র । পদ্মার লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে সুতীব্র স্রোত , বেলা তখন ১১টা । দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে একসময় ডুবে যেতে লাগলো পিনাক-৬  নামীয় লঞ্চ। যুবক এই দৃশ্য ধারণ করে ফেললো তার মোবাইলে, মাত্র ৫৩ সেকেন্ড ভিডিওটির টাইম। হাহাকার চিৎকারে পদ্মার বাতাস ভারী হয়ে উঠবে সেই সুযোগটুকুও দিল না পিনাক-৬ । মুহূর্তের মধ্যে অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেল সেই ভিডিও ।  মুন্সিগঞ্জ মাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবি

https://www.youtube.com/watch?v=5XxqsjrIxuA

কৃষ্ণাঙ্গ ফিলান্ডো ক্যাস্টিল (৩২) ছিলেন মন্টেসরি স্কুল ক্যাফেটেরিয়া সুপারভাইজার । ভিডিও গেম পছন্দ করতেন আর ছিলেন পরিশ্রমী এবং তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতিও ছিল । ২০১৬'র জুলাই মাসের ৬ তারিখ বুধবার । যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপলিস এলাকার ফ্যালকন হাইটস ঘটনাস্থল। ট্রাফিক স্পটে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের সাথে গাড়িতে থাকা একটি বন্দুককে কেন্দ্র করে বাক বিতণ্ডা শুরু । ফিলান্ডো ক্যাস্টিল তার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ওয়ালেট দেখাতে যাচ্ছিলেন, এরই মধ্যে সম্ভবত তাকে গুলি করে দেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ । গাড়িতে তখন ছিলেন ক্যাস্টিলের বাগদত্তা , বান্ধবী ল্যাভিস রেনল্ডস। অগত্যা ল্যাভিস রেনল্ডস পরবর্তী ১০মিনিটের ঘটনা সমূহ ভিডিওতে ধারণ করে ফেলেন । সাংবাদিক ও গবেষক ডেভিড উবার্টি তার কলামে লিখেছেন 'Reynolds was both victim and reporter-a citizen journalist, ultimately', পাশে চালকের আসনে বসা গুলিবিদ্ধ ক্যাস্টিল তখনও জীবিত। ১০ মিনিটের ওই ভিডিও ফুটেজটি অনলাইনে দেয়া মাত্রই আমেরিকা জুড়ে কৃষ্ণাঙ্গ এবং সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ল । জন্ম নিল এক ভয়াবহ বিক্ষোভ, ফলশ্রুতিতে , পরে পাঁচজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ স্নাইপারে মারা পড়লেন কৃষ্ণাঙ্গদের গুলিতে। ল্যাভিস রেনল্ডস ভিডিও ।

https://www.youtube.com/watch?v=PEjipYKbOOU

২০০১ সালে , যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন ইলেভেন ঘটনার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সেই ভয়াবহ হামলার ভিডিও চিত্র ধারণ করেছিলেন , তারা  কেউই মেইন স্ট্রীম জার্নালিস্ট ছিলেন না। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে ভারতমহাসাগরে নয় দশমিক তিন মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট  সুনামিতে মৃত্যু হয়  প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের, পরবর্তীতে ব্লগারদের ব্যাপক লেখালেখিতে, বিশ্বমিডিয়ার ঘুম ভাঙ্গে যা ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ তৎপরতায় বিরাট ভূমিকা পালন করে  এবং সুনামি সম্পর্কিত গবেষণা'র সমস্ত তথ্যাদি ব্লগার'দের কাছ থেকেই সংগৃহীত হয়। ২০০৫ সালে আমেরিকার হ্যারিকেন ক্যাটরিনার যাবতীয় আপডেট নিউজ পাওয়া যায় নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকেই । আবোটাবাদে বিন লাদেনের হত্যার মার্কিন তৎপরতা শোহাইব আতাহার নামে একজন  লাইভ টুইট করেছিলেন , এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় আতাহারের তথ্যকেই সবচাইতে বিশ্বস্ত মনে করা হয় ।

২০১৬ জুলাই মাসের ১ তারিখ গুলশান ঢাকা , হলি আর্টিজান বেকারি'র ভয়াবহ নৃশংসতার ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন , পাশের বাড়ি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ডি কে হোয়াং নামীয় একজন । ২০১৬  অক্টোবর মাসে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে খাদিজাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে  ছাত্রলীগ নেতা বদরুল, সেই ঘটনার ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন কোন এক আমজনতা।

ব্লগার ও সাংবাদিক

পুলিৎজার জয়ী আমেরিকান সাংবাদিক ডেভিড এস ব্রোডার বলেন – কম্পিউটার দিয়েই পুরো যুদ্ধটা সেড়ে ফেলা সাংবাদিকতা নয় , ফিল্ডে যেয়ে তথ্য সংগ্রহ যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুতের কিছু বিষয় আছে । সাংবাদিক  হুট করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন না পুরোটা তাকে জানতে হয় , যা ব্লগারদের ক্ষেত্রে খুবই কমন একটি ব্যাপার।

বিশ্বের অন্যতম ব্লগ সাইট টিএনডব্লিও'র সাথে এক সাক্ষাৎকারে এর একটি প্রতিউত্তর আছে  , যেখানে ব্লগার এলেক্স ওইলহ্যাম বলেন– পাবলিকের আগ্রহ সঠিক তথ্যটি জানা এবং সেই ক্ষেত্রে ব্লগার'রা ঘটনা এবং ঘটনার আড়ালের বিষয় গুলোও তুলে ধরেন , যে কাজটি সাংবাদিক'রা এড়িয়ে যান। ব্লগিং হচ্ছে মতামত প্লাস সাংবাদিকতা।

বর্তমান সময়ে সংবাদ-বিজ্ঞানীরা বলেন সাংবাদিক হতে গেলে ব্লগিং হচ্ছে প্রথম পাঠ । তারা বলেন, ভালো সাংবাদিক হতে গেলে , চর্চার পূর্বেই ব্লগ খুলুন , লিখুন এবং অন্যদের কাছ থেকে শিখুন , পাঠক রিয়েকশান দেখুন এবং পাঠক কী চায় সেটা বুঝুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর সাথে ক্রমাগত ব্লগিং চর্চায় একদিন তুখোড় সাংবাদিক হয়ে আপনি উঠবেন , সেটা নিশ্চিত । তবে শুধু ডিগ্রী আর একখান ক্যামেরা-খান কাঁধে নিলেই- আপনি এখন আর জার্নালিস্ট নন , এই পুরানা হিসাব হিসাব ভুলে যান।

একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক এসাইনমেন্ট মাথায় নিয়েই মাঠে নামেন , তিনি ইকুয়েপমেন্ট সহ ঘটনাস্থল থেকে খবর সংগ্রহের জন্য এজেন্টের অনুমোদিত ব্যক্তি । ফ্রি ল্যান্স ব্লগার'রা যখন যা পান ,তা নিয়েই কাজ করেন , তিনি অনুমোদিত এজেন্টও নন , চলতি পথে দৃশ্যমান সংবাদযোগ্য তথ্য সমূহ তিনি বিতরণ করেন যা মূলত কোন বিপণন নয়। তথ্য প্রযুক্তির   উন্মুক্ত বাতায়নে উড়ে বেড়াবার সক্ষমতা দুই জনেরই সমান সমান । তবে ব্লগার যখন ব্লগারগণ হয়ে যান তখন তারা একটি জোটবদ্ধ শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেন।  ব্লগিং সম্পূর্ণ সাংবাদিকতা নয় , এখানে ঘটনা সমূহের বিবরণের চেয়ে বেশী থাকে আলোচনা এবং নিজস্ব মতামত।  কিন্তু পিওর সাংবাদিকতায় নিজস্ব মতামত প্রকাশের কোন অবকাশ নেই , মূল কাজ ঘটনা সমূহ ধারণ ও প্রকাশ। অনেকেই আছেন , যিনি প্রথমত একজন পৃথিবী-খ্যাত সাংবাদিক এবং  দ্বিতীয়ত একজন শক্তিশালী ব্লগারও বটে । আবার নামী দামি অনেক রিপোর্টার আছেন , যিনি সংবাদ মাধ্যমে নিউজটি শেয়ার করার আগে নিজের ব্লগে নিউজটি ফার্স্ট ব্রেক করে দেন । ব্লগার না  সাংবাদিক –কে মহান ? এই জাতীয় ফাও প্যাঁচাল আর ক্যাচালে আসেন মনোনিবেশ না করি।

তথ্য বিকৃতি রোধ , নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব

মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে -একপক্ষে 'পাণ্ডব' অন্যপক্ষে  'কৌরব' । গুরু দ্রোণাচার্য এবং তাঁর সন্তান 'অশ্বত্থামা' যুদ্ধে ছিলেন কৌরবদের পক্ষে । শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন পাণ্ডবদের মূল পরামর্শদাতা । চলমান যুদ্ধে পরাক্রমশালী দ্রোণাচার্য  একসময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন , তাতে পাণ্ডবগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল ।  যুধিষ্ঠির ছিলেন পাণ্ডবদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা , সবাই তাকে বিশ্বাস করত এবং ধর্মপুত্র বলে ডাকত , কেননা যুধিষ্ঠির ছিলেন ন্যায় এবং সত্যবাদিতার প্রতীক। শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন –'যাও তুমি দ্রোণাচার্যর কানে খবর পৌঁছে দাও – তাঁর সন্তান 'অশ্বত্থামা'র মৃত্যু হয়েছে' । পাণ্ডবদের আরেক ভ্রাতা ভীম শ্রীকৃষ্ণর পরামর্শে 'অশ্বত্থামা' নামীয় এক হাতীকে হত্যা করল । যুধিষ্ঠির  দ্রোণাচার্যের উদ্দেশ্যে বললেন "অশ্বত্থামা হত:- ইতি গজ"। যুধিষ্ঠির বাক্যের প্রথম অংশ 'অশ্বত্থামা হত:'  জোড়ে বলেছিলেন , কিন্তু দ্বিতীয় অংশ 'ইতি গজ' আস্তে উচ্চারণ করেছিলেন। সম্পূর্ণ বাক্যটির মানে ছিল "অশ্বত্থামা -নামক হাতীটি নিহত হয়েছে" ।  দ্রোণাচার্য প্রথম অংশটুকু শুনেই মনে করেছেন তাঁর প্রাণ প্রিয় পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে , ফলত দ্রোণাচার্য , পুত্র শোকে অস্ত্র ত্যাগ করলেন । পরে পাণ্ডব পক্ষের 'ধৃষ্টদ্যুম্ন' হত্যা করল দ্রোণাচার্যকে । যুধিষ্ঠির আপাত দৃষ্টিতে একটি সত্য কথাই বলেছিলেন , কিন্তু এই সত্য কথার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গভীরতম চালবাজি , আদতে যা ছিল এক মিথ্যা সংবাদ ।

  • সাংবাদিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলে, একটা কথা প্রায়ই বলা হয়, কমেন্ট ইজ চিপ, ইনফরমেশন ইজ এক্সপেনসিভ । অর্থাৎ, মন্তব্য করাটা সহজ, কিন্তু তথ্য যোগাড় করা কিংবা তথ্য দেয়াটা কঠিন কাজ। প্রযুক্তির কল্যাণে, তথ্য পরিবেশনের কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। কিন্তু তথ্য যোগাড়ের যে কাজটি, তথ্য যাচাই বাছাই করার যে কাজটি, সেটি আমার ধারণা একটু কঠিন কাজ। কেননা, সেখানে দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন এসে যায়, সেখানে সতর্ক হবার প্রয়োজন আছে।
  • অব্যবস্থাপনার কারণে, কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অযোগ্যতা-অদূরদর্শিতার কারণে গণমাধ্যমে একটা অরাজক পরিস্থিতি বিরাজমান। এর দায় পুরোটাই রাজনীতিকদের। তারা তাৎক্ষণিক লাভটা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে অনেক ক্ষেত্রে আফসোস করেছেন। সুযোগ পেয়েও শেখার বা শোধরাবার চেষ্টা করেননি।
  • এটা স্পষ্ট, ইতোমধ্যে অরাজক পরিস্থিতির সুবিধাভোগীরা সংখ্যায় অন্তত মূলধারার সংবাদকর্মীদের ছাড়িয়ে গেছেন। সততা এবং অঙ্গীকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে একটা হতাশা আছে বলে মনে হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে , ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় এই রকম ভুয়া এবং মিথ্যা গুজব রটিয়ে -কক্সবাজারের রামু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছির নগরে যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতটি সংগঠিত হয়েছে -তাতে এক অচেনা বাংলাদেশের ছবি আমরা দেখেছি এবং অস্বীকার করবার উপায় নেই -আমরা দেখেছি , রাষ্ট্রযন্ত্রের নীরবতা তার মাত্রা ও লিমিট । সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে , ধর্মকে ব্যবহার করে -এই জাতীয় খবর পরিবেশন এবং পরবর্তীতে সৃষ্ট ভয়াবহতায় – আমরা ফাইনালি দেখেছি বিপন্ন এক বাংলাদেশ।

বিটিআরসি তথ্য মোতাবেক , সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লক্ষ । বলা হয়ে থাকে,  বিশ্বজুড়েই অনলাইন পাঠক মূলত এক আজব চিড়িয়ার নাম, যারা সাধারণ পড়ুয়াদের মত ধীর স্থির নন । চড়ুই পাখির মত চঞ্চল এবং ভীষণ অস্থির তাদের প্রকৃতি । কেউ অনলাইনে শুধু বড় অক্ষর, মানে শুধু শিরোনামটুকুই পড়তে পারেন কিংবা চান, কেউ খোঁজেন খবরের সাথে থাকা শুধু ছবি । শুরুতে লিখেছিলাম -'নাসা ওয়ার্কশপ মিস্‌ করলেন , ডিজিটাল মানব'। এই  শিরোনামটি দ্বারা প্রতীয়মান হয় -এটি মার্কিন নাসা এবং রবোটিক মানব সম্পর্কিত কোন মারাত্মক নিউজ, আদতে ঘটনা যা নয়। সংবাদের সাথে সম্পর্কহীন শিরোনাম বা ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশে -উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই কর্মে নিয়োজিত আছে একটি মহল। আমাদের এখন স্বীকার করতেই হয় -একদা দাবি আদায়ে, লড়াই সংগ্রামের প্রধান মাঠ ছিল রাজপথ। সেই রাজপথে শ্লোগান , মিছিল মিটিং এখন একপ্রকার নাই বললেই চলে । বদৌলতে অধিক জনপ্রিয়  ফেসবুক মাঠ -যা এখন লড়াই সংগ্রামের রাজপথ – এখানেই চলে শ্লোগানে শ্লোগান। সরকারের দমন পীড়নে ভীত সন্ত্রস্ত ফাইটারগণ -উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে -থাকেন ফেসবুকের পাতায় পাতায় । ফলত সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ন্ত্রিত এই ফেসবুক মাঠ'কেই  বেছে নিয়েছেন তারা , যারা  মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং জনমনে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা উৎপাদনের প্রধান কারিগর। এই পদ্ধতিতে চাঁদ ও মঙ্গলে যেয়ে ফটোসপ নায়কেরা আমাদেরকে দেখাও দিয়েছেন । তাই দিন শেষে আমাদের এই কথাটিও স্বীকার করতে হয় -মুক্ত মত প্রকাশের মুক্ত সুবিধাটির সুফল ,  আল্টিমেটলি সুনাগরিক ভোগ করতে পারেন নাই।

তাই একটা কিছু লিখে দিলে, তা অবশ্যই  নাগরিক সাংবাদিকতা হয়ে যায় না । ভূয়া ছবি ও সংবাদ দ্বারা মিথ্যাকে সত্য করবার এই সকল  ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বরং নাগরিক সাংবাদিকের এখন অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

ব্লগ বিডিনিউজ২৪.কমনাগরিক সাংবাদিকতা

ব্লগ বিডিনিউজ২৪.কম , দেশের প্রথম অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউজ২৪.কম-এর ব্লগ প্ল্যাটফর্ম । এই ব্লগ'টি ওপেন করলেই দেখা যাবে ব্লগ লোগো'তে লেখা আছে 'নাগরিক সাংবাদিকতা ভিত্তিক ব্লগের পথিকৃৎ' এবং অনলাইনে এর কোন লিঙ্ক,  ক্লিক করার আগেই দেখতে পাওয়া যাবে ইংরেজিতে লেখা 'পাইওনিয়ার ব্লগ ফর সিটিজেন জার্নালিজম ইন বাংলাদেশ'।

The concept of citizen journalism is based upon public citizens "playing an active role in the process of collecting, reporting, analyzing, and disseminating news and information"-খবর সংগ্রহ , রিপোর্টিং , বিশ্লেষণ এবং  সংবাদ প্রচারে আম-নাগরিকের সক্রিয় অংশ গ্রহণের নাম নাগরিক সাংবাদিকতা।

  • এক বছর আগে আমরা যখন আমাদের বাংলা ব্লগ নতুন করে শুরু করেছিলাম তখন ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই ব্লগ অন্য আর পাঁচটি ব্লগের মত হবেনা। এখানে ব্লগাররা শুধুই তাদের মতামত দেবেন না, শুধুই অন্য কোন ঘটনা, কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন না; তারা তথ্যও দেবেন। তারাও একধরণের সাংবাদিকতা করবেন।
  • এখানে দায়িত্বশীল হতে হবে দু'পক্ষকেই- যারা নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে তথ্য দেবেন এবং সেইসাথে যারা (moderators) এ প্রান্ত থেকে আরেক জোড়া চোখ দিয়ে তা যাচাই করে দেখবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দায়িত্বশীল আচরণ করতে ব্যর্থ হলে মাশুল গুনতে হবে সবাইকে। আইন বা বিধিবিধানের বিষয়টি তখনই সামনে আসে যখন স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়। 'নাগরিক সাংবাদিকতা, দায়িত্বশীলতা'

অর্থাৎ ব্লগ বিডিনিউজ২৪.কম, নাগরিক সাংবাদিকতা তথা সিটিজেন জার্নালিজমকে  ব্লগিং এর প্রধানতম ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করেছে। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এটাও বলতে পারি  নাগরিক 'ব্লগিং' মানে – নাগরিকের নিতান্ত ব্যক্তিগত কথন , সাধারণ আলাচারিতা , নিজের বা অন্য ব্লগারদের  উদ্দেশ্যে কোন বন্দনা-সংগীত রচনা যেমন নয় , তেমনি কোন ব্লগার বিরুদ্ধে কুৎসা বা বিদ্বেষ রচনাও নয় । অর্থাৎ কোন  ব্লগার কী খেয়েছেন, তিনি প্রাতঃক্রিয়া করেছেন কিনা -এই তথ্যসমূহ প্রকাশ এর অন্তর্ভুক্ত নয় । এটি নাগরিক ব্লগারদের এমন একটি ক্লাব -যেখানে ব্লগারদের পরস্পর মিথস্ক্রিয়ার প্রধান ইস্যু ব্লগারের ব্লগিং,  সেই সম্পর্কিত মুক্ত আলোচনা এবং তথ্য সমূহের বিশ্লেষণ । দেশের প্রচলিত অন্য ব্লগগুলোতে, লিখে দিলেই তা ব্লগিং হয়ে যায়, যতক্ষণ না কেউ তাতে ফ্ল্যাগ মেরে দেয়। কিন্তু ব্লগ বিডিনিউজ২৪.কম বিশেষায়িত ব্লগ যা মূলত একটি  মডারেটেড ব্লগ । এখানে মুক্তমত প্রকাশ স্বাধীনতার বিষয়টি মডারেটর দ্বারা সংরক্ষিত, সংবাদ সত্যতা এবং তথ্য জনিত ত্রুটির কারণে কোন ক্যাঁচাল বা ঝুঁকির দায় কর্ত্তৃপক্ষ নেবে না, কথাটি পানির মত পরিষ্কার।

ব্যক্তিগত ভাবে আমিও মনে করি ,  মডারেটর দ্বারা চালিত ব্লগে -মত প্রকাশে ব্লগারের ঝুঁকি কম।  এই বিষয়টিকে আমি পজেটিভ ভাবেই দেখতে চাই। সাথে  এটাও স্বীকার করি, ফেসবুকের সাথে ব্লগকে গুলিয়ে ফেলার প্রবণতাও এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। ফেসবুকে , একটা কিছু যা মনে আসে লিখে দিলেই তা পোস্ট , সেখানে আছে প্রাইভেসী সেটিং ও নানাবিধ অপশন সুবিধা । কিন্তু বর্তমানে বিডি ব্লগে লেখা পাব্লিশড হয়ে যাওয়ার পর সেটি আর ব্লগারের সম্পত্তি নয় , তাই যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করে ব্লগিং করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্য কর্তব্য । মানসম্পন্ন ভাষা ও শুদ্ধ বানান রীতি মাথায় রেখে ব্লগাররা লিখবেন এটিও একটি মিনিমাম প্রত্যাশা। লেখায় ভুলের আধিক্য আপনার ভালো লেখাটিকেও খারাপ করে দেয় এবং তাতে ব্লগবিডি'র পরিচ্ছন্ন আঙ্গিনাটি দূষিত হয় দিন শেষে । ব্লগারের ব্লগিং ফালতু প্যাচাল নয় , তার প্রতিটি লেখায় কিছু না কিছু মেরিট অবশ্যই থাকা চাই।  প্রতিনিয়ত লিখে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয় – কিন্তু বেলা শেষে সেই লেখায়  সাধারণ পাঠক , ব্লগাররা কিছু কী পায় ? না তা শুধু ব্লগারের পোস্ট সংখ্যাই বাড়ায় ? সেটিও ভাবার বিষয় । সংবাদপত্রে সাধারণত সংবাদ দাতার নাম উল্লেখ থাকে না , কিন্তু ব্লগে একজন ব্লগারকে সবাই নামে এবং চেহারায় চেনেন -এটি ব্লগারের একটি অন্যতম প্রাপ্তি । বিডিনিউজ২৪.কম দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন , যেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোয়ালিটি পাঠকের উপস্থিতি পাওয়া যায় । যেহেতু ব্লগে লেখালেখি'র সাথে অর্থ উপার্জনের কোন সম্পর্ক নেই , বরং অনেক ক্ষেত্রে ব্লগারের অর্থ দণ্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে । তাই আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠক যদি আগ্রহী না হয়ে উঠেন , তাহলে পুরো  পরিশ্রম'টাই বৃথা হয়ে যায় । তাই মনে করি , আমাদের এমনটা লেখা উচিত, যাতে পাঠকই বাত্তি লাগায়ে  আমাদের খুঁজে নেয় । আমাদের লেখাটি অধিক বার পঠিত হলে , আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপ্তি লাভ হয় , আমরা খুশিতে আত্মহারা হই। কিন্তু এটি মর্মান্তিক , হৃদয় বিদারক এবং ভীষণ গোলমেলে এক ব্যাপার ! বিডি ব্লগে পঠিত হয়েছে এক লক্ষ বা তার কাছাকাছি -এমন বেশ কিছু পোস্ট আছে, আবার এই পোস্টের চেয়েও অধিক মানসম্পন্ন দুর্দান্ত কিছু পোস্ট -পড়ে আছে অনাদরে এবং অবহেলায় -যার পঠিত সংখ্যা হয়তো দুইশ প্লাস মাইনাস ।

তাই 'অধিক পঠিত' হইলে উত্তেজনায় বরং আপাদমস্তক কাঁপিতে চাই  , কিন্তু 'কম পঠিত' হইলে নজ্জাবতী'র ন্যায় নুইয়া পড়িতে নাহি চাই।

প্রস্তাবনাঃ

ব্লগের নির্বাচিত 'পোস্ট সমূহ' লেখা 'সাব হেডার-এ অন্তত তিনটি পোস্ট নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিবর্তিত হওয়া প্রয়োজন এবং  ছবি সম্বলিত ফিচার পোস্টের 'মূল হেডার' টিতেও একের অধিক পোস্ট প্রদর্শিত হওয়া উচিত, তাতে ফিচার এবং নির্বাচিত পোস্ট গুলোর মবিলিটি বাড়বে, মনে করি। প্রকাশের পর পোস্ট সম্পাদনার অপশনটি বর্তমানে বন্ধ, এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্লগ কর্ত্তৃপক্ষের নীরবতা'র চাইতে সুস্পষ্ট ঘোষণায় ব্লগারগণের এখন আর আশাহত হবার কিছু আছে বলে মনে করি না। সেটা তারা প্রত্যাশাও করেন, ব্লগ টিম ব্লগারের সহযোগী , প্রতিপক্ষ নন।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা , শুভ হোক ২০১৭

দেশে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য ব্লগে -ব্লগিং দেখেছি যতটা , তার অধিক দেখেছি কাদা  ছোঁড়াছুড়ি । দেখেছি তথায় -অনেক ছোট বড় দল এবং উপদলের সমাহার ।  ব্লগিং ছাড়াও দেখেছি একে অন্যের বিষেদাগার উৎসব উদযাপন। ব্লগ বিডিনিউজে কতটুকু নাগরিক ব্লগিং হয়েছে তা বলা কঠিন।  কিন্তু এই কথাটি বলা সহজ, এখানে ব্লগাররা অবশ্যই সুনাগরিক। নিজ পরিবারে নিতান্ত আপনজন দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থাতেও আপনার জীবনে স্টার-জলসা'র নাটক ঘটে যেতে পারে যে কোন সময়, কিন্তু কেন জানি মনে হয় -এখানে ব্লগারদের মধ্যে পরস্পর বোঝাপড়ায় এই সম্ভাবনা একদম জিরো ।

তথ্য, সূত্র ও ছবিঃ ইন্টারনেট  ও উইকিপিডিয়া