মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী একটি ভ্যান রিক্সায় বসে আছেন -কোলে বসা তাঁর নাতি , সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্য । তিনি উদযাপন করছেন ভ্রমণ , অবলোকন করছেন পারিপার্শ্বিক , রোমন্থন করছেন তাঁর হারানো শৈশব স্মৃতিময় দিনগুলো । গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া ঘটনা স্থল । এই ছবি দেখে আমজনতা – কেউ উচ্ছ্বসিত, কেউ উদ্বেলিত, কেউ হতাশ, কেউ আশাবাদী, কেউ প্রতিবাদী, কেউ খুশি , কেউ অখুশি , কেউ দুর্বিনীত, কেউ নির্লিপ্ত , কেউ বললে ঢং , কেউ চড়ালে রং ।
রাষ্ট্রের প্রজা সাধারণ ,সদা সর্বদা প্রজাই থাকেন – তুলনায় প্রজা সাধারণ , রাজার নখেরও যোগ্য নন। গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র , একনায়কতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রতন্ত্রে – যিনি রাজা তথা শাসক , তার উদ্দেশ্যে আমজনতার সম্মুখ বন্দনা গীত কিংবা পশ্চাৎ নিন্দা গীত গাইবার ইতিহাসটি এই বাংলায় সুপ্রাচীন এবং এটিই প্রচলিত রীতি। রাজা , প্রজাগণের বন্দনায় আপ্লুত হন আর প্রজা গাইতে পেরেই নিজেকে ধন্য মনে করেন। ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপ্রধানদের দলীয় আমজনতারা মূলত 'অতিমানব' হিসাবে ট্রিট দেন । তারা ভাব প্রকাশ করতে চান -রাষ্ট্র শাসক , মোটেই হেজি পেজি কোন আম আদমি নন – তিনিই রাষ্ট্রের মূল মালিক !
তিনি রাস্তায় নামার সাথে সাথেই, হুইসেলে হুইসেলে ক্লান্ত হয়ে যাবে বাঁশী , শূন্য হয়ে যাবে রাজপথ । তিনি অর্ডারও করবেন না শুধু ইশারায় দেবেন সাড়া- তাতেই সমস্ত নগরী অন্ধকারে আক্রান্ত হবে অথবা নিকষ কালো অন্ধকারের নগর -আলোয় ঝলমলিয়ে উঠবে আচমকা অকস্মাৎ ।
তা এই যখন -আমজনতার মনস্তাত্ত্বিক কন্ডিশন , তখন মহামান্য রাষ্ট্রপ্রধান ভ্যান রিক্সায় চড়ে বসলে -তারা ব্যকুল এবং দিশেহারা হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক! এবং হল সেটাই -এইরকম মমতাময়ী বুবু , মা, খালা , নানী কিংবা দাদী তারা ইতোপূর্বে এই বংগদেশে কভু দেখেছেন , মনে করতে পারলেন না সেই ইতিহাস। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মহলে যৌক্তিক কারণেই এই ভ্যান-ভ্রমণ দ্বারা তাদের কোন তৃপ্তি বা সুখ লাভ হল না , তারা বরং রাগান্বিত হয়ে ম্রিয়মাণ হলেন – বিমর্ষ হলেন অবশেষে । ক্রমে ক্রমে বার্তা রটে গেলে, ভাইরাল হল সেই ছবি। রাষ্ট্রপ্রধানের দিন যাপনের ছোট একটি ক্লিক – যা ছিল ঘটনা , হয়ে গেল তা কাহানী ! সংশ্লিষ্ট প্রজাদের লাইক আর শেয়ারে শেয়ারে – অল্প স্বল্প গল্প -হয়ে গেল রূপকথার এক গল্প ! অতঃপর যথানিয়মে নিউটন তৃতীয় সূত্রানুযায়ী – বিপক্ষীয় শক্তি নিজ নিজ উঠানে , খুলে বসলেন বিষেদাগারের দোকান । দেশের অপরাপর কোন কোন রাষ্ট্র নায়কগণ -অলরেডি এই জাতীয় 'মাটি ও মানুষ' কর্মকান্ডে – আরও আগেই অংশ গ্রহণ করে ফেলেছিলেন -সেই তথ্য উন্মোচিত করার কর্মে নিয়োজিত হলেন কতিপয়।
আতাতায়ী'র গুলিতে নিহত হলেন তিনি । স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর রাজনীতির শুরু । হয়েছিলেন দেশের প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী । দুই সন্তানের মা ছিলেন তিনি , এক সন্তানকে ক'দিন আগেই চিরকালের জন্য কবরে ঘুম পাড়িয়ে এখন তিনি একা এবং সুস্থ পদচারনায় সক্ষম নন । বেঁচে আছে তাঁর একমাত্র যে সন্তানটি -যার কথায় সমগ্র দেশ উঠত বসতো একদিন , সেই প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী রাজপুত্তুরটি এখন কেইস কামারী খেয়ে দিন যাপন করছে দেশের বাইরে । তাই সেই সন্তানকে আদরে জড়িয়ে ধরে বুকে -কষ্টের জমানো কিছু পাথর গলাবেন তিনি – না আছে সেটি করবার কোন উপায়।
বিদীর্ণ হল সবার বুক , নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল স্ত্রী সন্তান নিকট আত্মীয় – এবং মৃত্যু হয়েছিল পিতা'র -যিনি স্বাধীন করেছিলেন দেশ। দুই বোন সেদিন ছিলেন না সেখানে , তাই বেঁচে গেছিলেন , কিন্তু মুহূর্তেই সব হারিয়ে জানলেন- জারী হয়ে গেছে দেশে ফেরার নিষেধাজ্ঞা । দেশ থেকে নির্বাসনে থাকলেন বহুদিন। তারপর দেশে ফিরে নিয়োজিত হলেন পুনরুদ্ধারে । একদিন গ্রেনেড আঘাতে তাঁর নিজেরও মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল প্রায় , মৃত্যু হয়েছিল সাথিদের , তিনি আঘাত প্রাপ্ত হয়েও বেঁচে গেলেন স্রষ্টার অসীম কৃপায় -তিনি এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
স্বপ্নের শৈশব আর ফেলে আসা সেই সব দুরন্ত দিন , এসব পালনের অধিকার তবে কী শুধুই আমজনতার ? রাষ্ট্র নায়কের জীবন অতি মহান , তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হলে -হতাশ হয় কী আমজনতা ? তাহলে কেন আমজনতা, রাষ্ট্র নায়কের ভ্যান যাত্রায় দিশেহারা হয়ে- মুগ্ধ আর ক্ষুব্ধ হয় -বলতে কী পারেন কেউ?
ওহে মহামান্য আমআদমী ভাইয়েরা আমার ! বলি মখা আলমগীর সাহেব শরীরের নিম্ন পশ্চাৎ-দেশে যে ক'টা গরম ডিম নিছিলেন একদা , সমান সংখ্যক গরম ডিম ঊর্ধ্বাংশে অবস্থিত তোমার নিজ মুখে ,আজ পর্যন্ত খেয়ে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলে কী তুমি ? এই বৃদ্ধ বয়সেও আলমগীর সাহেব দিব্যি রাজনীতি করেই খাচ্ছেন। আর মির্জা ফখরুল সাহেব , আজ পর্যন্ত যে কবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন -তত সংখ্যক জন্মদিন কী এসেছিল তোমার জীবনে ? কোর্ট হাজিরা বাদ দেও ভায়া, তার আগেই – পুলিশ রিমান্ডে তোমার বাবার নাম জানতে চান যদি , জানি তাতেই তোমার পেশাব হয়ে যাওয়ার কথা ! মির্জা ফখরুল এখনও একাই কাঁধে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন , তেনার সঙ্গী শুধুএকখানা মাইক। মহান আমজনতা, ধরে নিলাম -নেতারা সুখে খান দান ঘুমান , আর ধরে নিলাম -তুমি না খেয়ে শুকিয়ে মরতে বসেছ – তা নেতাদের জীবনের যাবতীয় এই সব পেরেশানি সমূহ – তার হাজার ভাগের এক ভাগ দিলে- কাঁধে সইবে কী সে ওজন ?
কালের পরিক্রমায় হোমোজিনিয়াস না হয়েও যিনি হয়ে গেছিলেন লেজে হোমো । আমজনতা তুমি বলবে- তিনি তো এখন হাতে চুড়ি পিন্দা বইসা আছেন, তেনার কথা আর কী কমু -তিনি না ঘরকা না ঘাটকা ! কিন্তু এই ৮৭ বছর বয়সেও , জেনে রাখো – তিনি নিয়ম করে জিম করেন -দুই বেলা। আর তুমি তো মাল -এই ছেচল্লিশেই রদ্দিমাল হয়ে এখন আছো ভাংগারী দোকানে চালানের অপেক্ষায় । তাই বলছিলাম, একটু আওয়াজ দিয়ে চিক্কুর মারার আগে – এসব কিছুও একবার ভেবে দেখিও -তারপরই না হয় লম্ফ দিয়া পথ চলিও , ভায়া।
"রাষ্ট্রপতি হবার প্রথম দিন -একটি ডিম পোচ খেতে গিয়ে পেলাম , ডিমের ওয়ান থার্ড খাওয়া – মানে ডাক্তার আগে খেয়ে পরীক্ষা করেছেন -খেয়ে যদি ডাক্তার মারা না গিয়ে থাকেন তাহলে সেই ডিম পোচ আমি এখন খেতে পারি। খেয়ে মরব এই স্বাধীনতা টুকুও আমার নেই । দরজা খোলা রেখে ঘুমাবো সেই সুযোগও এখানে বন্ধ , যদি ঘুমের মধ্যেই মরে যাই ! সেটা হবে রাষ্ট্রের জন্য আরেক বিপদ ! সকাল বেলা স্ত্রীকে সিস্টার ইনসুলিন দিচ্ছিলেন , জানলাম – প্রতিটির দাম নয়শ টাকা , একটিতে যাবে দুই দিন । সাথে আছে আরও অনেক ওষুধ -সব মিলে দিন প্রতি ,আমার স্ত্রীর পেছনেই ওষুধ খরচ প্রায় একহাজার টাকা । এখন রাষ্ট্রপতি তাই আছে স্ত্রী ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা , কিন্তু পরে যখন আমি আর রাষ্ট্রপতি থাকবো না -তখন কে এই খরচ দেবে? এই জিজ্ঞাসার জবাবে স্ত্রী বলেছিলেন – কেন তুমি দিবা ? আচ্ছা আমি বিয়ে করেছি ভাত কাপড়ের জন্য , বলেন তো আপনেরা স্ত্রী'র ইনসুলিনের দায়িত্ব কী আমার? হায়রে প্রেসিডেন্টের জীবন ! – মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
পাবলিক , কল্পনার মানুষটিকেই খুঁজে বেড়ায় ,কল্পনার মানুষটিকেই দেখতে চায় -তাই অরিজিনাল মানুষটি কখনও কখনও হেরে যায় ডুপ্লিক্যাট মানুষটির কাছে। আর ক্ষমতাহীন অক্ষম মানুষকে মনে রাখে না ইতিহাস। তাই নিতান্ত ব্যক্তিগত দুঃখবোধ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি বলেছিলেন –
"আমি হাঁটি বর্ষায় , অশ্রু যেন কেউ টের না পায় , আর আমি আয়নায় দেখি মুখ -যখন হাসি যখন কাঁদি -শুধু আয়নাই দেখায় ঠিক মুখ"
ছবিঃ ইন্টারনেট