ঘটনাবহুল ঢাকা শহরে ঘটনা বা দুর্ঘটনা

ভাস্কর
Published : 2 July 2017, 09:53 AM
Updated : 2 July 2017, 09:53 AM

ঘটনাবহুল ঢাকা শহরে ঘটনা বা দুর্ঘটনা কোনোটারই অন্ত নাই। যার জীবনে ঘটে সে বুঝে কতটা বেদনাদায়ক। ১৯৯৮ সালে ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে করে বাবা তার নতুন কর্মস্থল মাগুরা জেলায় যাবে, সাথে তার একটা রঙিন টিভি। যথারীতি একটা হলুদ রঙের টেম্পোতে করে (তখন ঢাকা শহরে বর্তমানের সিএনজি পাওয়া যেত না, যেত হলুদ টেম্পো) গাবতলী আসা মাত্রই দুজন টিভি বাক্স  আঁকড়ে ধরলো। আমি তখন টিভিটার পাশে পাহারায় দাঁড়িয়ে আছি। আমি বললাম, ভাই কী ব্যাপার? কী হয়েছে? তারা বললো, কথা কম বলেন, দুইশ টাকা দেন, না হলে এই টিভি এখান থেকে  নিতে দেব না। আমি বললাম, আমার টিভি আমি নিতে পারবো না এটা কেমন কথা? ওনারা আরো খেপে গিয়ে বললো, ইটা গাবতলীর ট্যাক্স, আপনাকে দিতেই হবে। আমি তখন ঘাবড়ে গেলাম। ট্যাক্স? এটা আবার কী?

এর মধ্যে বাবা অটোরিক্সার ভাড়া মিটিয়ে এক পুলিশের সার্জেন্টকে বললো যে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, আর মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়ে স্যার স্যার শুরু হয়ে গেলো।

২০১৪ সালের মার্চ মাস সদ্য বিয়ে করা বৌকে নিয়ে হানিফ পরিবহন থেকে নামার পর গাড়ির বাক্স  থেকে একটা ছোট মাইক্রোভেন ওভেন হেলপার বের করে দেয়ার সাথে সাথে সেই পুরাতন রূপের  ভদ্রলোকেরা এসে হাজির। তাদের দাবি এবার ৫০০ টাকা। এবারও তারা যেতে দিবে না।

আমার ১৯৯৮ সালের কথা মনে পড়ে গেলো। বাবা তখন সরকারি অফিসার ছিলেন। তাই তিনি রেহাই পেয়েছিলেন। আমি তো আর সরকারি চাকরি করি না। আমার মতো দেশের প্রায় ৯০% লোক সরকারি চাকরি করে না। আমি আরো ভাবলাম সেই সময়ের ২০০ টাকা এতদিনে ১০,০০০ টাকা হওয়ার কথা। যা হোক এটা আমার কাছে অন্যায় মনে হয়েছে। তাই তাকে বললাম তোমরা প্রতিদিন মানুষকে এভাবে হয়রানি করো কেন? তোমাদের এভাবে টাকা আদায় করার অধিকার কে দিয়েছে? আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো। সে নিতে রাজি নয় আবার আমাকে যেতেও দিচ্ছে না। ওদিকে আমার বৌয়ের কাছে আমার প্রেস্টিজ চলে গেল। হয়তো তিনি ভাবছেন আমি অনেক কিপ্টা। পরে অবশ্য জেনেছি তার বাবাও বহুবার এইভাবে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তো আমি টাকা দিতে না চাওয়াটা তার কাছে কিপ্টামির নামান্তর।

আমি উপায়ন্তর না পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশকে জানিয়েছিলাম। তিনিও আমাকে হেনস্থা থেকে রক্ষা করেনি। আমাকে ৫০০ টাকাই দিতে হয়েছিল। জানি না রশিদ ছাড়া ট্যাক্স আদায় কতটা যৌক্তিক? তার নির্দিষ্ট তালিকা থাকা উচিত। তা আদৌ আছে কি না?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ঢাকা আসতে ও যেতে  বহুবার অন্তত কয়েকশো মানুষকে এভাবে নাজেহাল হতে দেখেছি এই বিখ্যাত গাবতলীতে। আমি ঢাকা থাকি তা প্রায় ১৯ বছর হতে চললো। আজও আমার মনে প্রশ্ন জাগে এই হয়রানির শেষ কোথায়? বা গাবতলী টার্মিনালের ট্যাক্স আদায়ের  কোনো সরকারি ভিত্তি আছে কি? বর্তমানের দৃশ্যমান সফল মেয়র অনেক যুগপোযোগী কাজ করেছেন। যা তাকে অনেক মানুষের সম্মানিও ব্যক্তিত্ব আসনে উন্নীত করেছে।  জানিনা তিনি এই বিষয়টার সংস্কার করতে পেরেছেন কিনা?