শফি হুজুরের হেফাজত জামাত-শিবিরের ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 5 May 2015, 07:14 PM
Updated : 5 May 2015, 07:14 PM

৫মে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অন্যতম নারকীয় দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে সমগ্র ঢাকার শহর পরিনত হয়েছিল এক নিঃস্তব্ধ নগরিতে । আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষ মদদে হঠাৎ আবিস্কৃত ইসলামিক শক্তি তথাকথিত হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠন দিনের আলোয়ে ধ্বংস লীলায় মেতে উঠেছিল সমগ্র ঢাকার শহরে যেমনটি করেছিল বর্বর পাকিরা ২৫শে মার্চের কালো রাতে। ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে সাধারন ব্যবসায়ি, রিক্সচালক, পুলিশ সাংবাদিক, মসজিদ, কোরান শরীফ কিছুই সেদিন রক্ষা পায়নি তথা কথিত হেফাজতে ইসলাম নামক উগ্র সন্ত্রাসিদের হাত থেকে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে কেন ও কার স্বার্থে সেদিন তথাকথিত ইসলামি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এ ধরনের নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ছিল? হঠাৎ করে কেনই বা তারা এতোটা হিংস্র ও আক্রমনাত্বক হয়ে পড়লো? আর বর্তমানে কেনই বা এই তথা কথিত সংগঠনটি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে? আমদের মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় এদেশিয় কিছু মানুষ নামক জানোয়ার পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল। আর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয় যা ২০০৯ সালে কিছুটা সংশোধন করা হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত এদেশিয় দালালদের বিচারের জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক বিশেষ আদালত গঠন করা হয় যা 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল' নামে পরিচিত।

এই আদালত ২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতনসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সংগঠিত আরো কিছু অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার)-কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর ৫ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু এতো বড় সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে যারা মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগন তথা আমাদের নতুন প্রজন্ম । তাই তারা শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। তখন সমগ্র জাতির কাছ থেকে কাদের মোল্লার সাজা মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠে । এমনি কি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী  বলেছিলেন " কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে " ।

এই আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শাহবাগ মোড় বা শাহবাগ চত্বরে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষের সমাবেশের কারণে এই চত্বরকে অনেকে প্রজন্ম চত্বর বলে ডেকেছেন। আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা শাহবাগে এই আন্দোলন শুরু করলেও খুব দ্রুতই এই আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, সাংসদ, মন্ত্রী ও সেলিব্রিটিরাও সংহতি প্রকাশ করে। এমন কি শাহবাগের আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায় ও অস্ট্রেলিয়াতেও আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রবাসীরা এই আন্দোনলের সাথে একাত্বতা জানায়।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগন "শাহবাগ চত্বর" এর আদলে একত্রিত হয়। কিন্তু জামায়াত এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে এবং তাদের আটককৃত ব্যক্তির তালিকা থেকে প্রমাণিত হয়। প্রথমে যে ৯ জনের বিচার করা হয় তাদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। তাই জামাত -শিবির তাদের নেতাদের রক্ষরা জন্য শাহবাগ আন্দোলনকে বানচাল করতে মরিয়া হয়ে উঠে । তাই তারা শাহবাগ আন্দোলনকে বানচাল করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে । ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই শিবির ও জামায়াত কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগ আসতে থাকা মানুষকে বাঁধা দিতে চেষ্টা করে। রামপুর, মগবাজার এবং মালিবাগে শিবিরকর্মীরা অহিংস আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে। তবে তাদের বাঁধা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু জামাত-শিবির শাহবাগ আন্দোলনকে নৎসাত করতে সেই সাথে আমাদের মাহন মুক্তি যুদ্ধের ঘৃনিত অপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য দেশে ও দেশে বাহিরে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তার ফলশ্রুতিতে জামাত- শিবির অপপ্রচার করতে থাকে যে শাহবাগে যারা একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করছে তারা এদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম ধ্বংশের পায়তারা করছে তারা নাকি সবাই নাস্তিক ।

এমন জামাত-শিবিরের অপপ্রচারে আর্থিক প্ররোরচনায় আমাদের দেশের অর্ধ শিক্ষিত আলেম সমাজের কিছু অংশ বিশেষ করে কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম শেষ হয়ে গেল তাই ইসলাম ধর্ম রক্ষার তথা কথিত নাম করে হঠাৎ আর্বিভূত হয় হেফাজতে ইসলাম । তার তারা যে তান্ডব চালিয়েছে ঢাকার শহরে তা কম বেশি সবার ই জানা । হেফাজতে ইসলামের তান্ডবের পর অনেক গোপন রহস্য বের হয়ে এসেছে জাতির সামনে তথা কথিত ঐ সনহগঠনের মাহসচিব নিজে স্বীকার করছেন যে মন্ত্রী হওয়ার লোভে তিনি তৎকালীন বিরোধী জোটের প্ররোরচনায় এই ধ্বংসাত্ব কাজের মাধয়মে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছেন মাত্র । তাই তারা দেশের প্রাণ কেন্দ্র মতিঝিলের মত গুরুত্ব পূর্নস্হান সমাবেশের নাম করে দখলের চেষ্টা করেছিলেন । যদিও সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের করনে তারা দেশের প্রাণ কেন্দ্র মতিঝিলে আস্তান করতে পেরেছিলেন এবং সেখান থেকে তারা তের দফানামের এক ফরমান সরকারের প্রতি জারি করলো । কিন্তু সরকার যখন অনুভব করতে পারলো যে তার ক্ষমতা যায় যায় তখন ই সরকার মহিয়া হয়ে উঠলো মতিঝিল থেকে তথা কথিত হেফাজতে ইসলাম মাতান্তরে জামাত-শিবিরকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য । আর তাই সরকার পুলিশ, র‌্যাব বিজিবি মাধ্যমে ঐ দিন রাতেই তথা কথিত হেফাজতে ইসলাম মাতান্তরে জামাত-শিবির কে মতিঝিলের শাপলা চত্বর বিতাড়িত করতে স্বক্ষম হয় । কিন্তু আজ সেই তথা কথিত হেফাজতে ইসলাম আমির শফি সাহেব বর্তমান সরকরের কাছ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে নিজের পুত্র পরিজনের আখের গুছিয়ে নিশ্চিন্তে কাল যাপন করছেন । যা সত্যি ই হাস্যকর ও লজ্জাজনক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না ।