ভাসছে মানুষ ডুবছে মানবতা!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 19 May 2015, 06:07 PM
Updated : 19 May 2015, 06:07 PM

" রেমিটেন্স " বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের একটি দাম্ভিক শব্দ । " রেমিটেন্স " শব্দের অর্থ সবার ই জানা যে আমাদের দেশের নিরীহ মানুষ গুলি তাদের জীবন ও যৌবন বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর একেক প্রান্তে মাথার ঘাম মাটিতে ঝড়িয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনীময় যে অর্থ নিজ দেশে প্রেণ করছে তাই হলো আমাদের সরকারে সেই অহংকার , দম্ভ " রেমিটেন্স " । কিন্ত যে রেমিটেন্স নিয়ে আমাদের সরকারেরা এত দম্ভ করছেন তারা কি এক বার জানেন বুঝেন বা অনুভব করেন যে কি ভাবে সেই রেমিটেন্স আসছে? আর যারা এই রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তাদের ই বা কি অবস্হ্যা ? এই কথা গুলি এখনে বলতে বাধ্য হলাম এ কারণে যে কিছুদিন যাবৎ বিশ্ব মিডিয়া সবচেয়ে বেশি সরগড়ম হয়েছে সাম্প্রতি কালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় সমুদ্র পথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়া উপকূলে হজারো মৃত্যু পথ যাত্রী বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের করুন অবস্হ্যা নিয়ে । অথচ আমাদের সরকরে কি-না ভূমিকা দেখছি? গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে উদ্ধার হওয়া ৭০০ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা গেছে বর্তমান সভ্যতার ইতিসের সবচেয়ে বড় হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রায় শেষ হয়ে আসা খাবার ও পানীয়র অবশিষ্ট নিয়ে একই নৌযানে অবস্হান করা বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে এ মারামারিতে একটি নৌকাতেই নিহত হন ১০৪ ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত মানুষ। এতো গেল মাত্র একটি নৌযানের ঘটনা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় ও ইন্দোনেশিয়ার সরকারের কাড়াকড়ি ও সেসব দেশের নৌবাহীনির সতর্ক দৃষ্টির কারনে আরো প্রায় দশ থেকে বারো হাজার বা তার ও বেশি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসী নিয়ে এমন আরো অনেক নৌযানে মৃত্যুর যাত্রায় অগ্রসর হচ্ছে ! যদিও দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ভবে সমালোচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া মানব পাচারের ঘটনাটি কিন্ত অতি সম্প্রতি থাইল্যান্ডের সরকারের হাতে গ্রেফতার হওয়া মানব পাচারকারী মাফিয়ার ভাষ্যমতে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর থেকে বের হয়ে আসা বিপুল পরিমান বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে আর তাতে নড়ে চরে বসেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সরকার আর তাতেই প্রকট আকারে প্রকাশ পায় বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার করুন চিত্র । একের পর এক বেরহয়ে আসতে শুরু করে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া শ্রম দসের ভয়াবহ চিত্র সহ বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনা । জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন সংস্হা বর্তমান মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে আন্দামান ও মালাক্কা প্রণালীতে নৌযানে ভাসতে থাকা হাজারো অভিবাসীর জীবন নিয়ে মৌখিক ভাবে খুবই উদ্বিগ্ন । যেমন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে আন্দামান ও মালাক্কা প্রণালীতে নৌযানে ভাসতে থাকা হাজারো অভিবাসীর বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বেশ উদ্বিগ্ন হয়েছে । ওই সব অভিবাসী এবং শরণার্থী বহনকারী নৌযানগুলো প্রবেশে কিছু দেশ বাধা দেওয়ার খবর তার মহাসচিবের কাছে রয়েছে ।
সরকার গুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে করে সাগরে উদ্ধারের বাধ্যবাধকতা যেন নিশ্চিত করা হয় এবং উদ্বাস্তুদের নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যথাযথ আইনে যেন রক্ষা করা হয় । ইন্দোনেশিয়ার সরকার যদিও বলেছিল যে তাদের জলসীমায় যেন কোন ভাবেই এ সকল ভাসমান অভিবাসী বহনকারী নৌযানগুলো প্রবেশ করতে না ডেওয়া হয় তার পর ও তারা অত্যন্ত মানবিক হয়ে গত শুক্রবার প্রায় ৭০০ জন অভিবাসীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে আশ্রয় দিয়েছে । ইতোমধ্যে সাগরে ভাসমান তিনশত অভিবাসীকে জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ফিলিপাইন। এই অভিবাসীরা গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য নৌকায় সমুদ্রপথে পাড়ি জমিয়েছিল। আর তার জন্য ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সরকার ধন্যবাদ পাবার দাবীদার অথচ আজ সারা বিশ্বের মানবতা বাদীরা কেন জানি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন । আর তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা কেন ই বা পালন করবে না। যেখানে বাংলাদেশের হাজারো মানুষ নূন্যতম জীবন যাপনের জন্য জীবন বাজী রেখে বিদেশে যাবার জন্য আন্দামান ও মালাক্কা প্রণালীতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে সেখানে খোদ বাংলাদেশের সরকার ই আজ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন । এ নাগরিকদের প্রতি যেন সরকার বা রাষ্ট্র করো ই কোন দায় বদ্ধতা নেই । আথচ এ সকল মানুষ গুলির ঘাম ঝরানো " রেমিটেন্স " এর দ্বারা ই বর্তমান সরকারের প্রধান মন্ত্রী ও তার আসেপাসের লোক জন দম্ভ করে বলছে ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ । এ সকল মানুষ গুলির ঘাম ঝরানো " রেমিটেন্স " এর স্তুপের উপর দাড়িয়ে সরকার পদ্মা সেতুর মত এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার মত শক্তি ও সহস পেয়েছে । অত্যন্ত কষ্ট হয় আমাদের দেশের দুর্নীতিপরায়ন চাটুকারদের চাটুকারিতা দেখে । টিউলিপ সিদ্দিকীর বৃটিশ পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোটি কোটি টাকা খরচ করে অভিনন্দনের জোয়ার দেখে । বাংলাদেশের প্রতি কি অবদান আছে টিউলিপ সিদ্দিকীর ? কত জন্ম থেকে বিলেতে থেকে দেশে কত টাকা " রেমিটেন্স " পাঠিয়াছেন টিউলিপ সিদ্দিকী বা সজীব ওয়াজেদ জয় বা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বা তাদের পরিবার ? বরং ক্ষমতা ছাড়ার পর ই তাদের বিরুদ্ধে বের হয়ে আসবে কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচারের তথ্য যেমন টি আমরা শুনতে পাই বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া তার পরিবার ও তার আশেপাশের লোক গুলির বিরুদ্ধে ! স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে মাছধরা ট্রলারে করে কেন এই নিরীহ মানুষ গুলির মালয়েশিয়ায় যাত্রা ? বাংলাদেশের ৪১ জেলা থেকে মানুষ পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বেশি। এ সকল এলাকা গুলির কোথাও কোথাও আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এ সকল এলাকা নেই পর্যাপ্ত কর্মসংস্হানের ব্যবস্হ্যা মানুষ গুলি এতই গরীব যে পরিবারের লোকদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগান দেওয়া তাদের জন্য অসম্ভব প্রায় ! যেমন ধরা যাক সাতক্ষীরা বা সুন্দর বন এলাকার জনগোষ্ঠির কথা যে খানে মানুষ গুলির ভাগ্য প্রতিনিয়তই আবদ্ধ কারো না কারো হাতে চিংড়ি চাষে গ্রাস করে নিয়েছে সাধারন মানুষের ভাগ্য তাতে অবশ্য কিছু প্রভাবশালীর ভাগ্য যে প্রষন্ন হচ্ছে না এটা কিন্তু ঠিক নয় । আর অভাগা মানুষ গুলি মানব পাচাকারী দালালদের খপ্পরে পড়ে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ ভেবে ট্রলারে করে বেরিয়ে পড়ছে নতুন স্বপ্নের আশায় নতুন যাত্রায় অজানা সমুদ্র গন্তব্যে । আর মানব পাচারে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্রপথ। যদিও এর সবটাই হচ্ছে সরকার ও তার প্রসাশনের নাকের ডগার উপর দিয়ে তার পর ও সরকার একেবারেই নিরব আর সরকার নিরব না হয়ে বা কি করার আছে বর্তমানে সমুদ্রপথে মানব পাচারের চক্র গুলি সাথে সরকারীদলের বিভিন্ন নেতা কর্মীরা ই জড়িত । বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কক্সবাজারের সরকার দলীয় সাংসদ আব্দুর রহমান বদী ই হলেন মানব পাচারের চক্রের গডফাদার । আর তাই একেক সময় মানব পাচার নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ও সরকারী ভাবে কার্যকরি কোন ব্যবস্হা নেয়া হয় নি মানব পাচার বা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ! এক জরিপে দেখা গত তিন বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে রওনা দিয়েছেন। এর মধ্যে একাধিক ট্রলারডুবির ঘটনায় অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ দেড় হাজারের বেশি মানুষ। যার কোন দিন কোন বিচার হবে বলে আমি কখনো ই মনে করি না । মানব পাচার এটা যদিও কোন নতুন ঘটনা না বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই অহরহ ঘটছে অবৈধ পথে অবৈধ ভাবে মানব পাচারের ঘটনা আর তাতে জীবন যাচ্ছে হাজারো মানুষের কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতি সময়ে অবৈধ মানব পাচারের ঘটনা সর্ব কালের রেকর্ড ভংগকরে এক ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে যা নিয়ে সমগ্র জাতি আজ উৎকন্ঠিত এবং এ ঘটনা আমাদের প্রবাসীদের অস্তিত্ব সংকটে জেলবে বলে বিশ্লেষক গন ধারনা করছেন । তাই আমাদের সরকারের সর্বপ্রথম করণীয় যে অতি দ্রুত সমুদ্রে ভাসমান মৃত্যুর পথ যাত্রী বাংলাদেশিদের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং তাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে পাচারকারী চক্রের সঠিক বিচার করা । আমরা আর কোন মানুষ কে সাগরে না খেয়ে বা খাবারে জন্য মরতে দেখতে চাইনা । আমরা আমাদের মানবতাকে সাগরে আর ডুবতে দিতে চাই না ।