টিআইবি বাংলাদেশের জনগণের দালাল!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 23 Nov 2015, 05:47 PM
Updated : 23 Nov 2015, 05:47 PM

সম্প্রতি সংসদের ওপর প্রণীত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সংসদ অধিবেশনে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বর্তমান সংসদ হচ্ছে পুতুল নাচের নাট্যশালা। সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল নেই বিধায় সংসদের অধিবেশনগুলোতে 'পুতুল নাচের প্রদর্শনী' চলছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) 'পার্লামেন্ট ওয়াচ' শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, সংসদে সরকারি দলের প্রশংসা আর সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী জোটের নিন্দার পরিমাণ অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। বর্তমান দশম সংসদে ১১২ কার্যদিবসে ৭৫০০ বার নিজেদের দলের প্রশংসা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংসদে নেই, তবুও বিএনপির সমালোচনা হয়েছে ৭২৬৮ বার। আলোচনার নির্ধারিত প্রসঙ্গের বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। অথচ শৃঙ্খলা রক্ষায় স্পিকার নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু পাঁচটি অধিবেশনেই কোরাম সংকটের কারণে ৩২ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার টাকা অপচয় হয়েছে এবং ৪৮ ঘণ্টা ৪১ মিনিট সময় অপচয় হয়েছে। অথচ প্রতিটি বিল পাস হতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। সংসদের তথাকথিত বিরোধী দল দায়িত্ব পালন করছে না। সংসদের বিরোধী দল বর্তমান সরকারেরও একটি অংশ। সে কারণে বর্তমান সংসদ হয়ে পড়েছে পুতুল নাচের নাট্যশালা । টিআইবি এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বর্তমান সংসদের সরকার ও বিরোধীদলের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, 'টিআইবির প্রতিবেদন এবং আইএস-এর জঙ্গি কার্যক্রম একই সূত্রে গাঁথা'। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন " টিআইবি বিএনপির অঙ্গসংগঠন "। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য অনুযায়ী, টিআইবি সীমা লঙ্ঘন করে এখতিয়ার-বহির্ভূতভাবে 'রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান' নিয়ে ফেলেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, টিআইবি বিএনপি-জামায়াতের চেয়েও জঘন্য। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা টিআইবিকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছে। তা না হলে টিআইবির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেনসেই সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে টিআইবির অর্থের উৎস ও পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তারা।সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, 'টিআইবি তার প্রভুদের সুতার টানে নাচে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দেশীয় চক্র এ কাজ করছে।' এ আন্তর্জাতিক মহল কারা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে, তারাই আন্তর্জাতিক মহল। যে যাই বলুক সত্য বলার জন্য প্রত্যেক সরকারের ই গালা-গালিও আক্রমনের শিকার হতে হয়ছে টিএইবি ও এর প্রতিনিধিদের। টিআইবির জরিপ প্রতিবেদন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দল গুলি। বিরুদ্ধে গেলেই জরিপ প্রতিবেদনের জন্য টিআইবি কে তুলাধোনা করা হয় আর পক্ষে আসলেই মাথায় নিয়ে নাচা হয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বছর দুর্নীতির শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। তখন ওই দুর্নীতির শীর্ষ অবস্থানকে বিএনপি নির্বাচনী প্রচার-প্রপাগান্ডায় কাজে লাগিয়ে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজেদের জয়ের পথ সুগম করে । যদিও এর যথাক্রমে ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ সালে হ্যাট্রিক সহ ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুর্নীতির শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ । আর বিএনপি আমলের সেই দুর্নীতির চিত্র জাতীর সামনে আতি উৎসাহের সাথে তুলে ধরে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামিলীগ সেই সাথে তারা সেই সময় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পদত্যাগ ও দাবি করেন ।
সেই সময় বিএনপি জামাত জোটের আক্রমন আর গালি থেকে ও রক্ষা পায়নি টিআইবি ও এর প্রতিনিধিরা ওই সময়ে টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন টিআইবিকে সরাসরি আওয়ামী লীগের দালাল বলে আখ্যায়িত করেছিল বিএনপি-জামাত জোটের নেতারা । বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে যাত্রা পর থেকে যতবারই টিআইবির কোনো গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করছে প্রতিবাই ক্ষমতাসীন দল বা জোট তাদের আক্রমন আর গালি গালাজ করে রাজনীতির মাঠ সরগরম রেখে তাদের ব্যর্থতাকে আড়াল করা চেষ্টা করেছেন । বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকলে টিআইবি হয় " আওয়ামীলিগের দালাল " আর আওয়ামী জোট ক্ষমতায় থাকলে টিআইবি হয় " বিএনপির অঙ্গসংগঠন " । সত্যিকার অর্থে টিআইবি ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক জোট বা দল গুলির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরনেই সবসময় ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক জোট বা দল গুলিকে সাহায্য করে আাসছে । সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রোধে কাজ করে টিআইবি সেই সাথে সরকারি সেবা খাত সহ বিভিন্ন সেবা খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা সহ দেশে দুর্নীতিবিরোধী একটি সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলন সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে । তাই বিএনপি বা আওয়ামী রাজনৈতিক জোটের নেতাদের ভাষার টিআইবি কারো দালাল বা কারো অঙ্গসংগঠন হলেও সত্যিকের অর্থে টিআইবি বাংলাদেশের সাধারন জনগনের ই দালালি করে আসছে তাই টিআইবি কোন রাজনৈতিক দলের নয় বাংলাদেশের সাধারন জনগনের দালাল ।