জঙ্গিবাদের তোষণে দ্রোহের রুপ হারাচ্ছে বইমেলা!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 16 Feb 2016, 08:05 PM
Updated : 16 Feb 2016, 08:05 PM

বেশ কয়েক বছর যাবৎ অমর একুশে বই মেলা কোন না কোন ভাবে বিতর্কে পরিনত হচ্ছে । ২০০৪ সালে অধ্যপক হুমায়ুন আজাদকে কোপানের পর থেকে ই বিতর্কের জন্ম এর পর ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ইরানি লেখক আলি দস্তি'র 'বিশতো সেহ সাল' নামে একটি বইয়ের অনুবাদ প্রকাশের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ এবং বইটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল । এর কিছু দিন পর ই ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ উগ্রধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠির চাপাতির হামলায় মেলা প্রাঙ্গণে প্রাণ দিতে হয় বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে সাথে আহত হতে হয় তার স্ত্রী ও বিজ্ঞান লেখক বন্যা আহমেকে । এ হামলার পর থেকেই আমাদের প্রাণের মেলা প্রাণ নিজের দ্রোহের রূপ হারিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠি তোষণের মেলা হিসেবে নতুন রুপ সজ্জিত হয় । এবারের মেলা শুরুর আগেই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান মেলাকে দেখতে চেয়েছে উস্কানিহীন মেলা হিসেবে । আসলে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান উস্কানি বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা কারোই বুঝের বাহিরে নয় তার পর ও তিনি যখন বলেছেন লেখক অভিজিৎ রায় ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনকে স্মরণ তো দূরের কথা তাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না এই মেলায় এর পর থেকে ই ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠি অতি উৎসাহ বোধ করছে ।

এবারে মেলা অর্ধেক না যেতেই ধর্মীয় উগ্রবাদের অপশক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর " ইসলাম বিতর্ক " বইটি নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করে। এই বিতর্কের জের ধরে ই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বই মেলায় বন্ধ করে দেয়া হয় ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল, সেই সাথে গ্রফতার করে হয় বইটির সম্পাদক ও প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিক সহ প্রকাশনীর কর্মকর্তা ফকির তসলিম উদ্দিন কাজল এবং লেখক শামসুল আলম চঞ্চলসহ পাঁচজনকে । পরে তাঁদের তিনজনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় মামলা ও রিমান্ডের ব্যবস্হা করা হয় ৷ সেই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইভেন্ট, গ্রুপ খোলে বইটির সম্পাদক ও প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকের বাসার ঠিকানা, অফিস ঠিকানা, ফোন নম্বর দিয়ে আক্রমণের জন্য উৎসাহিত করেছে তাদের সহযোগিদের । অথচ এই শামসুজ্জোহা মানিক ষাটের দশকের আইয়ুব আন্দোলনের একজন অগ্রভাগের ছাত্রনেতা এবং সমাজ বিশ্লেষক , গবেষক ও বটে ।

এখানে একটি চমৎকার বিষয় হলে শামসুজ্জোহা মানিক সম্পাদিত ও প্রকাশিত " ইসলাম বিতর্ক " বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১০ সালের নভেম্বরে এর পর বইটির অজস্র কপি পাঠকের হাতে চলে ও এই দীর্ঘ সময়ে এটা মোটে ও কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারেনি অথচ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হঠাৎ এবারের বই মেলায় কেন এই বইটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে গেলে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন ? সবচেয়ে মজার ও আতংকের বিষয় হলো পুলিশ বলছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো লেখা থাকতে পারে, এমন সন্দেহ অনুসন্ধানের জন্য ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ ও হয়েছে সম্পাদক ও প্রকাশক সহ অন্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে । আর মেলা পরিচালনা কমিটি বলছেন ''পুলিশ আমাদের বলেছে, ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন বই প্রদর্শিত হচ্ছে ৷ স্টলটি নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ ৷ এ কারণে তাদের স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷" তার অর্থ পুলিশ প্রশাসন মেলা কতৃপক্ষ কেউ ই বইটি পড়েছে বলে আমার মনে হয় না এবং এই বইয়ে কি লেখা আছে তা ও তারা বোধ হয় অবগত নন শুধু মাত্র ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিবাদীদের হুংকারেই প্রশাসন ও মেলা কতৃপক্ষ ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ ও শামসুজ্জোহা মানিক সহ অন্যদের গ্রেফতারের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় । অথচ অভিজিৎ রায় বা তার আগে থেকে শুরু করে ফয়সাল আরেফীন দীপন পর্যন্ত উগ্র ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠির হাতে যত জন খুন হয়েছে আজ পর্যন্ত আইন শৃংখলা রক্ষা বাহীনি কোন খুনের ই ক্লু বের করতে স্বার্থক হয়নি । অথচ অভিযোগের একদিন পরেই পুলিশ কোনো ধরণের তদন্ত, ক্লু ও অনুসন্ধান ছাড়াই বইমেলায় ব-দ্বীপের স্টল বন্ধ ও সম্পাদক ও প্রকাশকে গ্রফতার করে স্বার্থকতার প্রমান দিয়েছে । সরকার ও তার প্রশাসন আজ বিষবৃক্ষ লালন পালনে ব্যস্ত । আজ আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে তার নিজের রুপ হারিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের আগ্রসনের রাষ্ট্রে পরিনত হতে চলছে । সরকার ও তার প্রশাসনের কাছে সবিনয় অনুরোধ লেখক-প্রকাশকদের গ্রেফতার করে নয় যারা লেখক-প্রকাশকদের লেখালেখির জন্য মৃত্যু হুমকি দিচ্ছে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের চেতনার ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে গড়ার স্বার্থে এগিয়ে আসুন ।