মাদককোষেও চুরি!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 15 March 2016, 06:20 PM
Updated : 15 March 2016, 06:20 PM

আমাদের দেশে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি হলো আমাদের রাজকোষ চুরির। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টক শো কোথায় নেই এ আলোচনা? প্রতিদিনই সংবাদপত্রের শিরোনাম ও এই একই ঘটনা। নানা জনের নানা কথা নানা গুজব । আজ ভেবে ছিলাম এ নিয়ে কিছু লেখার হঠাৎ করে মনে পরল অন্য একটি চুরির ঘটনা শেষ পর্যন্ত মত পাল্টে নিলাম । তারপর ভাবলাম ঐ চুরিটা নিয়েই লিখি কারন এটা যে আমাদের সমাজের বাঁচা মরার সমস্যা । তাই রাজকোষ চুরি রেখে মাদককোষ চুরি নিয়েই লিখতে ইচ্ছে হলো ।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অফিসের রক্ষিত ভান্ডার থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ পিস ইয়াবা ও ২ কেজি গাজা চুরি হয়েছে গেছে যার বাজারমূল্য প্রায় সোয়া ৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন স্থানে বছর ধরে অভিযান চালিয়ে এ মাদক জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যা রক্ষিত ছিল টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অফিসে । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে এত মেধা এত কষ্টের পর উদ্ধার হওয়া মাদক অনায়াসে কিভাবে চোরের হাতে চলে গেল ? মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে টেকনাফ অফিস কি তা হলে এতই অরক্ষিত? বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মরণ নেশাই হলো ইয়াবা আর এই ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশের সিংহদ্বারই হলো কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকা । স্বাভাবিক ভাবেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে টেকনাফ এলাকার গুরুত্ব দেশের অন্যান সীমান্ত এলাকার চেয়ে অনেক বেশী । এখানে প্রশ্ন হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অফিস কেন এতটা অরক্ষিত?

এ ঘটনার পর সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবী তারা বিভিন্ন কাজে বাহিরে ছিলেন! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন কার স্বার্থ হাসিলের জন্য সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস অরক্ষিত রেখে বাহিরে অবস্হান করলেন ? কেনই বা উদ্ধার হওয়া ইয়াবা এমন একটি অরক্ষিত অফিস ভবনের সাধারন আলমারিতে রাখা হলো আর কারা ই বা এটা চুরির সাথে জড়িত? দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের বর্তমান সরকার দলীয় এক সাংসদকে ইয়াবা পাচার ও ব্যবসার মূলহোতা হিসেবে নানা সংবাদ মধ্যমে সংবাদ প্রচার করে আসলে ও তার টিকিটি পর্যন্ত ছুতে পারেনি আমাদের প্রশাসন বরং ঐ সাংসদের অত্যাচারে নাকি অতিষ্ট সেখানকার প্রশাসন ।

আমাদের জাতীয় মূল সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতমই হলো মাদক সমস্যা। আমাদের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের একটি বিরাট অংশ মরণ নেশা ইয়াবা সহ নানা মাদক নেশায় আসক্ত । আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে মাদককে নির্মূল করা যে বিভাগের কাজ তা হলো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর । বরাবরই এই অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের নানা সংস্হার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের সাহায্য সহযোগিতা করার এমন কি অনেক ক্ষেত্রে তা প্রমান ও হয়েছে । তার পর ও কোন ভাবেই প্রশাসনের সু-নজর পরছে না এ ক্ষেত্রে । ক্রমানয়েই আমাদের সমাজে বেড়ে চলছে মাদক সেবন ও মাদক ব্যসায়ীর সংখ্যা । আমরা চাইবো সরকার ও প্রশাসন সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অফিসের চুরির ঘটনা ও চুরি হওয়া মাদক উদ্ধারে সক্ষম হবে যা আমাদের সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে ।