মুখোশ পরেই পালিত হউক নববর্ষ!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 9 April 2016, 05:02 AM
Updated : 9 April 2016, 05:02 AM

ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদ নিয়ে কিছু লেখার অভিপ্রায় ছিল না বললেই চলে । দেশের হাজারো সমস্যা থাকতে এ নিয়েই লেখা কেমন জানি বিদঘুটে মনে হয়েছিল । হঠাৎ করে মনে হলো আমাদের ছোট্ট দেশে হাজারো সমস্যার মাঝে ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদ একটি অন্যতম মূল সমস্যা যা আমাদের জাতি সত্ত্বার অস্তিতে হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে । তাই মাঝে মাঝে এ নিয়ে লেখাটা ও জরুরী ।সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুরে জঙ্গি আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে অজ্ঞাত দুই জঙ্গি নিহত ও সেখান থেকে বিপুল গ্রেনেড , বোমা ,গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার নতুন করে মনের ভিতর ভয়ের জন্ম নিয়েছে । সামনে আসছে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ গোয়েন্দাদের ধারন মতে এ সকল গ্রেনেড ও বোমা নাকি পহেলা বৈশাখের বর্ষবরন অনুষ্ঠানে হামলা করা জন্য ই তৈরি ও মওজুদ করা হয়েছিল ।

পৃথিবীর অনেক জাতিরই নিজ নিজ বর্ষপঞ্জী আছে তারা ও নানা ভাবে নিজ নিজ ক্রিস্টি সংস্কৃতি উপর ভিত্তি করে পালন করে তাদের বর্ষ বরণ আনুষ্ঠান ।বেশ কয়েক বছর আগে চায়না ভ্রমনের সময় স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছিল চাইনিজ নববর্ষের অনুষ্ঠান ।সেখানে দেখেছি ওরা কিভাবে বর্ষবরনের অনুষ্ঠানের নানা আয়োজননে ওদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে যা উপোভোগ করার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ছুটে আসে চায়নার বিভিন্ন প্রান্তে । কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের বাংগালীদের বাংলা নববর্ষ বার বার ই হুমকির শিকার হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রজঙ্গিবাদের দ্বারা । শুধু হুমকিরই শিকার নয় আমাদের বাংলা বর্ষবরের অনুষ্ঠান আক্রান্ত ও হয়েছে এ সকল ধর্মীয় উগ্রজঙ্গিবাদের দ্বারা যা আমাদের সবার ই জানা । যেহেতু উগ্রজঙ্গিবাদের কথা টনতে হলো তাই বলতে ই হয় এ সম্পর্কে কিছু কথা । আমাদের দেশে গত দুয়েক বছরে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যার তথা কথিত দায় শিকার করে নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ।

গত নভেম্বরে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস)অনলাইন সাময়িকী 'দাবিক' এ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে । সরকার যদিও বার বারই বলে আসছে বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর কোন অস্তিত্বই নেই হয়তো তাদের আদর্শে বিশ্বাসী কেউ থাকতে পারে। আমাদের দেশে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটা তে আমি যাবো না তবে এটা সত্য যে রসুনের সকল কোষের ই একই গোড়া । তাই ধর্মীয় জঙ্গিদের আদর্শ মতবাদ বা নাম যাই হউক না কেন এদের লক্ষ্য একটা ই ।জামায়াতে ইসলামী, জামাআতুল মুজাহিদীন, আনসার-আল-ইসলাম বা হিযবুত তাহরীর মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য সংগঠনগুলো নানা ভাবে আমাদের দেশে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত এ লক্ষে অর্থ ও শক্তি উভয়েরই যোগানে ব্যস্ত এসব জঙ্গি সংগঠনগুলি ।

জঙ্গিরা তাদের সেই অগাধ অর্থ ও শক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন করে আতংকের জন্ম দিল ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যার মধ্যদিয়ে ।গত ৬ এপ্রিল বুধ বার রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে উগ্রবাদিদের চাপাতি ও বুলেটে খুন হতে হয় ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে । ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ ছিল একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারে পক্ষের সৈনিক ও গণজাগরণ আন্দোলনের কর্মী । ধর্মীয় উগ্রবাদ জঙ্গিবাদীরা দেশে একের পর এক ব্লগার সহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যার মধ্যদিয়ে দেশে নিজের শক্তি ও সমর্থের জানান দিয়ে আমাদের মনের ভিতর ভয়ের সৃষ্টি করছে যা আমাদের ক্রিস্টি ও সংস্কৃতি পালন ও রক্ষার জন্য হুমকি স্বরুপ । আজকে আমি ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা নিয়ে তেমন কিছি বলতে চাই না ব্লগার হত্যা আজ একটি রীতিতে পরিনত হয়ে গেছে প্রসাশন ও সরকারে এ নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই । তবে আমার কাছে যে ঘটনা সবচেয়ে হাস্যকর ও আমাদের সংস্কৃতি জন্য ভয়ের কারণ বলে মনে হয়েছে তা হলো সরকারের এবারে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরন অনুষ্ঠানে মুখোশ পড়া বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ।মুখোশ আমাদের সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যেরই একটি আংশ । অথচ ইসলামিক উগ্রবাদিরা বার বারই মুখোশ ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছিল ।

তাই সরকারের এমন আচরনে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলাবের দেওয়া বিভিন্ন দফা গুলি সরকার ক্রমানয়ে বস্তবায়নের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে । পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ আমাদের বাংলানববর্ষ অতি নিকটেই আমরা চাইবো কোন শকুনের কালো ছায়া যাতে আমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান কে না ছুতে পরে প্রতিটি বাংগালী নিশ্চিন্তে মনের আনন্দ আমাদের প্রাণের নব বর্ষ পালন করতে পারে ।