আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 28 April 2016, 08:23 PM
Updated : 28 April 2016, 08:23 PM

তৃতীয় ধাপেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হলো না। হয়তো ভেবেছিলাম দুই ধাক্কা খাওয়ার পর হয়তো নির্বাচন কমিশন কিছুটা হলেও নড়ে চড়ে বসবে । কিন্তু না, আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্তা ব্যাক্তিরা যে নাকে সরিষার তেল দিয়ে যে নিদ্রায় ডুবে আছে জানিনা কবে বা কিভাবে তারা এই নিদ্র থকে জেগে উঠবে? তাদের এই নিদ্রা যে দেশের কত সাধারন মানুষকে চির নিদ্রায় শায়িত করবে তা কে জানে?

এবারে ইউনিয়ন পরিষদ দেশে প্রথম বারের মত তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় ভিত্তিতে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোট সহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিই এ নির্বাচনে শরীক হয়েছিল যা আমাদের গনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত সুখকর সংবাদ। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতারই সুযোগ পাচ্ছেন না। মামলা হামলার ভয়ে অনেক জায়গাই বিএনপি প্রার্থী সংকটে পরেছে। এতেও কিন্তু নির্বাচনী সহিংসতা মোটেও থেমে থাকেনি বরং পূর্বের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গুলির তুলনায় এবারের নির্বাচন গুলিতে সহিংসতার মাত্রা অনেক বেশি।

এর মূল কারনই রয়েছে বর্তমান ক্ষমতাশীনদের ঘরোয়া কোন্দল। প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদেই আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর বাহিরেও দুই থেকে তিন জন দলীয় বিদ্রোহি প্রার্থী রয়েছে সে কারণেই সহিংসতার মাত্রাটা অনেকাংশেই বেশি।

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে ৩৭টি লাশ দিয়ে আর তৃতীয় দফা নির্বাচন শেষে এ পর্যন্ত লাশের মিছিলে যোগ হতে হয় আরো ৬ জনকে যা নিয়ে নিহতের সংখ্যা ৪৩। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জনমনে একধরনের ভয় আর আতংকের জন্ম হয়েছিল অনেকেরই সংশয় ছিল সুষ্ঠ নির্বাচন ও জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত সেই সংশয় বাস্তবেই পরিণত হয়েছে।

এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ঘরানাদের ধারনা দলীয় প্রতীক থাকার কারনে ছলেবলেকলে কৌশলে যে ভাবেই হউক জয় তাদের নিশ্চিত। এতে নির্বাচনী প্রতীক "নৌকা" পাওয়া জন্য অনেকেই আদা-জল খেয়ে লেগেছিলেন এবং লেগেও আছেন। অনকেই নাকি মোটা অংকের টাকার বিনিময় অন্য রাজনৈতিক দল থেকে অতিথী পাখি হয়ে এসেও দলীয় প্রতীক "নৌকা" হাসিল করে নিয়েছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতা- কর্মীদের মনে ক্ষোপের কারনেই তারা বিদ্রোহ করে দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েই নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে নেমে পরেছেন। আওয়ামীলীগের অন্তঃদ্বন্দের কারনে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরেছেন উভয় সংকটে।

অনেক স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞর ধারণা দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনই নাকি সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ সরকারি দল ও বিরোধী দল কিংবা দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় প্রার্থীর সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ছে। গত ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেশের ২১ জেলার ৬১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যার মধ্যে কতটা কেন্দ্র আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?

সব চেয়ে মজার কথা হলো কোন এক ইউনিয়ন পরিষদের নাকি ভোট পরেছে ১৯৬ শতাংশ । আমাদেরসময় ডট কমের তথ্য মতে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছরি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১২৮ সেখানে নাকি ভোট পড়েছে ৬ হাজার ১৩৫ টি যা মোট ভোটারের ১৯৬ শতাংশ । এখানেই শেষ নয়, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৯ হাজার ৩১০ অথচ সেখানে ভোট পড়েছে ২০ হাজার ৬৯৪ টি যা মোট ভোটারের প্রায় ১০৭ শতাংশ । স্বাভাবিক ভাবে কোন ভোট কেন্দ্রেই ভোটার চেয়ে অধিক ব্যালট পেপার যাওয়ার বা পাওয়ার কথা নয় কিন্ত এ সকল ইউনিয়ন পরিষদের কেন্দ্র গুলিতে হয়তো ভূত এসেই অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের যোগান দিয়েছে!

আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্তা-ব্যক্তিরা ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেই দাবি করে আসছেন? ৫ জানুয়ারি ২০১৪ প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা আনতেই হয়তো সরকার দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা করেছিল। বাস্তবে তা হিতে বিপরিদ হয়ে দাড়িয়েছে। ক্ষমতাশীনদের চিন্তাধারা ছিল মামলা হামলার ভয়ে হয়তো বিএনপির নেতা কর্মীরা এ নির্বাচনে অংশ নিতে তেমন আগ্রহ দেখাবেনা এতে করে নামকয়াস্তে ইউপি নির্বাচনে নিজেদের বিপুল বিজয়ের মধ্যে সরকার যে জনবিচ্ছিন্ন নয় এটা প্রমাণ স্বার্থক হবে। কিন্তু তাদের অয়ামীলীগের এই স্বার্থকতাকে পুরোপুরি ম্লান করে দিতে সক্ষম হয়েছে তাদেরই দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

এই ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সাধারন মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে । বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অবিরাম স্লোগ গেয়ে যাচ্ছেন ২০১৯ এর জাতীয় নির্বাচন ও বর্তমান সরকারের অধিনেই হবে। সাংবিধানিক ভাবে এটাই হওয়ার কথা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয় তার পরও নিজেদের কামড়া-কামড়ির জন্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের যে করুন দশা আমরা উপোভোগ করছি ক্ষমতা পরিবর্তনের ২০১৯ এর জাতীয় নির্বাচন কি হবে এবং কেমন হবে এটাই আজ জনমনের অগ্রিম প্রশ্ন?