আস্তিক নাস্তিকের দ্বন্দ ও অশুভ শক্তির উত্থান

ওয়াসিম ফারুক
Published : 7 May 2016, 08:21 PM
Updated : 7 May 2016, 08:21 PM

আমাদের দেশে বেশকিছুদিন যাবৎ আস্তিক আর নাস্তিক নিয়ে একটা চড়ম দ্বন্দ শুরু হয়েছে । ধর্মীয় উগ্রবাদী তথা ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠির হাতে কেউ খুন হলেই তাকে নাস্তিক বলে চালিয়ে দেয়ার একটা প্রবনতা শুরু হয়ে গেছে । এ ধরনের যে কোন হত্যাকান্ডের পরই কোন না কোন জঙ্গি গোষ্ঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইডের মাধ্যমে বিবৃতির মাধ্যমে জাহির করছে যে আমাদের হেনরা অমুক তেনকে ধর্ম অবমাননা কিংবা ধর্মের ওমুক ক্ষতি সাধনের জন্য চাপাতি ও বুলেট পরিবেশনের মধ্যমে হত্যা করেছে অমুক তেনে আপাদমস্তক একজন নাস্তিক ছিলেন । এর ই সুবাদের আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ও একটা মহা সুযোগ পেয়ে বসেন তারা ও খুব সাধারন ভাবেই বলে ফেলেন অমুক তেনের ফেইসবুক ব্লগ সাইড পরীক্ষা করে দেখে নেই যে তেনে কি ফেইসবুক বা ব্লগ সাইডে ধর্ম নিয়ে কিছু লিখছে কিনা । ততোক্ষনে কেউ কেউ সদ্য খুন হওয়া ঐ ব্যক্তকে নাস্তিক ধর্ম অবমাননা কারী হিসেবে মিডিয়ায় তথা আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠোত করে দিলেন । অতি সম্প্রতি ইসলাম ধর্মীয় উগ্রজঙ্গি গোষ্ঠির হাতে খুন হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার পর তার মেয়ে রেজওয়ানা হাসিনকে বার বার মিডিয়ের মধ্যমে দেশবাসীকে অবগত করতে হয়েছে যে তার বাবা কখনো ই নাস্তিক ছিলেন না তার বাবা আপদমস্তক একজন আস্তিক অর্থাৎ একজন ধর্মিক ছিলেন তার বাবা প্রতি সপ্তাহে ই জুম্মার নামাজ আদায় করতেন তা ও আবার তেদের গ্রামের বাড়িতে এমকি তার বাবার তিনটা টুপিও যে আছে এটা ফলাও করে বলতে হয়েছে মিডিয়াতে কারন দেশবাসী যাতে জানে যে তার বাবা অধ্যাপক এএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী একজন ধর্মিক অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন । এখানে আমার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন হলো কেন বার বার রেজওয়ানা হাসিন কে বলতে হলো যে তার বাবা একজন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তার বাবার তিনটি টুপি আছে তার বাবার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ীতে মসজিদ নির্মান করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি ?

আজ আমাদের দেশে তথাকথিত নাস্তিক-আস্তিকের দ্বন্দ যে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে তা বেশি দিনের নয় । ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই এটা আমাদের সামাজিক ব্যাধি রূপে দাড় করানো হয়েছে । ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির আদালত কতৃক যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে একসময় সারাদেশের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।এই আন্দোলনের সূচনায় আগ্রনী ভূমিকা পালন করেন দেশের কিছু তরুন ও যুবক যারা ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি সহ অনলাইনের নানা এ্যাকটিভিটর সাথে জড়িত । এদের মধ্যে করো কারো হয়তো বিশ্বাস বা আর্দশিক ধারনা ভিন্ন হতেই পারে এবং হওয়াটা ই স্বাভাবিক । জামাত-ই-ইসলাম সহ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়া বিভিন্ন অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার লক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত বিচারের দাবি নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনে শরিক হওয়া মানুষদের কে ঢালাও ভাবে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করতে লাগলো বিশেষ করে ব্লগ সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লেখা লেখি করতেন । আমাদের সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিতরে এমন একটি ধারনার জন্ম দিতে তারা স্বার্থক হয়েছে যে আমাদের সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষের অনেকে ই ব্লগ বলতেই বুঝে নিচ্ছেন নাস্তিকতাকে আর ব্লগারদের ভাবছেন নাস্তিক হিসেবে ।বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট তথা কথিত ইসলামিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ই আমাদের দেশের বর্তমান আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দের জনক ।২০১৩ সালে জামাই-ই-ইসলাম ই ছিল হেফাজতে ইসলামের মূল চালিকা শক্তি ।

২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুল(সা:) কে কটূক্তিকারী তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবী করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করে।যার মধ্যে ছিল শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা ও ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।সেই সাথে হেফাজতে ইসলাম ৮৪ জন ব্লগারে একটি তালিকা সরকার কে প্রধান করে যাদের কে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানান । আর এখান থেকেই মূলত আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ ও চাপাতি খুনের প্রথা শুরু । ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজিব হায়দার শোভনের হত্যা দিয়ে ই ঐ তালিকার বহনি করা হয় । এর পর একে একে বেশ কয়েক জনকেই একই কায়দায় খুন করা হয় ঐ তালিকা থেকে । ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলাম সহ জামাত শিবিরের কর্মকান্ডকে দারুন ভাবে উৎসাহিত করতে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া বাধা গ্রস্হ করতে আদা-জল খেয়ে নেমে ছিলেন আমাদের দেশের সাংবাদিক হিসেবে হঠাৎ খ্যাতি পাওয়া একজন দখলবাজ পত্রিকা সম্পাদক ও তার দখল করা দৈনিক পত্রিকা টি । বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বানোয়াট উস্কানি মূলক দেশের স্বার্থ বিরোধি সংবাদ পরিবেশনের মধ্যমে নিজেকে সৎ সাহসী ও ধার্মিক লোক হিসেবে জাহির করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন তিনি

আজ আমাদের দেশে যে সকল চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের জন্য দেশ ও জাতি যে বির্বতকর অবস্হায় পরেছে তার জন্য মূলত এরাই দায়ী । সরকার ও তাদের ক্ষমতা স্হায়ী করার চিন্তায় চাচ্ছেন না হেফাজতে ইসলামকে ক্ষেপাতে । আমাদের দেশে ব্লগার , মুক্তচিন্তার লেখক , প্রকাশক শিক্ষক পুরোহিত বা বিদেশি নাগরিক যে কোন চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের পিছনে জামাত-শিবির বা হেফাজতে ইসলামের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদদ আছে তা কোন ভাবেই অস্বীকার করার কোন পথ নেই কারন এধরনের হত্যাকান্ডের সূত্রপাত ই হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের সেই তালিকা ধরে যে তালিকা ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম সরকার কে প্রদান করেছিল । এমন কি একজন ব্লগার খুন হওয়ার পরে হাতে নাতে ধরা খাওয়া খুনিদের কারো কারো ঠিকানা ও ছিল হেফাজতে ইসলামের নেতাদের পরিচালিত মাদ্রাসা । অথচ আমাদের সরকার ও তাদের প্রশাসন এত গুলি হতাকান্ড ঘটে যাওয়ার পর ও একটি বার চিন্তা ও করে নি যে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যে কেন বা কারা তাদের তৈরি তালিকা ধরে হতাকান্ড চালাচ্ছে বরং সরকার তাদের খুশি রাখার জন্য নানা ধরনের উপহার সমগ্রীর প্রদান করছে এবং করেছে ।আজ আমাদের দেশে নিরব ঘাতক চাপাতি ও বুলেট প্রত্যেকটি প্রগতিশীল মানুষের পিছনে তারা করে ফিরছে । প্রত্যেক প্রগতিশীল মানুষ ই নিজের জীবনের নিরাপত্তায় আজ চিন্তিত । যদি ও সরকারে কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য এ সব ই এক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেশের আইন শৃংখলা ও স্বাভাবিক ভাবেই চলছে । তাদের কথাই তো সত্য আসলেই তো এ গুলি এক একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এক একজন খুন হচ্ছে আর একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্ম হচ্ছে ।পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে বোমা হামলা বা ২১শে আগষ্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর ও আমরা দেখেছি মাত্র কিছুক্ষন পরেই রমনা পার্ক বা বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল জানিনা সেই স্বাভাবিক চলাচল করা মানুষ গুলির মনের অবস্হা সত্যি ই কি স্বাভাবিক ছিল ? আজ আমাদের দেশে আস্তিক নাস্তিকের দ্বন্দে যে অশুভ শক্তির উত্থান হচ্ছে তা অস্বীকার কোন উপায় নেই । সেই অশুভ শক্তি আমাদের সোনার বংলার স্বাধীনতা ,সংস্কৃতি ও জাতীয় মূল্যবোধকে ধ্বংস করে ওদের স্বপ্নের আফগান কিংবা পাকিস্হানে পরিনত করতেই সর্বদা তৎপর । তাই এখন ও সময় আছে সরকাকে নিদ্রা থেকে উঠে সকল প্রগতিশীল মানুষদের কে সাথে নিয়ে এই অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করার ।