কলঙ্ক ও দায় মোচন আরেক ধাপ!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 12 May 2016, 06:54 PM
Updated : 12 May 2016, 06:54 PM

ইতিহাস বিকৃত করা যায় কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না । আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নানা সময় নানা ভাবে রচিত হয়েছে বিকৃত করা ও হয়েছে । ইতিহাস বিকৃতির সুত্রকে কাজে লাগিয়েই দীর্ঘদিন পার পেয়ে গিয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বদেশী ঘৃনিত খলনায়কেরা । আমি খলনায়ক বলছি একারণে যে সিনেমায় খলনায়ক যত শক্তিশালীই হউক না কেন ন্যায়ের পথে থাকা নায়কের কাছে অবশেষে পরাস্ত হতেই হয় খলনায়ককে ঠিক তেমনই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সহযোগী রাজাকার, আল-বদর আর আল শামসের কর্তাব্যক্তিদের ও পরিণতি আবশেষে সিনেমার খলনায়কের মতই হচ্ছে। গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিগত মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া হিসেবে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে যা পর্যায় ক্রমে কর্যকর ও হচ্ছে ।তার জন্য সরকার কে নানান প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা মুখোমুখি হতে হয়েছে । নানা প্রতিকূলতার পর ও যে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকার অটল তার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ না দেয়ার কোনই কারন নেই । ১১ মে ২০১৬ জাতির কপালে আটা কলঙ্কের ধাপ আরেক দফা মুছলো । এই দিন প্রথম প্রহরে ই অর্থৎ ১২ টা ১০ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয় একাত্তরের ভয়ংকর খুনে বাহিনী আলবদরের নেতা ও বর্তমান জামায়েত ই ইসলামের আমির সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে । এর আগে ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর কে একই অপরাধে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে । মানবতাবিরোধী অপরাধের আরো বেশ কয়েকটি মামলায় কয়েকজনের বিচার পর্ব ও রয়েছে প্রায় শেষ ধাপে শতাধিক মামলা রয়েছে তদন্তাধীন।

২০১০ সালের আগস্টের ২ তারিখ নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম গ্রেফতার দেখানো হয় যদিও তিনি ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের একটি মামলায় গ্রেফতার হন। এর পর দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলার পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক এবং দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপনের পর ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। আর এ আটটি অভিযোগের মধ্যে চারটি অপরাধের (অভিযোগ নং ২, ৪, ৬, ও ১৬) জন্য তাকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। একই বছরের ১৩ নভেম্বর তিনি সর্বোচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগেও তার ফাঁসির দণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ নিজামী আপিল বিভাগের রায়ের 'রিভিউ আবেদন' করেন যার শুনানি হয় মে'র ৩ তারিখ এবং ওই দিনই ধার্য করা হয় যে, রিভিউ আবেদনের রায় দেয়া হবে মে'র ৫ তারিখ। শেষ পর্যন্ত রিভিউ আবেদনের রায়ে নিজামীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দেয়া রায় বহাল রাখা হয়। নিজামী দেশের বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত ওই রায় দেন। ওই মামলা এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন।

নিজামীদের কৃতকর্ম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ও নানাবিধ বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পেয়ে মন্ত্রী ও বনেগিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত নিজামী । তাদের ঔদ্ধত্য বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল জাতির মনে নিজামীরা হয়তো ভেবে ছিল বাংলার মাটিতে তাদের স্পর্শ করার শক্তি ও সাহস আর কেউ ই কখনো পাবে না । তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল তাদের অপরাধের বিচার এই বাংলাদেশের মাটিতে একদিন না এদিন হবেই। আজ আমাদের গর্ব হচ্ছে আমাদের আনন্দ হচ্ছে বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিচার হচ্ছে বিচারের রায় ও কার্যকর হচ্ছে ক্রমান্বয়ে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে ।ধাপে ধাপে আমরা আমাদের আগ্রজদের রক্তের ঋণ কিছুটা হলে ও শোধ করতে পারছি । তবে সরকারের দায়িত্ব শুধু বিচারেই শেষ ভাবলে চলবে না সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব জামায়াত ই ইসলাম সহ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল পরাজিত শক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সহ দলমত নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা। তা না হলে জাতি হিসেবে আমরা পুরোপুরি দায় ও কলঙ্কমুক্ত হতে পারব না।