শ’খানেক মুসল্লি ও শোলাকিয়ার ঈদ জামাত!

ওয়াসিম ফারুক
Published : 19 Sept 2016, 00:13 AM
Updated : 19 Sept 2016, 00:13 AM

কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়ায় বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া "সাহেব বাড়ির" পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় "সোয়া লাখি"। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। বর্তমানে শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে কম বেশি প্রায় তিন লাখ মুসল্লি একসাথে ঈদের জামাত আদায় করেন। কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল আজহার জামাতে মুসল্লির উপস্হিতিতি কিছুটা কম হয়। তবে এবারের কোরবানির ঈদের জামাত ছিল পুরো পুরিই শোলাকিয়ার ইতিহাসের ব্যাতিক্রম- দৈনিক ইত্তেফাক সহ বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম ছিল "শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে শ'খানেক মুসল্লি!" আবার কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম সংবাদে বলা হয়েছে শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে মুসল্লির চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিই বেশি।

এবারের কোরবানি ঈদের দিন থেকেই শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অল্প সংখ্যক মুসল্লির উপস্হিতি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেইসবুক ছিল সরগরম। নানা জনের ছিল নানান মত অবশ্য আমি সেই মতের দিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইনা আবার কারো কারো মতামতকে উপেক্ষাও করতে পারি না। সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল আজহায় এমনিতে মুসল্লি কম হয়। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এবার আরও কম হয়েছে। আমার সঠিক জানা নেই গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ এর ঈদুল আজাহায় শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে কি পরিমান মুসল্লির সমাগম হয়েছিল তবে তা যে লাখ পরিয়েছিল তা আমি নিশ্চিত। গত বছরও কিন্তু ঈদুল আজাহায় দিন কম বেশি বৃষ্টি হয়েছে আর সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এসেই শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে শরিক হয়েছেন। তাই কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের কথা আমি তেমন ভাবে বিশ্বাস করতে পারছিনা বা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

অনেকের মতে মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ গণজাগরণ মঞ্চে উঠেছিলেন এবং জাগরণ ওয়ালাদের পক্ষে বক্তৃতা করেছিলেন এই জন্যই নাকি ঈদুল আজাহার ঈদের জামাতে মুসল্লি কম হয়েছে। মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ তো বেশ কয়েক বছর যাবৎই শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতের ইমামতি করে আসছেন আর গণজাগরণ মঞ্চ সেটা তো ২০১৩ সালে গঠন করা হয়েছে এর পর তো বেশ কয়েকটা ঈদের জামাতই অনুষ্ঠিত হয়েছে শোলাকিয়ায় সে সব জামাতেও তো দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসল্লি এসে শরিক হয়েছেন শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে। তাই যারা বলছে যে মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ গণজাগরণ মঞ্চে উঠেছিলেন এবং জাগরণ ওয়ালাদের পক্ষে বক্তৃতা করেছিলেন এ কারনেই এবারের ঈদুল আজাহার জামাতে মুসল্লিদের উপস্হিতি হ্রাস পেয়েছে তাদের এমন বক্তব্য পাগলের বিলাপ ছাড়া আর কিছুই আমি বলবো না।

গত ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে শকুনের থাবায় রক্তাত হয়েছে শোলাকিয়া। সে দিন সকালে শোলাকিয়ার ঈদগাহের পাশে আজিমুদ্দিন স্কুলের সামনে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা ও চাপাতির কোপে নিহত হন পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক। পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। এতে নিজের ঘরে থাকা ঝর্ণা রাণী সূত্রধর নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে শফিউল ইসলাম নামের এক জঙ্গি। অনেকেরই ধারনা সেদিনের সেই জঙ্গি হামলায়র ভয়ে এবারও মুসল্লিরা আতংকিত আর সেই আতংকের কারনেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা এখানে আসতে ভয় পেয়েছে। আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল এবারের শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছিল এবার। তার পরেও কেন এবারে ঈদুল আজাহার জামাতে মুসল্লিদের উপস্হিতি এত কম? এমন প্রশ্ন এখন সমগ্র জাতির মনে।

শোলাকিয়া ময়দানের বিশাল ঈদের জামাত শুধু কিশোরগঞ্জকেই নয় গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে। শেষ পর্যন্ত তথাকথিত ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের কালোথাবা থেকে রক্ষা পায়নি শোলাকিয়ার ঈদগাহের ময়দান। পুলিশ মুসলিম হিন্দু সবার রক্তে রঙ্জিত হয়েছে শোলাকিয়া। আজ হয়তো জঙ্গিদের ভয়ে জীবন রক্ষার ভয়ে অনেক মুসল্লির প্রবল ইচ্ছা সত্যেও শরিক হতে পারেন নি শোলাকিয়ার ঈদুল আজাহার ঈদ জামাতে। আগামী ঈদুল ফিতর আসার আগেই অনেকেই হয়তো বা ইহলোকের মায়া ত্যাগকরে পরকালের বাসিন্দা হবেন। শোলাকিয়ায় কিন্তু ঈদের জামাত ঠিকই অনুষ্ঠিত হবে। তাই আশা করবো সরকারের প্রচেষ্টায় আগামী ঈদুল ফিতর সহ আগত প্রতিটি ঈদের জামাতই শোলাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহে পূর্বের জওলুস আর ঐতিহ্য নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে।