মানুষ হতে আর কতদূর?

ওয়াসিম ফারুক
Published : 13 May 2017, 02:25 AM
Updated : 13 May 2017, 02:25 AM

দিনাজপুরের ইয়াসমিনের কথা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছি। ভুলে যাবারই কথা। আমরা জাতি হিসেবে অনেক আবেগপ্রবণ বলেই সব কিছুতে খুবই প্রতিক্রিয়াশীল হই, খুব সহজে আবার সেই প্রতিক্রিয়া আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়। এই কারণেই একই ধরনের ঘটনার জন্য আমাদের বার বার প্রতিক্রিয়াশীল হতে হয়, প্রতিবাদের দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। উত্তাল হয় গোটা দিনাজপুর। শান্ত মানুষ গর্জে ওঠে, গুলি চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় জীবন দেয় অন্তত সাতজন। আর পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছিলো অগণিত মানুষকে। কারফিউ দিতে হয় সরকারকে। অতপর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইয়াসমিনের ধর্ষক খুনিদের।

এতকিছুর পর ভেবেছিলাম দেশে হয়তো আর কোন মা-বোন কে ধর্ষণের শিকার হতে হবে না। কিন্তু প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যের শিরোনাম হয় ধর্ষণের খবর। কোন কোন ধর্ষণের ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করলেও বাকী প্রায় সব ঘটনাই পরে যায় ধামা চাপা।

.

গত বছরের আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ধর্ষনের পর খুন হন। লাশ মিললো দেশের অন্যতম নিরাপদ স্থান কুমিল্লা সেনানিবাসের সীমার ভিতর। তনুর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা উত্তাল হয়েছিল দেশ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সরকার আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কেউই আজও খুঁজে বের করতে পারলো না তনুর ধর্ষণ ও হত্যার আসামীদের।

সম্প্রতি বনানীর এক অভিজাত হোটেলে বন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। ধর্ষক বন্ধু হলেন দেশের খ্যাতনামা স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও তার আরো দুই সহযোগী। ধর্ষণের প্রায় মাস খানেক পরে ভয়কে জয় করে দুই ছাত্রী আইনের আশ্রয় চায়, কিন্তু আইন সহজেই তাদের আশ্রয় দেয় নি। টানা ৪৮ ঘন্টা যুদ্ধ করে দুই ছাত্রী পুলিশকে বধ্য করে মামলা নিতে। তারপরও আমাদের পুলিশের এই মামলা নিয়ে কত টালবাহান কতই না নাটক!

যারাই আজ ধর্ষণের মত এই নিকৃষ্ট অপরাধ করছে তারা সত্যিকার অর্থেই তো মানুষ না। যদি মানুষ-ই হতো তা হলে হয়তো নিজের ঘরে থাকা মা-বোনের কথা তো অন্তত একবার হলেও ভাবতো। এর সাথে যেটা হয়েছে, যারাই এ ধরনের অপরাধ করছে তারা টাকার জোর, ক্ষমতার জোর, যোগাযোগের জোরে কোন না কোন ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাতেই অপরাধীরা নতুন করে আপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।

তবে আমাদের রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভাবতে হবে যে, অপরাধী যেই হউক তাকে তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। তাহলে-ই আমাদের রাষ্ট্র তথা সমাজ থেকে ধর্ষণের মত এই নিকৃষ্ট অপরাধ কমবে।