পারভেজরাই সত্যিকারের বীর

ওয়াসিম ফারুক
Published : 12 July 2017, 07:12 PM
Updated : 12 July 2017, 07:12 PM

আমাদের পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাদের অভিযোগের শেষ নেই তাই পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাদের একটা প্রবাদ আছে – বাঘে ছুলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুলে ছত্রিশ ঘা। আমাদের এই বিশাল পুলিশ বাহিনীতে কিছু খারাপ সদস্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। খারাপ ভাল মিলেই দুনিয়া। কনস্টেবল পারভেজ মিয়া বর্তমান সময়ে এক প্রশংসিত নাম। নিজের কর্মদক্ষতা ও বুদ্ধির মধ্যদিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে  সেবাই পুলিশের ধর্ম। পারভেজ মিয়ার কর্মদক্ষতায় আজ প্রশংসিত হয়েছে পুরো পুলিশ বাহিনী।

৭ জুলাই ২০১৭। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়ার ডিউটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে মতলবগামী মতলব এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী একটি বাস হঠাৎ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন। খবর পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে দায়িত্বরত কনস্টেবল পারভেজ মিয়া মহানায়কের মতো জীবন বাজি রেখে পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবায় লাফিয়ে পড়েন। একে একে গাড়ির সবকয়টি জানালার গ্লাস ভেঙে দেন। ততক্ষণে গাড়িটির এক তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা যাত্রীদের আর্তচিৎকারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণ ঘটে। নিজেই ডুবন্ত বাসটির ভেতরে ঢুকে উদ্ধার করেন সাত মাস বয়সী একটি শিশুকে। তারপর একে একে উদ্ধার করেন পাঁচ নারীসহ ১৫ যাত্রীকে। পরে পারভেজ মিয়ার সাথে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেন স্থানীয় জনতা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। পারভেজ মিয়ার বুদ্ধিমত্তায় নিশ্চিত মৃত্যুর ঘর থেকে ফিরে আসেন বাসের অর্ধশত যাত্রী ।

দুর্ঘটনার ঐ মুহূর্তে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন ওখানে। কেউ তার দামি মোবাইলে সেলফি তোলা, না হয় ভিডিও ধারন করায় ছিল ব্যস্ত। কারো ধান্দা ছিল ডুবে যাওযা যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করা। তবে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে অন্যের জীবন বাঁচানো পারভেজ মিয়াদের সংখ্যা খুবই নগন্য । আর এই যৎসামান্য পারভেজ মিয়াদের জন্যই আমরা নিজেদের সভ্য সমাজের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতে পারছি।

পুলিশ বাহিনীরই আরেক সদস্য ছিলেন  গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য কনস্টেবল মো. শের আলী কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু উপজেলায় রশিদ নগর সড়ক দুর্ঘটনায় বাসের নিচে চাপা পড়া এক মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করে নিজ কন্যার মত বুকে চেপে ধরে হাউ মাউ করে চিৎকার করতে করতে হাসপাতালের দিকে ছুটে চলার সে দৃশ্য ও ছিল মানবতার ই জয় । কনস্টেবল মো. শের আলীর সেই স্বার্থহীন দায়িত্বের জন্য রাষ্ট্র ও তকে স্মানিত করেছে । এবারের পুলিশ সপ্তাহে শের আলীকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয় । অবশ্য শের আলী বা পারভেজদের কাছে পদক পদবী পুরটাই মূল্যহীন তাদের কাছে মানবতার দায়িত্বটাই প্রধান।

আজ আমাদের রাষ্ট্র থেকে সমাজ থেকে মানবতা বিবেক ক্রমশই অথৈই সাগড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। সামন্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থকে বির্সজন দিতে মোটেও কুন্ঠবোধ করি না । আমরা চাইবো পারভেজের মত আমাদের প্রতিটি মানুষের ভিতরে মানবতা জাগ্রত হউক। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে হানাহানি, কাটাকাটি, গুম, হত্যা, সব খারাপি বন্ধ হয়ে মানবিক রাষ্ট্র এবং মানবিক সমাজ নিয়ে উঠুক আগামির সূর্য । আর রাষ্ট্র সমাজ ও ব্যক্তি সবার সন্মান ভালবাসায় সিক্ত হোক পারভেজ মিয়াদের বীরত্ব।