সৎ মেয়ের অসৎ পিতা

ওয়াসিম ফারুক
Published : 24 July 2017, 03:23 PM
Updated : 24 July 2017, 03:23 PM

পিতা জন্ম দাতা পিতা হউক আর সৎ পিতা হউক পিতার স্থান একজন মানুষে কাছে অনেক উপরে। কন্যার মান সম্মান ও ইজ্জত একজন পিতার কাছে নিজের জীবনের চেয়েও অধিক মূল্যবান।

একজন পিতা হয়ে যখন কন্যাকে ধর্ষণ করে তার চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ এই দুনিয়াতে আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন? সংবাদ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন যে ধর্ষণের ঘটনা সমগ্র জাতিকে নাড়া দিয়েছে তা হলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪-এর শব্দ প্রকৌশলী আরমান হোসেন সুমনের ধর্ষণের ঘটনা।

সুমন তার স্ত্রীর মেয়েকে অর্থাৎ সৎ মেয়েকে দীর্ঘ আট বছর যাবত ধর্ষণ করে আসছে। বলতে গেলে দীর্ঘ আট বছর যাবত সুমন একটি শিশু মেয়েকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মেয়েটির বয়স যখন ১১ বছর তখন তার মা বিয়ে করেন ধর্ষক সুমনকে।

বিয়ের সময় অবশ্যই মেয়েটির মায়ের সুমনের কাছে দাবি ছিল তার মেয়েকে নিজের মেয়ের মত করেই বড় করবে সুমন। ইচ্ছায় বা অনইচ্ছায় মেয়েটির মাকে বিয়ে করার জন্য সুমনও তার ঐ দাবি মেনে নিয়েছিল। সুমনের ঘরে আসার পর মেয়েটিও সুমনকে বাবা বলেই প্রথমে ডেকেছে। কিন্তু এ ধরনের সুমনরা যে বাবা হবার যোগ্যতা নেই তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি মেয়েটি। ২০০৮ সালের কোনো একদিন দুপুর থেকে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই মেয়েকে নিজ ঘড়েই ধর্ষণ করে আসছিল সুমন। দীর্ঘ সময় যৌন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ধৈর্যের সব বাধ ভাঙ্গার পরই মেয়েটি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়, এরই মধ্যে একবার নাকি মেয়েটার গর্ভপাতও ঘটানো হয়। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস এই দীর্ঘ সময় ধর্ষক সুমন চাকরি করেছে সমাজের অনেক সভ্য মানুষের সাথে, মিলেছে কিন্তু নিজেকে নিজের ঘড়ে সভ্য মানুষ হিসেবে মিলাতে পারেনি।

পত্রিকায় খবর এসেছে, কন্যাকে ধর্ষণ করেছে বলে সুমনের নাকি কোন অনুশোচনা ই নেই। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন যদি কোন মানুষের ভিতরে অনুশোচনা বোধ অর্থাৎ মনুষত্ব বোধ তথা সামজিক মূল্যবোধ থাকে তা হলে তার পক্ষে কি এমন জঘন্য কাজ করা সম্ভব? সুমনের দাবী সে নাকি মেয়েটিকেও বিয়ে করেছে। আমি জানি না পৃথিবীর কোন ধর্ম রাষ্ট্র বা সমাজ একই সাথে মা ও মেয়েকে বিয়ে করার স্বীকৃতি দিয়েছে কি-না? তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের মত একটি কট্টর ধর্মীয় বিশ্বাসী রাষ্ট্রে সুমনের এমন দাবী কি মানান সই?

মেয়েটির মা অর্থাৎ সুমনের স্ত্রী তার মেয়ের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা পুরোটাই নাকি জানতেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন, একজন মা হয়ে কেন মেয়ের ইজ্জত নিজের স্বামীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে না? কেন প্রতিবাদ করতে পারলেন না নিজের স্বামীর এই জঘন্য অপকর্মের? সুমন আজ আইনের হাতে বন্দি, জানিনা আইন সুমনকে কি সাজা দিবে? মেয়েটি মা আজো রাষ্ট্রের মুক্ত বায়ুতে ঘুরে বেরাচ্ছেন।  জানিনা নিজ মেয়েকে ধর্ষণের জন্য স্বামীকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের রাষ্ট্র তথা আইন কোন সাজার ব্যবস্থা করছেন কি না?

আজ আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রে অনেক সুমনেরই যৌন লালসার স্বীকার অনেক শিশু অথবা তরুণী। কিছু ঘটনা আমারা জানলেও বাকি ঘটনা ধামা চাপা পরে যায় অর্থশক্তি পেশী শক্তি আর ক্ষমতার দাপটের কাছে। ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনার শস্তির জন্য দেশে আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগের যথেষ্ট অভাবের কারণে আমাদের সমাজে ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ সহ আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে ধর্ষণের মত ব্যাধি থেকে আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রকে উদ্ধার করতে সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে।