মাননীয় মন্ত্রী, রক্ত দেয়াটা কি খুব জরুরী?

ওয়াসিম ফারুক
Published : 7 Jan 2018, 01:30 AM
Updated : 7 Jan 2018, 01:30 AM

আমাদের দেশের রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিরা প্রায়ই কাজের অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে কথা বেশি বলে সমালোচনার ঝড় তুলেন। কখনো এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় কথা তাদেরকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে চাটুকারে পরিণত করে তা তারা হয়তো ভাবেন না।

সম্প্রতি নতুন দায়িত্ব পাওয়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে প্রয়োজনে রক্ত দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। মন্ত্রী মহোদয় অবশ্য এ-ও বলেছেন, বিমানকে লাভজনক করা খুব কঠিন কাজ না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন, যে কাজটি খুব কঠিন নয় বলে মন্ত্রী মহোদয় বললেন তিনি কেন সেই সাধারণ কাজের জন্য রক্ত পর্যন্ত দিতে চইলেন? মাননীয় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মহোদয়কে বলেতে চাই কোন প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করে তুলতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সততা, সেই সাথে প্রয়োজন হয় দক্ষ ব্যবস্থাপনার। এই দুয়ের উপস্হিতিতেই যেকোন প্রতিষ্ঠান অবশ্য লাভবান হবে বলে বিশ্বাস। রক্ত দিয়ে বা জীবন উৎসর্গ করে কোন প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করা আদৌ সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ বিমান আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ মাত্রাধিক লোকবলের ভার, সিবিএর নামে বাড়াবাড়ি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কর্মীর অভাব, অভ্যন্তরীণ লুটপাট ও অনিয়ম প্রতিষ্ঠানটিকে ডুবিয়েছে। আজ আমাদের দেশের মানুষ আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজের যাত্রী হতে মোটেও আনন্দবোধ করেন না। বিমানের সকালের ফ্লাইট সন্ধ্যায়ও যাত্রা করবে কিনা তা নিয়েও অনেক সময় সন্দেহ থেকে যায়।

খুঁজলে টিকেট মিলে না কিন্তু বিমানের প্রতিটি ফ্লাইটই যাত্রা করে অর্ধেক আসন খালি নিয়ে। আমাদের বিমানের যে যাত্রীসেবা, তা না হয় নাই বা বললাম। বিমানের কেবিন ক্রুরা প্রত্যেক যাত্রীকেই মনে করেন সবাই যেন তাদের অধিনস্ত চাকর-বাকর। আমাদের মধ্যপ্রচ্যের রুটে যে সকল ফ্লাইট গুলি বিমান পরিচলানা করে ঐ সকল ফ্লাইটের কেবিনক্রুরা যাত্রীদের যে সেবা ও ব্যবহার উপহার দেন তা কখনোই কারো কাম্য নয়। সেই কারণে আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনের এখন আর না পরলে বিমানের যাত্রী হতে চান না। মাননীয় মন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান ও বিমানবন্দরের সমস্যা বোঝার জন্য পাহাড়সম উচ্চতার তথ্য-জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংবাদের উপর নজর রাখলেই ওসব আপনার জানা হয়ে যাবে।

বিমানের সময়সূচি নির্ভুল রাখার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। শুধুমাত্র খ্যাতনামা বিমান সংস্থা গুলি কীভাবে সময়সূচি রক্ষা করে আকাশে উড়ছে আর মাটিতে নামছে তা দেখে এসে কাজ করলেই আমাদের বিমান ও সময়সূচি রক্ষা করতে পারবে।

মাননীয় মন্ত্রী অকারণে অখ্যাত-অজ্ঞাত কোম্পানি থেকে উড়োজাহাজ লিজ এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের ক্ষতিই বিমানে লোকসানের অন্যতম একটি কারণ নয় কি? বিমানের কর্মীরা ফ্রি টিকেটে দেশ-বিদেশ ঘুরে তাতেও কি বিমানের কম লোকসান হয়?

মাননীয় মন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেভাবে নিষ্কলুষ, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা আমাদের কোন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কি তেমনটি? অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দরের কথা না হয় বাদই দিলাম। মশা-মাছি ও ইঁদুর-বিড়াল পদচারণায় মুখরিত আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুলি।

ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষের পর লাগেজ হাতে মিললেও লাগেজ কাটা মালামাল চুরি হওয়া বা লাগেজ গায়েব হয়ে যাওয়া আমাদের বিমান বন্দর গুলিতে নতুন কিছুই নয়। বিমান বন্দরের কর্মীদের হাতে যাত্রী হয়রানি বা অপদস্ত তো নিত্যদিনের ঘটনা। আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুলি চোরাকারবারীদের নিরাপদ রুট আর বিমানকে তারা ব্যবহার করছে অবৈধপন্যের পরিবহনে। আমাদের পর্যটননগরী কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ আজো ঝুলে আছে, অথচ পর্যটন শিল্পবিকাশের প্রথম শর্তই হচ্ছে একটি ভালমানের বিমান বন্দর।

মাননীয় মন্ত্রী, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের রক্ত দেয়ার প্রয়োজন ছিল, নব্বইয়ে স্বৈরাচার পতনে আমাদের রক্ত দেয়ার প্রয়োজন ছিল, ভবিষ্যতেও আমাদের দেশমাতৃকার অস্তিত্ব ও আমদের গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনে আবারও আমরা সবাই রক্তদিতে প্রস্তুত। তবে বিমানের মত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতে আপনার রক্ত দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি তথা দেশবাসি কেউই মনে করেন না। বিমানকে লাভবান করতে আপনার সততা ও কর্মদক্ষতাই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি।