ডায়াগনস্টিক সেন্টার কী ব্যবসা নাকি সেবা কেন্দ্র?

এক্সফাইভ ওয়ান
Published : 30 Nov 2012, 06:42 PM
Updated : 30 Nov 2012, 06:42 PM

আমার এক বন্ধু তৈরি ফার্নিচারের ব্যবসায়ী, সে হটাত্ করে একদিন আমাকে বলল সে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করবে। আমি বললাম বেশ ভাল উদ্যেগ। তা ব্যবসা করার জন্য করবি নাকি সেবা দেওয়ার জন্য ? সে উত্তর দিল, অবশ্যই ব্যবসা করার জন্য। আমি বললাম তর অভিজ্ঞতা আছে ? সে বলল অভিজ্ঞতার দরকার নেই। আমি বললাম ঠিক আছে তুই কর আমাকে টানিস না। অবশেষে আমার সেই বন্ধুটি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। আমিও আর এই বিষয়ে মাথা ঘামাইনি। চিন্তা করলাম, সে করবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আর লোক খুজে পেলাম না। বেশ কিছুদিন পরে খবর পেলাম অবশেষে সে ডায়াগনস্টিক সেন্টার করে ফেলেছে। উদ্ববোধন করা হবে, ভাবলাম হয়তোবা এবার সে দাওয়ার দিতে পারে, কিন্তু না দাওয়াত পেলাম না। বরঞ্চ আমার আরেক বন্ধুর কাছে সে বলেছে আমি নাকি তার কাজে বিরোধিতা করেছি। যাই হক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হল, কিন্তু দুক্ষের বিষয় হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই একজন আড়াই মাসের শিশু ভুল চিকিত্সায় মারা গেল। উত্তেজিত জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ ভাংচুর করল। স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়লো। তারা বলছে অনুমতি পত্র দেখানোর জন্য, কিন্তু অনুমতি পত্র দেখাবে কী করে সে তো কোনও অনুমতি নেয়নি। কাগজপত্র জমা দিয়েই ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে দিয়েছিল। অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করে। এখন ?

পরিশেষে শিশুটির পিতা-মাতার ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টির জন্য একটা জরিমানার মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ হলো।

প্রশ্ন হচ্ছে এটাকে কিভাবে চিকিত্সার ক্ষেত্র বলা যেতে পারে ? আমার ধারণার অতীত, এ শুধু আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সৃষ্টি না, বলা যেতে পারে সারা দেশের এই চিত্র বর্তমানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর প্রতিষ্ঠার ব্যপারে, কোনও উদ্যেক্তা বলতে পারে না নিদৃষ্ট করে সে কী ব্যবসা করার জন্য করেছে নাকি সেবা দানের জন্য করেছে।

খেয়াল করলে দেখা যেতে পারে, মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চিকিত্সা সেবার নাম করে এসব প্রতিষ্ঠান এখন ব্যবসার মাছ বাজারের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কোনো রকম নিয়মনীতির প্রয়োজন ছাড়াই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে অদক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা নানা জটিল রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। শহর-গ্রাম প্রায় প্রতিটি এলাকাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুরু হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর অধিকাংশেরই নেই কোনো ছাড়পত্র। মনগড়া রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা আর চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ দেখা যাচ্ছে সঠিক রোগের কোনও চিকিত্সা হচ্ছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুয়া রিপোর্টের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মূল পুঁজি হচ্ছে বড় বড় সাইনবোর্ড আর নামকরা সব ডাক্তারের নাম ঝুলিয়ে আকৃষ্ট করা।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি নির্দিষ্ট রেট বেঁধে দেয়া থাকলেও সেটা মানছে কেউ। মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজিতে সবচেয়ে কম ১৫০ টাকা এবং বেশি ১ হাজার ৩০০ টাকা। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিতে সর্বনিু ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা ধার্য করা আছে। বয়োকেমিস্ট্রিতে ১২০ থেকে ৮০০ টাকা নির্ধারিত, হিস্ট্রোপ্যাথলজিতে ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারিত। এছাড়া ড্রাগ এবিউজের ক্ষেত্রে ৫৫০ টাকা ও ভাইরোলজির জন্য ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে উপরোক্ত ফি এখন শুধুই কাগজে আছে, কার্যক্ষেত্রে নেই। এসব মানার সময় নেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর।

বলা হয়ে থাকে, ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের মধ্যে কমিশন বিনিময় প্রথার মাধ্যমে রোগীর আদান প্রদান করা হয়। ডাক্তার একটি নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম রেফার করে দেন, রোগীকে সেখান থেকেই দ্বিগুণ বেশি ফি'তে টেস্ট করাতে বাধ্য করা হয়। আর এই রোগী প্রেরণের মাধ্যমে ডাক্তারকে দেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ পার্সেন্টেজ। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা হয় লাখ লাখ টাকার মালিক।

এই যদি হয় সেবা খাতের নমুনা, তাহলে বলা যেতে পারে রোগী জবাই করার বাকি থাকে কোথায় ? অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার যেন দেখেও কিছু দেখে না।

এক্স ফাইভ ওয়ান
০১.১২.২০১২ ইং