মাকে একক ভালোবাসার অধিকার

জাফর ইদ্রিস
Published : 7 Nov 2011, 12:47 PM
Updated : 7 Nov 2011, 12:47 PM

মাকে নিরঙ্কুশ ভালবাসার অধিকার তার প্রত্যেকটি সন্তানের আছে। তবে মাকে একক অধিকারে রাখার অধিকার কাহারও নাই। আমার যুক্তিটা পাঠকের যদি বুঝে এসে থাকে তবে পরের লাইনটি বলি: সন্তান মায়ের একক অধিকারে থাকবে এটা পরম বাস্তব কিন্তু সন্তানের একক অধিকারে মা থাকবেন এটা চরম অবাস্তব। মাকে একক ভাবে ভালবাসা যায় কিন্তু একক ভাবে অধিকারে রেখে অন্য উত্তরাধিকারকে বঞ্চিত করা যায় না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই দেশকে মায়ের মত ভালবাসে। প্রতি নাগরিকেরই দেশকে ভালবাসার সমান অধিকার আছে কারণ সকলেরই এক দেশ এবং দেশকে ভালবাসার কোন বিকল্প দেশ নেই এবং সকলের কাছে দেশের স্বার্থও একই। কেহ যদি বেশী ভাল বাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তবে তা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। দেশের এক নেতা দাবী করছেন যে,তার চেয়ে দেশকে
বেশী ভালবাসার দাবিদার নেই। এখানে উল্লেখ করতে পারি যে,স্বাধীনতা বিরোধীরাও দেশকে তাদের দৃষ্টিতে ভালবেসে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমার এই মন্তব্যে হয়তো অনেকে আমাকে ভুল বুঝতে পারেন কিন্তু আমি বুঝাতে চেয়েছি যে দেশাত্ববোধ প্রতিটি মানুষের থাকে তবে ধ্যান ধারনার বা বুঝের পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু দেশটা আমার একক এই চিন্তাটা অমূলক। আমার এ কথা বলার অর্থ হল আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, যারা যে পথের বিশ্বাসীই হোক না কেন দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকই একমত, তবে মত ও পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। একজন রাজনীতিকের চেয়ে একজন সাধারণ মানুষ দেশকে কম ভালবাসেন এটা আদৌ ঠিক না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশকে নিয়ে নিজ স্বার্থ চর্চায় বেশী ব্যস্ত বিধায় বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে নিজেকে অগ্রগণ্য রাখেন। নাগরিকের ভাবনা হল মাকে বেশী ভালবাসি তা বক্তৃতার বিষয় নয়, কাজ দ্বারা প্রমানের বিষয়।

১৯৭১ সালে সাধারণ মানুষ মনের তাগিদেই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, কেহ তাদের জোড় করে নিয়ে আসে নাই। আর একটা প্রমান পাই যখন সাধারণ মানুষ বাংলা দেশের কোন বিজয় দেখে উৎফুল্ল হয় যেমন আমরা দুই একবার ক্রিকেটের বিজয় দেখেছি তখন পাড়া গাঁয়ের অশীতিপর বৃদ্ধের ফোকলা দাঁতে উচ্চ হাস্যের মাতমও দেখেছি।

এখন আমার এত কিছু অবতারণার মতলবটা কী তাই বলি,দুই বৃহত্তর দলের দুই নেত্রীর মধ্যে যদি কোন একজন বলেন আমি দেশকে বেশী ভালোবাসি,আমি বলবো বক্তব্যটি রাজনৈতিক। তিনি ও আমার বা সেই গেঁয় ফোকলা বুড়োর মত সমান ভালবাসেন। সমান ভালবাসার যুক্তি হল,যে মা তার অধিকার সকল সন্তানকে সমান দিয়েছে সেখানে অতিরিক্ত ভালবাসার সুযোগ কোথায়?

শুরুতে আমি বলেছিলাম মাকে একক ভাবে ভালবাসা যায় কিন্তু একক অধিকারে রাখা অধিকার স্রষ্টা বা রাষ্ট্র কাউকে দেন নাই কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদেরা চিরদিন ক্ষমতায় থাকার জন্য একক ভালোবাসার দাবিদার হয়ে উঠেন এবং তখনই ষোল কোটি মানুষ হয়ে যায় তাদের শাসিত প্রজা।

ধন্যবাদ