নারী অধিকার

জাফর ইদ্রিস
Published : 7 Feb 2012, 06:41 AM
Updated : 7 Feb 2012, 06:41 AM

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী সম অধিকার আন্দোলনে নারী সমাজের কিছু অংশ সোচ্চার প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলের দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের সংবিধান স্বীকৃত আইনকে সংস্কার করে অধিকতর সুযোগের দাবীতে সোচ্চার হচ্ছে। নারী পুরুষ উভয়ই স্রষ্টার সৃষ্ট জীব সুতরাং উভয়েরই সামাজিক অধিকার সম হওয়া উচিৎ এবং সমাজ ও ধর্মেও তা স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই সামাজিক বৈষম্য আচরণ কখনো গ্রহন যোগ্য নয়। নারীর সম অধিকার নিয়ে আপনাদের সমীপে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে লিখতে বসলাম।

রাষ্ট্রের এক ধরনে মতলববাজ রাজনীতিবিদ নারীদের দৃষ্টি তাদের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তাদের সম মর্যাদার প্রশ্ন তুলে তাদের আন্দোলনে নিপতিত করছে এবং সম অধিকার, সম উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয় রাষ্ট্রীয় আইনী কাঠাম পরিবর্তন করছে বা করতে চাচ্ছে। এখানে একটা প্রশ্ন আসে, এক নারী ও এক পুরুষ বা দুই পরুষ হলেই কি তারা সমান স্বত্বাধিকারী বলে দাবী করতে পারে ? সম যোগ্যতা বলতে একটা কথা আছে। যোগ্যতায় সমতা না থাকলে সম স্বত্বাধিকারী হতে পারেনা, তবে সামাজিক মর্যাদায় কখনো বৈষম্য হতে পারে না। আমার আজকের লেখায় নারীর কিয়দংশ আমার প্রতি বিরূপ হলেও হতে পারে। যোগ্যতার বলতে একটা ব্যাপার আছে এবং সেই যোগ্যতা যদি অসম হয় তার বিনিময়টা অসম হবে। সে ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর প্রশ্ন নয়, সকলের বেলাই পার্থক্য থাকবে। ধরুন একজন পুরুষ দশ কেজি ভার বহন করতে আর অন্য একজন পুরুষ বা নারী বিশ কেজি বহন করতে পারে, সে ক্ষেত্রে কি তারা সম অধিকার দাবী করতে পারবে ? তেমনি মেধার ক্ষেত্রেও পুরুষ পুরুষে বা নারী পুরুষে পার্থক্য থাকলে সে ক্ষেত্রেও স্বত্বাধিকার ও পার্থক্য থাকবে। যখনই একজন নারী ও একজন পুরুষে মধ্যে তুলনা আসবে তখন অবশ্যই একজন সবচেয়ে বেশী মেধাবান পুরুষের সাথে একজন সবচেয়ে বেশী মেধাবান নারীর তুলনা করতে হবে অথবা সমতার ভিত্তিতে তুলনা করতে হবে এবং তার ভিত্তি স্বত্বাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। একজন নারীর মেধা বা যোগ্যতা একজন পুরুষের মেধা বা যোগ্যতার সমান হতে পারেনা। ইতি
পূর্বে নারী সম উত্তরাধিকার বিষয় একটি লেখাতে বলেছিলাম যে, বাবা মা ছেলে মেয়েকে সমান শিক্ষিত করে ছেলের সেবা বাবা মা ভোগ করেন আর মেয়ের সেবা তার স্বামীর পরিবার ভোগ করে সুতরাং এখানে ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের সম্পদের সম উত্তরাধিকার হতে পারেনা।

এবার আসি সম অধিকার আন্দোলন কারীদের মূল অবস্থানে। নারীর সম অধিকার পাওয়া যেমন অধিকার তেমনি সম পরিমান অধিকার অন্যকেও দেওয়াও তার কর্তব্য। নারীর সম অধিকারের নামে অতিরিক্ত অধিকার ভোগে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে। নিজেদের অধিকারে তারা যখন সোচ্চার তখন পুরুষের অধিকারকে ও খাট করে দেখলে চলবে না। হয়তো আমাকে অনেকেই নারী বিদ্বেষী ভাবতে পারেন। আজকাল যাত্রীবাহি বাসে উঠলে দেখা যায় নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থাকে এবং কোন পুরুষ নারীর উপস্থিতিতে সেই আসনে বসতে পারে না যদি নারীর সংরক্ষিত আসন খালিও থাকে কিন্তু বাসের মধ্যে যে কোন স্থানে নারী বসার অধিকার রাখে। একজন পুরুষের পাশে এসে দিব্যি সে বসছে অথচ নারীর আসনে পুরুষে সাথে বসবে না। এটাকে কোন সম অধিকার বলবেন? শিক্ষা,চাকুরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা বিশেষ কোটা অধিকার ভোগ করে আবার মেধার ভিত্তিতেও সমান অধিকার পাচ্ছে তবে এটাকে কি সম অধিকার বলবেন ?

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন নারীদের সাবলম্ভী করতেই এই কোটা ব্যবস্থা কিন্তু মেঘে মেঘ অনেক বেলা হয়েছে। এখন দেশ পরিচালনা করছে নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী,শিক্ষার ফলাফলেও কোন কোন ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে সুতরাং সময় এসেছে প্রতিযোগিতা মুলক সমাজ ব্যবস্থার। আবার দেখা যাচ্ছে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের দাবী, তবে কেন ? প্রধান মন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী কি সংরক্ষিত আসন থেকে এসেছেন?

এবার একটা দুঃখ জনক ঘটনা বলছি। একদিন কোন একটা কোম্পানীর বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ গ্রহনের জন্য আমার ব্যাংকার স্ত্রীকে নিয়ে বেলী রোডে অফিসার্স ক্লাবে যাই, সময়টা সকাল আটটা। গিয়ে জানতে পারি যে সভা শুরু হবে নয় টায় তখন আমার সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই এক ঘন্টা কাছেই রমনা পার্ক সেখানে ঘুরে কাটিয়ে আসি এবং এর আগে কোন দিনই সকালের রমনা দেখি নাই। পার্কে গিয়ে দেখলাম একটা বসার ছাউনি এবং একজন ষাটোর্ধ ও একজনের পঁচিশ বছর বয়সী মহিলা বসে আছেন। ছাউনিটিতে প্রায় বিশ জনের বসার আসন আছে। আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনই সেখানে বসলাম তবে আমি ভিতরে না উঠে বাহির দিকে পা দিয়ে বসলাম। আমরা দুজন কথা বলতে ছিলাম এরই মধ্যে ষাটোর্ধ মহিলাটি এসে আমাদের বললেন এটা শুধু মাত্র নারীদের এবং পঁচিশোর্ধ মহিলাটির আপত্তিটি তিনি জানালেন। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলা এবং সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালাম এবং স্থান ত্যাগ করলাম কিন্তু নিজেকে খুবই অপমান বোধ করলাম। বাসে যেখানে পুরুষের পাশের খালী সিটটি দখলের জন্য নারী মরিয়া সেই নারী তার স্বাতন্ত্র্যের জন্য পঞ্চাশোর্ধ মানুষটিকে এরূপ অপমানের হেতু কী ? অনেক সময় ব্যাংকের বিলের লাইনে বা অন্যান্য কার্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দাবী
করে, তবে এটা কি সমতা?

সত্যিকার অর্থে যারা বিবেকবান পুরুষ তারা নারীকে শুধু সমান নয় স্বেচ্ছায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। যেমন, ঢাকা শহরে অধিকাংশ জমি বা বাড়ি নারীর নামে এবং তা সম্ভব হয়েছে পুরুষে বদান্যতায়। আর সংসারের অধিকাংশ কর্মধারা নারীর সম্মতিতেই পরিচালিত হয়। আবার লক্ষ্য করলে দেখবেন পুরুষের ঈদ হয় দুই শ টাকার পাঞ্জাবিতে আর তার স্ত্রীর জাম দানীর মূল্য পাঁচ হাজার টাকা, এটাকে কি সমতা বলবেন? কিছ স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নারীদেরকে নিজেদের ভোট ব্যাংক তৈরীতে সদা ব্যস্ত। তাই নারী আন্দোলনের নামে তাদের মনের কোমলতা বা সরলতার সুযোগ নিয়ে নারীকে তার আপন অস্তিত্বের বিরুদ্ধে লড়তে উদ্বুদ্ধ করছে। এখানে আর একটা বিষয় না বললেই নয় আর তা হলো, নারীর প্রাপ্য অধিকার, যাহা ইতি পূর্বে তাদের জন্য বিধানে সংরক্ষিত ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তা কিছু পরুষ দ্বারা বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে তা রোধ করা সম্ভব। যতই আইন কঠিন বা অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন আইন করে তার প্রয়োগে শীতলতা দেখান হয়, সে আইন কখনো নারীর মঙ্গল বয়ে আনবে না এবং যে সকল পুরুষ নারীর প্রতি বিরূপ ও সামাজিক বৈসাম্য মূলক আচরণ করে, আমি বলব এটা ঐ বিশেষ পুরুষটি ব্যক্তিগত সমস্যা, আর সে ক্ষেত্র ঐ পুরুষটিকে মোটিভেটেড করার দরকার তাই বলে সকল পুরুষ জাতিকে নয়।