শিশু নয়, বদ্ধ পাগল

জাফর ইদ্রিস
Published : 5 March 2012, 01:23 PM
Updated : 5 March 2012, 01:23 PM

কথাটি সকলের জানা এবং বহুল প্রচারিত, তবু লিখার সাধ হলো, যদি পক্ষগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক যে নামেই ডাকা হউক না কেন, মূল কথা হল রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত পক্ষ ব্যতিরেকে তৃতীয় পক্ষের তত্ত্বাবধানে পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচনে বিজয়ী পক্ষের হাতে দায়িত্ব ভার প্রদান পূর্বক অতঃপর প্রস্থান। এই তত্ত্বাবধায়কের প্রশ্ন এসেছিল বি এন পির সময় মাগুরার উপ-নির্বাচনের জটিলতা থেকে। তখন বি এন পি বুঝতে চায় নাই তত্ত্বাবধায়কের বিধি বিধানটি। তাদের মতে নিরপেক্ষ বলতে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি
সমষ্টি নাই শুধু শিশু বা পাগল ছাড়া, যাদের দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যায়।

আওয়ামী লীগ ছিল নাছর বান্দা। তার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই-ই চাই। আওয়ামী লীগের যুক্তিটাও ছিল প্রখর কারণ কাহারো প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা ভেঙ্গে গেলে কেহই আর তাকে বিশ্বাস করে না। আর বি এন পি সে বিশ্বাস নষ্ট করেছিল মাগুরার নির্বাচনে। তেমনি বি এন পি যে বলেছিল নিরপেক্ষ বলতে শিশু বা বদ্ধ পাগল ছাড়া কেহ-ই হতে পারে না তার প্রমাণও পরবর্তীতে আমরা কিছুটা পেয়েছি। তবে আস্থাহীন ক্ষমতাসীনের পরিবর্তে বিতর্কিত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অনেক গুণে শ্রেয় এই বিষয়টি যখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন বি এন পি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বাধ্য হয়।

মাঝ খানে অনেক চরাই উতরাই পার হয়ে আবার সামনে এসেছে জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। ইতি পূর্বের ঘটনাবলী সকলের জানা। মৃত্যু হল তত্ত্বাবধায়ক বিধান। একদিন যেমন বি এন পি বুঝতে চায়নি তত্ত্বাবধায়ক তেমনি এখন আওয়ামী লীগও সেই একই দোষে দুষ্ট। মনে হয় ময়লার এপিঠ আর ওপিঠ, একই গন্ধ। মসনদের কী যে মোহ তা যিনি না বসেছেন তিনি কোন দিনই বুঝবেন না, আর আমরা যারা আমজনতা তারা শুধু বুঝি, নেতা যখন বলেন আগুন, আমরা নেতার মুখের আগুন টেনে এনে বলি জ্বলবে। হায়রে মদন।

এবার বাস্তবতায় আসি, যখন আস্থা বা বিশ্বাসে পচন ধরে বা ঘাটতি দেখা দেয় তখন আমরা কোন সমস্যা সমাধানে জন্য তৃতীয় পক্ষকে ডাকি উহার বাস্তব সমাধানের জন্য এবং উহাই একমাত্র পথ। আমার যখন আপনার উপর আস্থা বা বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবে তখন যদি আপনি বলেন বিচারক আমি হব তবে তা কি আমি মানব ? বা কোন বিবেকবান মানুষ কি তা মানবে ? বি এন পি উপর যখন আওয়ামী লীগের আস্থা সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তখনই প্রয়োজন হয়েছিল তৃতীয় পক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক। তৃতীয় পক্ষ যে নিরপেক্ষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই, তবে শত ভাগ না হলেও হারটা গদিসীনদের চেয়ে কিছু বেশী নিরপেক্ষ থাকবে। মন্দের ভাল, মন্দের চেয়ে উত্তম। আজকের আস্থা সঙ্কট দূর করার জন্য আওয়ামী লীগকে তৃতীয় পক্ষ মানতেই হবে অন্যথায় আমাদের সাধারণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়কের ইস্যু ছাড়া তেমন কোন বড় ইস্যু বিরোধিদের দেখিনা। জনতার ইস্যুগুলো সকল পক্ষের কাছে গৌণ, গদিটাই মুখ্য, সুতরাং দাবীটা মেনে নিয়ে বাকি দুটি বছর আমজনতাকে নিরবিছিন্ন কর্ম ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ দিন। আর বিরোধীদলকে সর্বশেষে একটা অভিনন্দন জানাব এই বলে যে তারা হরতাল থেকে সরে এসে এই তিন বছরে দেশের শিল্প কারখানা তথা ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক কর্ম-ঘণ্টার সাশ্রয় করে দিয়েছে যার ফলশ্রুতিতে অর্থ মন্ত্রীর সাত ভাগ প্রবৃদ্ধি হলে হতেও পারে।

সবাইকে ধন্যবাদ।