
বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গেল প্রথমবারের মতো। সারা দেশ আজ টিভির সামনে ছিল, দারুণ উপভোগ করেছে বাংলাদেশের খেলা। কিন্তু আমাদের আনন্দের সময় কিছু মানুষকে কি আমরা বাদ দিয়ে দেই আমাদের হিসাব থেকে?
সপ্তাহখানেক আগে বিবিসি বাংলার খবরে শুনলাম, ভারতের এক আদালত (সম্ভবত ত্রিপুরায়) এক রায়ে বলেছে কয়েদিদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার অধিকার আছে। এই রায়ের পর ওই রাজ্যের কারাগারগুলোর কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে।
শুরুতে বলেছিলাম, আমরা কি আমাদের বেশ কিছু মানুষকে এই আনন্দের মধ্যে বাদ দিয়েছি? তাদের কথা ভুলে গেছি? আমাদের সাধারণ কয়েদিরা কি ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখছে? আমি নিশ্চিতভাবে জানি না। কিন্তু না জানলেও এই দেশকে যতোটা চিনি তাতে নিরাপদেই বলা যায় – না, ওই মানুষগুলোর জন্য খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়নি।
নোয়াখালী অঞ্চলের একটা প্রবচন এরকম – “ছডি (চটি) জুতার আবার ফিতা!”। খুব অসম্ভব, অকল্পনীয় বিলাসী প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে এই প্রবচনটি খুব ব্যবহৃত হয়। আমি জানি, কয়েদিদের জন্য বিশ্বকাপ খেলা দেখার আয়োজন করাকে অনেকের কাছেই চটি জুতার জন্য ফিতার প্রত্যাশার মতোই মনে হবে।
আমাদের অনেকেই ভাববো, কয়েদিদেরকে জেলখানায় পাঠানোই তো হয়েছে শাস্তি দেয়ার জন্য। তাই ওদের জন্য খেলা দেখে আনন্দ পাবার প্রস্তাব তাদের শাস্তিকে লঘু করে দেবে। আর কেউ কেউ ভাববেন ঘৃণিত ওই অপরাধীদের জন্য এমনভাবে ভাবার কী আছে! ওরা পচে গলে মরুক ওই জেলখানায়। আমরা তো সেই জাতি যারা সামান্য পকেটমারকে হাতেনাতে ধরতে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলি।
আমরা যারা মনে করি শাস্তি দিয়ে আর শাস্তি দেবার ভয় দেখিয়ে সমাজকে অপরাধমুক্ত করা যাবে তার ভয়ঙ্কর ভ্রান্তির মধ্যে আছি। ক্রিমিনোলজির (বিশেষ করে সাইকোলজিক্যাল ক্রিমিনোলজি) কিছু ব্যাসিক ধারণা নিলেই আমরা দেখবো শাস্তি আর শাস্তির ভীতি কখনো মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে না। শাস্তি দিয়ে শোধরানোর নামে আমরা আমাদের অপরাধীদেরকে আরো বড় অপরাধী বানাই, নতুন নতুন অপরাধী উৎপাদন করি। তাহলে অপরাধীদের শোধরানোর উপায় কী? সে আরেক আলোচনা। আরেকদিন করা যাবে।
আপাতত অন্তত এটুকু কি আমাদের কয়েদিদের জন্য করতে পারি না যে, আমাদের কয়েদিরাও আমাদের পুরো জাতির সাথে খেলা দেখার আবেগে ভাসবে, আনন্দে হাসবে, কষ্টে কাঁদবে? ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দেই, আমাদের পাশের দেশ ভারত এটা করে ফেলেছে। আমরা কেন করবো না? শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের প্রায় সব সূচকে ভারতের চাইতে এগিয়ে। এই যায়গায় আমরা ওদের চাইতে পিছিয়ে থাকবো কেন?
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
বিষয়টা বিবেচনার দাবী রাখে! আবার যখন ভাবী পেট্রোল বোমা মেরে যারা নিরীহ মানুষ জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে; তারা পুড়িয়ে মারার মত এতেও আনন্দ পাবে, তখন আপনার কথা মেনে নিতে পারি না। আফটার অল আমি এই সমাজেরই মানুষ!
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
সুকান্ত দা,
কেমন আছেন? ব্লগে আসাই হয় না, অনেকদিন পর এলাম। স্বাভাবিকভাবেই আপনি পেট্রোল বোমা মারা মানুষগুলোর ওপর খুব ক্ষিপ্ত। কিন্তু সমাজে আমরা যখন অপরাধীদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাইবো, তখন পেট্রোল বোমা মারা মানুষ, ধর্ষক, খুনী সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আর আমাদের উদ্দেশ্য কোনভাবেই প্রতিশোধ নেয়া হওয়া উচিৎ না, আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ কীভাবে এই অপরাধীদের স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। এটা নিয়ে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। কিন্তু দীর্ঘ অনভ্যাসের কারণে ইদানিং লিখতে আলসেমি লাগে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনেক ভাল থাকুন।
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
যারা কারাগারে থাকে তারা সবাই অপরাধী, কিন্তু তাদের সবাই অমানুষ না। তাই তাদের মুক্তির বিধান আছে।
তবে তাদের টেলিভিশন দেখতে দেয়াটা উচ্চাভিলাষী কি-না বুঝতে পারছি না।
দূরপাল্লার ভ্রমণ-জনিত কারণে খেলাটা দেখতে পারিনি। জাহেদ ভাই, বলেনতো এই দুঃখ কোথায় রাখি?
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
জুলফিকার ভাই,
খেলাটা মিস করেছেন, দুঃখ পেলাম 🙁 । আপনি যেটাকে উচ্চাভিলাসী কিনা এটা নিয়ে কনফিউজড আমি সেটাকে মোটেও উচ্চাভিলাসী বলে মনে করি না। আসলে এইসব মানুষদেরকে সুন্দরভাবে রেখে, তাদের নিয়ে কাজ করে এই অপরাধী মানসিকতা শোধরাতে হবে। না হলে আমরা সারা দেশকে কারাগার বানিয়েই ফেলতে পারবো, কিন্তু সমাজে অপরাধ কমবে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনেক ভাল থাকুন।
কাজী রাশেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ জাহেদ উর রহমান ভাই। আপনার সুন্দর লেখা পড়ে অবশ্যই চিন্তার খোরাক পাওয়া যায়। আইনে আছে অপরাধকে ঘৃণা করো অপরাধী কে নয়। সো এটা নিঃসন্দেহে ভালো প্রস্তাব।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
কাজী রাশেদ,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।