কাল রাজশাহী বিমান বন্দরে একটা প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষানবিশ পাইলট, তামান্না মারা গেছেন, গুরুতর আহত হয়েছেন তার প্রশিক্ষক। স্বাভাবিকভাবেই এটা আজ দেশের প্রায় সব পত্রিকায় বড় খবর হয়েই এসেছে।
আজকের প্রথম আলো সহ প্রায় সব পত্রিকার প্রথম পাতায় এসেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানের ছবি, আর ইনসেটে মৃত প্রশিক্ষণার্থী তামান্নার ছবি। প্রথম আলো তার দ্বিতীয় পৃষ্ঠার বেশ বড় নিউজের শিরোনাম করেছে ‘বৈমানিক হবার স্বপ্নের মৃত্যু’। আরো কয়েকটি পত্রিকার প্রথম পাতার নিউজের হেডলাইন এরকম –
কালের কন্ঠ – আবার প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, প্রাণ গেল নারী বৈমানিকের
যুগান্তর – পাইলট হওয়া হল না তামান্নার
ইত্তেফাক – জীবন্ত দগ্ধ প্রশিক্ষণার্থী পাইলট, শেষবারের মতো উড়তে যাওয়াই কাল হলো তামান্নার
বাংলাদেশ প্রতিদিন – স্বপ্ন পূরণ হল না তামান্নার
মানবজমিন – প্রশিক্ষণ বিমানের সঙ্গে পুড়ে ছাই হলো তামান্নার স্বপ্নও
বলাই বাহুল্য সবগুলো পত্রিকায়ই তামান্নার পরিবার আর তার অনেক তথ্য দেয়া আছে – বাবা কী করেন, ঢাকায় বাসা কোথায়, গ্রামের বাড়ি কই, সেখানে কে থাকে, আর কয় ঘন্টা উড়লে তামান্না প্রাইমারি সনদ পেতো ইত্যাদি।
কাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবি হয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে ৫ জনের, নিখোঁজ রয়েছে আরো কিছু। ‘মাত্র’ ৫ জনের মৃত্যু আমাদের সর্ব কাজের কাজি (তাঁর মন্ত্রণালয়ের আসল কাজ ছাড়া) নৌ পরিবহনমন্ত্রীকে অনেক স্বস্তি দেবে, তার ওপর মৃতরা হল ট্রলারে চড়া গরীব। স্বস্তির কথা কেনই বা বলছি, স্বস্তিতে তিনি থাকেন সবমসময়ই – লঞ্চ ডুবে মরুক পাঁচ বা শত শত, ওসব তাঁকে কোনদিন বিচলিত করে না।
ওই লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত একটি কন্যাশিশুর নাম দেখলাম অনলাইন পত্রিকায়, মুনিয়া, বয়স ৪। আচ্ছা মুনিয়া কি স্বপ্ন দেখতো? হয়তো বা দেখতো, শিশুতোষ স্বপ্ন। বাবার কাছে সস্তা কোন খেলনা বা পোষাকের আব্দার থাকলে সেটা পাবার স্বপ্ন, বা মাঝে মাঝে মাংস-পোলাও খাবার স্বপ্ন। গরীব বাচ্চার স্বপ্ন আর কী ই বা হবে?
আচ্ছা ওর বাবা ওর ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতেন? একটু লেখাপড়া করাবেন, একটা স্বচ্ছল ছেলে দেখে বিয়ে দেবেন, আর তিনি দিতে পারেননি এমন কিছু স্বচ্ছলতা পাবে তাঁর কন্যাটি। না, বেঁচে থাকলে এমনকি আকাশ কুসুম কল্পণাতেও মুনিয়া পাইলট হবার মত প্রকান্ড স্বপ্ন দেখতো না, তার বাবা মেয়েকে হয়তো স্কুলশিক্ষক হিসাবে দেখতে পেলেই বর্তে যেতেন – নিতান্ত ‘নীচু’ মানুষের ‘তুচ্ছ’ সব স্বপ্ন।
পাইলট হবার প্রকান্ড স্বপ্নের কাছে ওসব স্বপ্ন হাস্যকর। তাই আমাদের পত্রিকাওয়ালারা ওসব ছাপে না। না, দোষ ওদের না, আমরা, পাঠকরাই ওসব খবর ‘খাই’ না, কারণ মুনিয়াদের স্বপ্ন তামান্নাদের স্বপ্নের তুলণায় আদৌ ‘গ্ল্যামারাস’ কিছু না।
লঞ্চ-ট্রলার ডুবিতে মুনিয়া আর তাদের স্বপ্নের মৃত্যু আমাদের দারুণ গা সওয়া। আমাদের নৌ মন্ত্রীও জানেন এটা ভাল করে, তাই তিনি ব্যস্ত থাকেন ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে জুতা মারা থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করা পর্যন্ত যাবতীয় কাজে। ওদিকে মরে মুনিয়ারা আর তাদের পরিবার-স্বজন, হাজারে হাজারে।
Facebook: https://www.facebook.com/zahed.urrahman.77
শফিকুল ইসলাম বলেছেনঃ
জ্বি ভাই, আমরা খাইনা একথা যেমন সত্যি , খেলে শুধু আমাদের পেটের দুঃখের যায়গাটুকু ভরবে মাত্র। দু চারদিনের মধ্যে হজম হয়ে যাবে। কারণ এর চেয়ে বেশি দুঃখে ভরা খাবার আমাদের সামনে এসে পড়বে। আসলে আমারা জনগনরা এমন এক মালিকানা পেয়েছি যেখানে বলা হয় এই সব জমি তোমার কিন্তু জমিতে কী চাষ হবে সে বিষয়ে কথা বলবে না অথবা বলেও লাভ হবে না। আপনার আগের লেখাটা পড়ে যেমন দুঃখ বোধ জন্ম নিয়েছে এটাতেও তেমন। দুঃখ পেতে পেতে কয়েক প্রজন্ম পার করে দিলাম ফলাফল কী ? ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারনার জন্য।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
শফিক ভাই,
আপনি বলেছেন,
খুবই খাঁটি কথা। নিজেই অনেক সময় ভাবি লিখে আদৌ কি কিছু হয়, হবে? একটা পোস্টও লিখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে –
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
পোস্টের লিঙ্ক দিয়েছিলাম, হল না। লিঙ্ক হল –
http://blog.bdnews24.com/Zahed/147966
এলডোরাডো বলেছেনঃ
মুনিয়া কিংবা মুনিয়ার হতভাগ্য বাবারা স্বপ্ন দেখে না। ওদের স্বপ্ন দেখা নিষেধ আছে।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
এলডোরাডো,
আপনি ঠিকই বলেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
রেজওয়ান মোর্শেদ বলেছেনঃ
জাহেদ ভাই- সঠিক বলেছেন। গ্লামারাস খবরে আমাদের আগ্রহ বেশি থাকার দরুন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা প্রিন্ট মিডিয়ায় তা মটা অক্ষরে লেখা হয় এবং শিরনামে চলে আসে। যুগে যুগে এই বৈরিতা লক্ষণীয়। ভাল লিখেছেন ধন্যবাদ।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
মোর্শেদ ভাই,
মিডিয়া এখন বিরাট বিনিয়োগ আর সেটার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা করার মাধ্যম। তাই ওটা আর কখনো সাধারণ মানুষের কথা বলবে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনেক ভাল থাকুন।
গৌতম হালদার বলেছেনঃ
প্রথমত: প্রত্যেকটি অনাকাংখিত মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি, তাহোক জাহিদ, তামান্না কিংবা মুনিয়া, যাদের উদাসীনতাই এই সব মৃত্যু নয় বরং বলা উচিত হত্যাকান্ডের কারণ, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
দ্বিতীয়ত: অসংখ ধন্যবাদ আমার অন্তরের কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য।
আর সবশেষে, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
গৌতম দা,
আপনার মন্তব্যের জন্য নেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
শফিকুল ইসলাম বলেছেনঃ
জাহেদ ভাই,
“আমিও ভন্ড অনেকের মত…” পড়লাম।আমি ব্লগে নতুন। ব্লগের ব্যাপারে আমি স্বার্থপর। আমি নিজের জন্য লিখি। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যখন বিষিয়ে তোলে তখন নিজেকে হালকা করার জন্য লিখি যা আপনি আপনার লেখায় উল্লেখ করেছেন। তবে লেখালেখির উপযোগিতা নিয়ে আমার মত হলো তা শুধু রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিবর্তন আনবে তা নয়। আমি আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হচ্ছি, আমার চিন্তার জগত শাণিত হচ্ছে ইত্যাদি কিন্তু কম নয়। আপনার ব্যতিক্রম এবং স্বতন্ত্র লেখাগুলো আমার চিন্তার জগতের খোরাক যোগায় , এরকম আরো অনেকের। আপনার অনেক লেখায় মন্তব্য করার ভাষা খুঁজে পাইনা। শুধু বারবার পড়ি।