‘সজ্জন’, ‘ক্লিন’ সৈয়দ আশরাফ কি থাকবেন ‘উজিরে খামোখা’?

জাহেদ-উর-রহমান
Published : 10 July 2015, 07:13 AM
Updated : 10 July 2015, 07:13 AM

গুজবে কান না দেয়া নিয়ে আমাদের দেশে প্রবচন আছে; সেই আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফও। গত বুধবার যখন তাঁকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনিও সাংবাদিকদেরকে ওই আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গুজবই সত্যি হল – জনাব আশরাফ তাঁর দফতর হারালেন, এমমনকি গুজবে তাঁর মন্ত্রণালয়ে দায়ীত্বপ্রাপ্ত হিসাবে যাঁর নাম শোনা গেছে সেটিও সত্যি বলে প্রমাণিত হল। অবশ্য দফতর হারালেও সৈয়দ আশরাফ হারাননি মন্ত্রীত্ব। এ এক আজব বস্তু – 'দফতর বিহীন মন্ত্রী'; এর একটা মজার টার্ম আছে – 'উজিরে খামোখা'।

জনাব সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ে যেতেন না। গত সরকারের ৫ বছরে তিনি নাকি স্রেফ ২৫ দিন গিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ে। আর এবারের দেড় বছরে নাকি গেছেন দুইদিন, থেকেছেন সাকুল্যে ৫ ঘন্টা! এটা অবিশ্বাস্য!

ঠিক কোন কারণে জনাব আশরাফকে সরানো হল, সেটা নিয়ে নানা জল্পণা-কল্পণা হয়েছে পত্রিকায়, টিভির টক শো'তে। আপাতত দায়িত্বের প্রতি তাঁর নির্লিপ্ততাকেই কারণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যখন মন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে 'উন্নয়ন' এর জন্য প্রতি সাংসদকে ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্ধের প্রস্তাব হয়, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এটাই নাকি প্রধানমন্ত্রীকে চরমতমভাবে ক্ষুব্ধ করে।

আমাদের দেশের মন্ত্রীদের মধ্যে জনাব আশরাফ এক ব্যতিক্রম। কাল রাতের টক শো'তে দেখেছি এমনকি বিএনপিপন্থী সাংবাদিক এবং কলামিস্টরাও তাঁর প্রশংসা করছেন। তাঁকে সবাই 'সজ্জন' মানুষ হিসাবে মেনে নিয়েছেন, সাথে এটাও স্বীকার করছেন, ব্যক্তিগত আর্থিক দুর্নীতির বাইরে তাঁর একটা 'ক্লিন ইমেজ' আছে। এমনকি পাশাপাশি কেউ কেউ এটাও বলার চেষ্টা করছে, তিনি অফিসে না গেলেও তাঁর মন্ত্রণালয়ে তো বিরাট কোন অনিয়মের কথা জানা যায় না। আমি অবশ্য এই যুক্তি মানতে চাই না, ওই আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না, আমার এই পোস্টের বিষয় অন্য।

টিভির খবরে জনাব আশরাফকে দেখে যেটা খুব ভাল লেগেছে সেটা হল, মত্রীত্ব হারিয়ে আর সব মন্ত্রীর মত তাঁর মাথায় 'ঠাডা' পড়েনি – হাসিমুখে পার্টি অফিসে গিয়েছেন, সেখানকার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। মন্ত্রীত্ব পাওয়াকে 'সাতজন্মের ভাগ্য' মনে না করলেই কেবল এমন স্বাভাবিক থাকা যায়। তাঁর এই চেহারা দেখে এটা যৌক্তিকভাবেই অনুমান করে নেয়া যায়, আর যাই হোক, মন্ত্রীত্বের মাধ্যমে 'সাত প্রজন্মের বংশধর'দের পায়ের ওপর পা তুলে খাবার ব্যবস্থা করে যাবার জন্য মন্ত্রী হননি তিনি।

এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, জনাব আশরাফ কি 'দফতরবিহীন মন্ত্রী' হয়ে থেকে যাবেন? ওনার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন করছি কারণ, তাঁর 'সজ্জন' এবং 'ক্লিন ইমেজ' আছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেলওয়ের 'কাল বিড়াল' ধরার ঘোষণা দিয়ে টাকার বস্তাসহ ধরা পড়ে নিজেই কাল বিড়ালে পরিণত হওয়া জনাব সুরঞ্জিত বাবুর ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন করিনি। বরং তাঁর পদত্যাগের পর করেছি বিদ্রুপ (সুরঞ্জিত বাবু নির্দোষঃ তাঁহার পদত্যাগ মানি না, মানবো না)। সেই লোক দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার মত মেরুদন্ডহীন হওয়াতে আমি অবাক হইনি, বরং এটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছি।

কোন কাজ না করে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন এবং অন্য সব সুবিধা এবং প্রোটকল নেয়া কি আদৌ নৈতিক? 'উজিরে খামোখা' হওয়া সুরঞ্জিতকে মানালেও জনাব আশরাফকে কি মানায়?

আমরা জানি, এই দেশে হাজার হাজার কোটি সরকারি টাকার নয়-ছয় হয় আবহমানকাল থেকেই। সেই বিচারে একজন দফতরবিহীন মন্ত্রী পোষার খরচ তো নস্যি। কিন্তু আমি এই বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে দেখতে চাই। একজন সৈয়দ আশরাফ কি এই 'উজিরে খামোখা' থেকেও পদত্যাগ করে এই অনৈতিক পদটার প্রতি ঘৃণা দেখিয়ে আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিতে পারেন না? একটা অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারেন না?

আমাদের সমাজে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্লিন ইমেজের অধিকারি একজন সজ্জন মানুষ হিসাবে পরিচিত সৈয়দ আশরাফের কাছে এটা কি আমাদের খুব বেশি চাওয়া?