বজ্রপাতে ৬৫ মৃত্যুঃ আবার বলা যাক সেই পুরনো কৌতুক

জাহেদ-উর-রহমান
Published : 14 May 2016, 11:30 AM
Updated : 14 May 2016, 11:30 AM

বজ্রপাতে মৃত্যু এই দেশের নিত্যকার খবর। টিভির স্ক্রলে এই খবর দেখা যায় মাঝে মাঝেই, আমাদের কারো চোখে পড়ে, কারো পড়ে না। চোখে পড়লেও বা কী? এই দেশ এক মৃত্যু উপত্যকা এখন; প্রতিদিন বেশ কয়েকটা খুন বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু আমাদের দারুণ গা সওয়া। কোন গ্রামের কোন চাষা বা চাষার ছেলে 'ঠাডা পইড়া' মারা গেছে, তাতে আমাদের মতো 'সচেতন' নগরবাসীর কী ই বা আসে যায়? তাই আমরা টিভি'র টক শোতে কথা বলি না, কলাম লিখি না, বা 'ব্লগাই' না।

বজ্রপাতে গত দুই দিনে সারাদেশে একসাথে মারা গেছে ৬৫ জন (বিস্তারিত দেখুন)। এর মধ্যে খোদ ঢাকায়ও মারা গেছে ২ জন। লক্ষিণীয় ব্যাপার ঢাকায় মৃত্যুর এই খবর প্রায় সব সংবাদ মাধ্যম আলাদাভাবে জানিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম সেটাই খাওয়ায়, যেটা আমরা খেতে চাই।

বজ্রপাতে বাংলাদেশে মৃত্যুর ভয়াবহতা কাল নতুন করে তৈরী হয়নি, এটা চিরকালীন। যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউট' এর ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর সারা বিশ্বে বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতি বছর ২৫০ থেকে ৩০০ বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ আসলেও প্রকৃত সংখ্যাটা ৫০০ থেকে ৮০০ বলে জানিয়েছেন বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করা 'সার্ক স্টর্ম প্রোগ্রাম' এর ঢাকার গবেষকরা। (বিস্তারিত পড়ুন)।

ভাবতে অবাক লাগে কী অবলীলায় আমরা প্রতি বছর এত্তোগুলো মৃত্যুকে মেনে নিয়েছি! মানি, বজ্রপাতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কঠিন। কিন্তু মানুষকে যথেষ্ট সচেতন করা গেলে এই মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতো অনেকটাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সাথে কথা বলে জানতে চেয়েছি, বজ্রপাতের সময় কী করা উচিৎ তাঁরা জানেন কিনা। একজনও আমাকে সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি। এই দায় সরকার এড়াবে কী করে? জানি, কিছু গরীবের মৃত্যু ঠেকানো কোন 'দৃশ্যমান' উন্নতি নয়, এর চাইতে ফ্লাইওভার বানানো ঢের ভালো 'উন্নয়ন'।

কিন্তু এই মৃত্যু উপত্যকায় আজও অপঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা যদি হয় কিছুটা বেশী, বা মারা যায় কোন 'ওজনদার' তাহলে আমাদের ভেতরটা কিছুটা জেগে উঠে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন দেশে অনেক মানুষ মারা গেলে আমাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু যখন মিরসরাইতে একটা সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে ৪০ বাচ্চা মারা যায়, বা মারা যায় তারেক মাসুদ এর মতো 'ওজনদার' কেউ, তখন আমাদের টনক নড়ে কিছুটা হলেও। বজ্রপাতে দুই দিনে ৬৫ জন মানুষের মৃত্যু আমারদের সংবেদনশীলতার শর্ত পূর্ন করেছে নিশ্চয়ই। তাই তো মিডিয়া আজ পূর্ন বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য করণীয় তে। কিন্তু আসল দায়িত্ব যার, সেই সরকার কি কিছু করবে এই মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো ঠেকাতে? সম্ভবত না। কারণ…..একটা কৌতুক।

আমার এই ব্লগে (পাহাড় ধসে মৃত্যু আর একটি পুরনো কৌতুক) দেয়া পুরনো কৌতুকটা এখানেও দারুণ প্রাসঙ্গিক, যেমন প্রাসঙ্গিক আরও অনেক ক্ষেত্রেই। তাই কৌতুকটার একটু চর্বিত-চর্বন এর লোভ সামলানো গেল না….

একটা জাহাজের রেলিং এর পাশে এক আমেরিকান, এক জাপানী আর এক বাংলাদেশী দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলতে বলতে আমেরিকান হঠাৎ ইচ্ছে করে তার হাতের মোবাইল ফোনটি সমূদ্রে ফেলে দিল। এটা দেখে বাংলাদেশী অবাক হয়ে গেল। এটা দেখে আমেরিকান তাকে আশ্বস্ত করে বলল – আরে সমস্যা নেই, এসব তার দেশে অনেক আছে। কিছুক্ষন পর জাপানীটি তার হাতের ল্যাপটপটি ফেলে দিল সমূদ্রে। বাংলাদেশী আবার অবাক। জাপানীরও একই উত্তর – সমস্যা নেই এসব তার দেশে অনেক আছে।

এবার বাংলাদেশী তার পাশ থেকে একজন মানুষকে ধরে সমূদ্রে ফেলে দিতেই আমেরিকান আর জাপানী হায় হায় করে উঠল। কারণ জানতে চাইতেই বাংলাদেশী নির্বিকারভাবে বলে উঠল – সমস্যা নেই, ওসব আমার দেশে অনেক আছে।