নারায়নগঞ্জ শিক্ষা হয়ে থাকুক দুই নেত্রীর কাছেই

জাহেদ-উর-রহমান
Published : 25 Oct 2011, 06:29 AM
Updated : 25 Oct 2011, 06:29 AM

গত বেশ কিছুদিন থেকেই নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন 'টক অব দ্যা কান্ট্রি'। আওয়ামী লীগের ক্রমবর্ধমান অজনপ্রিয়তা, আর বি, এন, পির ক্রমশ মনোবল ফিরে পাওয়া – এই দুই মিলিয়ে নারায়নগঞ্জে একটা জমজমাট লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এই গল্পের মধ্যেও গল্প আছে। মনোনয়ন নিয়ে শামীম ওসমান, আর সেলিনা হায়াত আইভিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নাটক হল অনেক। নানা জল্পনা-কল্পনার পরে শামীম ওসমান পেয়েছেন দলীয় সমর্থন। ভোটের আর মাত্র কয়েকদিন বাঁকী। আমরা অনেক উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি নির্বাচনের ফলাফল দেখার জন্য।

ঢাকায় আমি দেখেছি আমার চারপাশের বেশীরভাগ সাধারন মানুষ আশা করছিলেন যে আইভি সমর্থন পাবেন। কিন্তু না, নারায়নগঞ্জবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই মানুষটি সেটা পেলেন না। অথচ গত বি, এন, পি – জামাত জোট সরকারের সময় যখন জনাব শামীম ওসমান দেশে থাকার সাহসই পাননি, তখন আইভি বিদেশের সংসার ছেড়ে দেশে ফিরে এসে নির্বাচন করেন এবং নির্বাচিত হন। একটা দরিদ্র দেশের সীমিত অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মধ্যে থেকে মানুষের সব প্রয়োজন মেটানোতো দূরের কথা, ন্যুনতম প্রয়োজন মেটানোও ভীষন কঠিন। কিন্তু এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তৎকালীন পৌরসভার মেয়র হিসাবে তাঁর সফলতা অনেক। জনদরদী পিতার যোগ্য উত্তরসূরি উঠতে পেরেছেন তিনি। নারায়নগঞ্জে আমার পরিচিতদের মধ্যে খোঁজ নিয়ে বুঝতে পেরেছি কতোটা জনপ্রিয় তিনি। আমি জানিনা আওয়ামী লীগ কেন এত বড় বোকামী করলো – তাঁকে না দিয়ে সমর্থন দিল অত্যন্ত বিতর্কিত এবং অজনপ্রিয় জনাব শামীম ওসমানকে, যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আছে যে ভাইদেরকে সাথে নিয়ে তিনি নারায়নগঞ্জে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এতে কি দলের অন্য নেতাদেরকে এই ম্যাসেজ দেয়া হোল না যে মানুষের জন্য রাত-দিন খেটে কাজ করে, সৎ থেকে কোন কোন লাভ নেই, বরং সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারলে দল পাশে থাকবে?

এদিকে প্রতিদিন পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে আইভির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা থেকে শুরু করে পোস্টার ছেড়া পর্যন্ত এমন কোন হয়রানি নেই যেটা করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতারা সব নারায়নগঞ্জ গিয়ে আইভির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন, এমনকি প্রশাসনের বিরুদ্ধেও উঠেছে পক্ষপাতিত্বের শক্ত অভিযোগ। এত কিছুর পর কি আইভী পারবেন?

আইভির অবশ্যই পারা উচিৎ। আমরা সাধারন, শান্তিকামী মানুষরা চাই আইভির জয় হোক। কারন তাঁর জয় হবে পেশীশক্তি, কালো টাকা আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের গালে প্রচণ্ড চপেটাঘাত। আর এই জয় (যদি হয়) হবে আমাদের দুই নেত্রীর জন্য একটা মুল্যবান শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শিখবেন ঠেকে, আর আশা করি বিরোধীদলীয় নেত্রী শিখবেন দেখে। তাঁরা বুঝবেন যে এই দেশে মাস্তানির রাজনীতির সময় প্রায় শেষ – মানুষ রাজনৈতিক মাস্তানি দেখতে দেখতে ত্যাক্ত-বিরক্ত। আগামীতে সংসদ এবং অন্যান্য নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচনের সময় তাঁরা এটা মাথায় রাখবেন এবং সৎ, মানুষের সেবাকারী নেতাদেরকে মনোনয়ন দেবেন।

প্রিয় নারায়নগঞ্জবাসী
কেউ কি পড়ছেন এই লিখাটা? সারাদেশের সব মিডিয়ার (টিভি, সংবাদপত্র) দৃষ্টি এখন আপনাদের দিকে। আপনারাই পারেন সারা দেশের মানুষকে এবং সব রাজনৈতিক দলকে দারুন একটা ম্যাসেজ দিতে। যে আইভি আপনাদের নানা প্রয়োজনে আপনাদের পাশে থেকেছেন, মাস্তানী-চাঁদাবাজি করেননি, কোন লোভ বা ভয়কে পাত্তা না দিয়ে তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। সেটা না করা হলে অকৃতজ্ঞতা হয়ে যাবে। আর এই দেশের পঙ্কিল রাজনীতির মধ্যে সুস্থ রাজনীতির একটা সুন্দর প্রতীক নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ, আপনারা সেটা হতে দেবেন না – দেখিয়ে দিন ক্ষমতা সত্যি সত্যি আপনাদেরই হাতে। আমাদের মতামতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যেন আর কোনদিন কেউ কোন বিতর্কিত, অজনপ্রিয় মানুষকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে।

আর আইভি যদি নির্বাচিত নাও হন, আমরা বিশ্বাস করি তিনি অনেক ভোট পাবেন; সেটাও সবাইকেই সুস্থ রাজনীতির জয়ের কথাই জানিয়ে দেবে। আশা করি আমাদের দুই নেত্রীও জানবেন, শিখবেন, এবং ভবিষ্যতে কাজ করবেন সেভাবে। সৎ, মানবতাবোধসম্পন্ন, গুনী রাজনীতিবিদদেরকে সামনে নিয়ে আসবেন তাঁরা। 'রাজনীতিবিদ' শব্দটাকে তাঁরা তুলে নিয়ে আসবেন গালির পর্যায় থেকে।

কথাগুলো লিখেই মনে প্রশ্ন জাগল –

দুই নেত্রী কি আদৌ পড়তে পারেন জনগণের মনের কথা?