নেতাদের শাস্তিতে কী হবে বিএনপির?

কবির য়াহমদ
Published : 6 Dec 2011, 08:57 AM
Updated : 9 Sept 2018, 11:10 AM

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে শীর্ষ নেতাদের শাস্তি হলে কী পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বিএনপি- এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনায় যেমন আওয়ামী লীগ আগ্রহ দেখাচ্ছে; তেমনিভাবে এটাকে এড়িয়ে যেতে পারছে না বিএনপিও, তারাও জানিয়েছে প্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ইঙ্গিতের প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে বিএনপি; যেখানে ছিল তাদের শঙ্কার কথাও।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠিত গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িত ছিলেন। তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপিত মামলার কাগজপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণে ইতোমধ্যে উপস্থাপিত। এখন অপেক্ষার কেবল আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি তথা রায়ের।

১৪ বছর আগের সেই নারকীয় ঘটনা, হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর যেকোনও দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক এক অধ্যায়। প্রকাশ্যে-দিনেদুপুরে এর আগে একটা দলের শীর্ষনেত্রীসহ নেতাকর্মীদের মেরে ফেলার চেষ্টার মত এমন প্রলয়ঙ্করী কাণ্ড কেউ করেছে কিনা এনিয়ে তর্কবিতর্ক চলতে পারে; তবে এটা যে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বাজে এক ঘটনা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ছিল সেটা, এবং সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। ওই হামলায় সরাসরি সরকারকেই দায়ী করা সম্ভব। কারণ সেখানে জড়িত ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ও মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ প্রশাসনের কিছু কর্তাব্যক্তি। তাই সে হামলাকে 'সরকারি হামলা' বলেই আখ্যা দেওয়া সম্ভব।

তাছাড়া হামলার পর সেসময়ের সরকারের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ মন্ত্রীদের অনেকেই হামলাকে আওয়ামী লীগের 'নাটক' বলে অভিহিত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন এমনও অপপ্রচার চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। অথচ সেই হামলার শিকার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা নিজে এবং তার জীবন বিপন্ন হয়েছিল। নেতাকর্মীদের মানববর্ম তাঁকে রক্ষা করেছিল গ্রেনেড হামলা এবং এরপরের উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ থেকে।

২১ অগাস্টের ভয়াবহ ওই ঘটনার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এর বিচার করেনি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এত বড় একটা ঘটনার পরেও দলটি অনুশোচিত হয়নি। উলটো দলের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজনের এমন সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়ে গেছে পুরো দল ও তাদের সমর্থকেরা। অপরাধীরা তাদের সময়ে নানাভাবে পুরস্কৃত হয় ক্ষমতা ও পদ-পদবিতে। অন্য অনেক ঘটনার বাইরেও এর প্রমাণ মেলে তদন্তে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের আসামির তালিকায় পরবর্তীতে নাম অন্তর্ভুক্তিতে। অর্থাৎ বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিতে বিএনপি-জামায়াত তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল তাদের এই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা যারা আগে থেকে ওয়াকিবহাল। বিচারের দৃশ্যমান হয় তাদের ক্ষমতা ছাড়ার পর। এরপর আওয়ামী লীগ পুনর্বার ক্ষমতায় আসার পর বিচারিক পর্যায়ে গেছে এই মামলা।

এই হামলার ঘটনার ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও সর্বশেষ শুনানি হয়নি। বর্তমানে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের আশা সেপ্টেম্বরেই এই শুনানি শেষ হবে; যদিও গত বছরও এমনটা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। এখানে দীর্ঘ অপেক্ষা আছে তবু এরপরেও আশাবাদী হতে হচ্ছে কারণ এর সঙ্গে আইনমন্ত্রীও শোনাচ্ছেন আশাবাদের কথা। তিনি বলছেন এই সেপ্টেম্বরে রায়ের কথা। এমন এক পর্যায়ে এ মামলার পক্ষ-বিপক্ষ সকলের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়াটাই স্বাভাবিক।

মামলার আসামির দীর্ঘ তালিকায় যারা তাদের প্রায় সকলেই বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। আসামিদের মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধের মামলায় এবং জঙ্গি নেতা আব্দুল হান্নান অন্য এক মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। অন্য আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর ইতোমধ্যে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন, সে মামলা এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক হিসেবে লন্ডনে আশ্রিত। এর বাইরে হারিছ চৌধুরীসহ একাধিক আসামিও পলাতক, কয়েকজন আছেন জেলে।

এমন পরিস্থিতিতে ঘোষিতব্য রায়ে এই সকল আসামিরা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সেটা নিশ্চিতভাবেই দল হিসেবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলটির হালের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ফের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সেটা দলের জন্যে কোনোভাবেই সুখের খবর নয়। তাছাড়া মামলার গুরুত্ব ও হামলার ভয়াবহতায় এই মামলায় তার দণ্ডটা কঠোর হতেও পারে। এত এত মানুষ হত্যার হুকুমের আসামি কিংবা পরিকল্পনাকারী হিসেবে শাস্তি যাই হোক সেটা নেহায়েত নমনীয় হবে, এমন ধারণা করা যায় না। তবে বিচারের ভার যখন বিচারিক আদালতে তখন শাস্তি কী হয় তা দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।

মামলার বিচারিক ধাপগুলো শেষের পর্যায়ে আসার সাথে সাথে এনিয়ে দুইপক্ষের অভিযোগ ও পালটা অভিযোগের জোয়ার বইছে। এই মামলার রায়ের ফলে বিএনপি ফের নেতৃত্ব সঙ্কটে পড়বে এমন এক মন্তব্য দিয়ে হালে এই আলোচনার শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

২৭ অগাস্ট নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বলেছেন, 'বিএনপি তখনো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, এখনো জানায়। ওই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বিএনপি। তিনি বলেন, 'কারণ, আমরাও চাই এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।'

এখানে লক্ষণীয় যে, মির্জা ফখরুল ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলাকে এখনও 'অরাজনৈতিক' বলছেন। অথচ এই হামলাকে কোনোভাবেই অরাজনৈতিক আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নাই। আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশে সকলেই ছিলেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী; যে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে হামলা হয় তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী; মোহাম্মদ হানিফ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবের হোসেন চৌধুরীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের কেউই অরাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না; হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চারদিন পর নিহত হওয়া আইভী রহমান অরাজনৈতিক কেউ ছিলেন না; সর্বোপরি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সন্ত্রাসবিরোধী সেই সমাবেশও অরাজনৈতিক কোনও কর্মসূচি ছিল না।

এই হামলায় বিএনপি জড়িত ছিল না এমন দাবি মির্জা ফখরুলের। তার দাবি, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা সাব-জেলে বন্দি থাকার সময় এই মামলার (গ্রেনেড হামলা) পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির তাঁকে (শেখ হাসিনা) জিজ্ঞেস করলে ১৬১ ধারায় গৃহীত জবানবন্দিতে তিনি (শেখ হাসিনা) কোথাও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।'

এর আগে গত ২৪ অগাস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, 'বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে, হাওয়া ভবনের সরাসরি পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সেদিন ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এখন এই মামলার রায় হচ্ছে, এজন্য সবাই খুশি। বিএনপি কেবল অখুশি। সেপ্টেম্বরে রায় হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। এ কথা শুনে বিএনপি চিন্তিত। তারা জড়িত বলে তাদের এই গাত্রদাহ।'

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই কথার অর্থ হলো তিনি (ওবায়দুল কাদের) জানেন যে কী রায় হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বলা এসব বক্তব্যকে কোনো বিচারেই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার কিংবা আইনের শাসনের পক্ষে বলা যাবে না। একমাত্র স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই শুধু এমন ঘটনা সম্ভব।'

এদিকে, রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যগুলো রায়ে প্রভাব ফেলতে বিএনপির এমন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায়, 'কীভাবে প্রভাব পড়বে? আমিসহ ৫০০ জন তো এখনও পঙ্গু। কেউ অর্ধপঙ্গু, কেউ পুরো পঙ্গু। এই হত্যাকাণ্ডের কী বিচার হবে না? বিএনপি তো আলামত পুড়িয়ে ফেলেছিল। এফবিআইকে তদন্ত করতে দেয়নি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে আসতে দেয়নি। জজমিঞা নাটক সাজিয়েছিল। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের, এই নৃশংস গ্রেনেড হামলা যা রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে- এর বিচার তো তারা করেনি। প্রহসনমূলক একটা তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ছিল হাস্যকর।'

আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই প্রতিক্রিয়ার বাইরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে এই রায় নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি যতই এই হামলার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করুক এই হামলায় তারা জড়িত ছিল সেটা অনেকটাই পরিষ্কার। মামলার আসামিদের তালিকা এবং এই হামলা নিয়ে বিএনপির অবস্থান সেটারই সাক্ষ্য দেয়। এখনও বিএনপি এই হামলাকে 'অরাজনৈতিক ঘটনা' বলেও দাবি করে- এসবসহ আরও অনেক ঘটনা থেকেই হামলায় দলটির সম্পৃক্ততার বিষয়টির প্রমাণ করে জোরালোভাবে।

মামলার রায়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে বিএনপির রাজনৈতিক সঙ্কট বাড়বে বলে যে মন্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সেটা বাস্তবতাবিবর্জিত নয়। এমনিতেই একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না, তার ওপর একুশে অগাস্টের মামলার রায়ে ফের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনিতেই অবশ্য দেশে ফেরা কঠিন তার, মামলার দণ্ডপ্রাপ্তির বাইরেও তার জন্যে অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের অভাব রয়েছে। এছাড়া জাত রাজনীতিবিদ বলতে যা বুঝায় তারেক রহমান তা নন। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল বলে তার ক্ষমতা ও প্রভাব ছিল দল ও দলের বাইরে। নিজ যোগ্যতায় তিনি দলের নেতৃত্বে আসেননি, এসেছেন কেবল জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া দম্পতির পুত্র এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার কারণেই। ফলে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার দক্ষতা কিংবা যোগ্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আগের দণ্ডপ্রাপ্ত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মানি লন্ডারিং মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এই দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি। মামলাগুলোতে ব্যক্তি তারেক রহমানের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় ব্যক্তিই কেবল নয় বিএনপির শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবেও তিনি অভিযুক্ত। ফলে এই মামলার দণ্ড এককভাবে তার নয়, দলেরও। এই মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয়রা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে দল হিসেবে এর দায় গিয়ে পড়বে বিএনপির ওপরই। নারকীয় সে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দায় দলটির ওপর পড়লে সুচিন্তার মানুষদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। এর রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

আদালত বিভিন্ন মামলার রায়ে তাদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকেন। এই মামলার ভয়াবহতায় দল হিসেবে বিএনপিকে দায় দেওয়া হয় এমন কোনও পর্যবেক্ষণ বিচারিক পর্যায়ের কোনও একটা ধাপে আসলে দলটিকে সরাসরি দায়ী করার পথ প্রশস্ত হতে পারে। এই শঙ্কার মাঝেও থাকতে হচ্ছে দলটিকে। কেবল নেতা হারানোই নয়, দলের অস্তিত্ব সঙ্কটের এমন এক পর্যায়ে উপনীত বিএনপি। মামলার আসামিদের তালিকায় যেসকল বিএনপি নেতাদের নাম নাই, তাই তাদেরও নির্ভার থাকার সুযোগ সীমিত। দল আনুষ্ঠানিক অভিযুক্ত হলে দলের নামে রাজনীতি কঠিন হয়ে ওঠতে পারে!

একুশে অগাস্টের হামলার মামলায় কে কী দণ্ড পাচ্ছেন সেটা কেউ জানে না, তবে আসামিদের তালিকায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি এবং তারা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ভয়াবহ ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়বে দলটি। নেতা হারালে নেতা আসার সম্ভাবনা থাকলেও, দলের নামোল্লেখ করে কোন পর্যবেক্ষণ আসলে এই ভাবমূর্তিজনিত ক্ষতি নিশ্চিতভাবেই অপূরণীয়। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই হামলার মামলায় অভিযুক্ত, কিন্তু আদালত যখন রায় দেবেন সে রায় দল হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে গেলে তখন সেটা হবে প্রমাণিত সত্য। সেদিনের পর থেকেই হয়তো প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দলটি!