ইনকা রাজারা, ক্যান্সারের ভয় আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা (সম্রাজ্ঞীরা)

জাহেদ-উর-রহমান
Published : 11 March 2012, 08:17 AM
Updated : 11 March 2012, 08:17 AM

কাল ১২ মার্চ। রক্তের মধ্যে উঁচু মাত্রার অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিয়ে টানটান উত্তেজনায় দেশবাসী অপেক্ষা করছে কী হয় দেখার জন্য। আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী 'গদি' দখল করার লড়াইয়ে কতোটা এগিয়ে যাবেন আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আগামী নির্বাচনেও গদিটা রক্ষা করতে পারবেন কিনা সেই আলোচনা এখন তুঙ্গে। না, আজও ১২ মার্চ নিয়ে লিখছি না; তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর 'খেলা' উপভোগ করছি মন দিয়ে আর দেখছি দিবাস্বপ্ন, ভাবছি কিছু 'অপ্রাসঙ্গিক' কথা।

দক্ষিন আমেরিকার ইনকা সভ্যতার কথা আমরা অনেকেই জানি। বিশেষ করে কিছুদিন আগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনের তালিকায় পেরুর মাচু পিচু নির্বাচিত হবার পর অনেকেই নতুন করে এর সম্পর্কে জেনেছেন। তো ইনকা মিথোলজিতে দেখা যায় তাদের নানা সমস্যায় (প্রাকৃতিক দূর্যোগ, মহামারী) দেবতার উদ্দেশ্য বলি দিত। এর মধ্যে পশু থেকে শুরু করে থাকতো মানুষের রক্ত, অঙ্গ কিংবা মানুষের জীবন।

জানলে অবাক হতে হয় যে সমস্যা যখন হতো অনেক বড়, তখন বলি দানে নিজ থেকেই এগিয়ে আসতেন স্বয়ং রাজারা। প্রয়োজন অনুসারে তাঁরা বলি দিতেন নিজ দেহের রক্ত, আস্ত একটা অঙ্গ বা জীবনটাই। তাঁদের যুক্তি ছিল মানুষকে সমস্যা থেকে মুক্তি দেবার জন্য দেবতার উদ্দেশ্যে যেহেতু বলি দিতেই হবে, দেবতা নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের চাইতে রাজার রক্ত, অঙ্গ বা জীবন পেয়ে বেশী তৃপ্ত হবেন। আহ! যদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা (পড়ুন সম্রাজ্ঞীরা) যদি এভাবেই জীবন বাজি রেখে জনগনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে কাজে নেমে পড়তেন! জানি ভাবছেন একটা তৃতীয় শ্রেণীর দিবাস্বপ্ন দেখছি। হ্যাঁ এটা তৃতীয় শ্রেনীর দিবাস্বপ্নই। অবশ্য যে মানুষ বাস্তবে কিছু পায় না, সে দিবাস্বপ্ন দেখবে, এতে আর অবাক হবার কি আছে? আর "স্বপ্নে খাইলে পোলাউ খামু না ক্যান?"।

বাদ দেই মিথ আর দিবাস্বপ্নের কথা; আসি এখনকার পৃথিবীতে। ইনকা, মায়া সভ্যতার মহাদেশ দক্ষিন আমেরিকার অনেক দেশ, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়ায় গত শতকের শেষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এসেছে অনেকজন মহান নেতা। জনগনের পক্ষ নিয়ে তাঁরা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়িয়েছেন দেশী রক্তচোষা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। তাঁদের কথা বলবো আরেকদিন – আজ এটুকু ভুমিকা দিলাম অন্য একটা কারনে।

আমরা অনেকেই জানি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের ক্যান্সার ধরা পড়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিছুদিন আগে কিউবায় তাঁর দ্বিতীয়বারের মত অস্ত্রোপচার হোল। দক্ষিন আমেরিকান নেতাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঘটনায় একটা কাকতালীয় ব্যাপার কিন্তু আছে। আরো বেশ কয়েকজন নেতা প্রায় একই সময়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা হলেন – আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিষ্টিনা কির্চনার, ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিলমা রিউসেফ, ব্রাজিলেরই সাবেক প্রেসিডন্ট লুলা দা সিলভা, প্যারগুয়ের প্রেসিডেন্ট ফার্নান্ডো লুগো।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিষ্টিনা কির্চনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর শাভেজ একটা বিবৃতি দেন যেটা অনেককে হাসিয়েছে আবার অনেককের মাথায় একটা সিরিয়াস চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে। শাভেজ ধারনা করছেন দক্ষিন আমেরিকার এতো নেতার একসাথে ক্যান্সার হবার পেছনে আমেরিকার কোন গোপন হাত আছে। তাঁর ধারনা আমেরিকা গোপন কোন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে যেটা দিয়ে কারো দেহে দূর থেকেই ক্যান্সার তৈরি করা যায়। এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত না হওয়া বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে সতর্ক করে দেন এই ব্যাপারে।

ব্যাপারটা সত্য না মিথ্যা সেটা এই আলোচনার উদ্দেশ্য না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা ইনকা রাজাদের মত মানুষের কল্যানে জীবন বিসর্জন দেবেন সেটা দিবাস্বপ্ন, মানি। কিন্তু তাঁরা তো হতে পারতেন দক্ষিন আমেরিকার নেতাদের মত। এটাও কি দিবাস্বপ্ন?

এখন আবার দেখা গেল দক্ষিন আমেরিকার নেতাদের মত হলে আবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা কী 'গোপন সুত্রে' খবর পেয়ে আগেই জানতেন যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর দেশের ভেতরের লুটেরাদের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগনের কল্যানের জন্য কাজ করলে আমেরিকা ক্যান্সার বানিয়ে দেবে শরীরে? তাই তারা মানুষের কল্যানে কাজ করতেন না? আর এখন তো সেই ভয় প্রকাশ্যেই এসেছে। এই ক্যান্সারভীতি কি আমাদের আত্মপ্রেমিক দুই সম্রাজ্ঞীকে আর একটা কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থায় আসতে দেবে?

জানতে চাইলে তাঁরা বলবেন হয়তো আমরা তো দেশ এবং জনগনকে উদ্ধার করতেই চেয়েছিলাম কিন্তু ক্যান্সারের ভয়ে ………