শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়

জহিরুল চৌধুরী
Published : 30 June 2012, 04:30 PM
Updated : 30 June 2012, 04:30 PM

শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়, কিন্তু রাজনীতি দিয়ে দূর্নীতি ঢাকা যায় না। দূর্নীতির রোগটি দগদগে। যেভাবেই ঢাকা যাক, কাপড় ভেদ করে ক্ষত বেড়িয়ে আসে। দুর্ভাগ্য, ক্ষমতার মদ মত্ততায় মানুষ তা আমলে নেয় না। যেমন আমলে নেয় না আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত কোন সরকারও।

সরকারের দায়িত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতির তীর ছুঁড়ে বিরোধী দল বিএনপিকে ঘায়েল করতে করতে দলটির এখন ফোটা থালা হাতে রাস্তায় নামার যোগাড়। এমন অবস্থা হয়েছিল আওয়ামী লীগেরও। ২০০৬ সালের ওয়ান ইলিভেনে সামরিক বাহিনী এসে উদ্ধার করেছিল বিএনপির সর্ব্ব্যাপী কড়াল থাবা থেকে দেশবাসীকে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা উভয়ই ভুলে গেছেন সে সব কাহিনী। ওয়ান ইলিভেনের আশীর্বাদে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায়!

শেখ হাসিনা যাদের অর্থ আর আনুকূল্যে ক্ষমতায় তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে এদের কাউকে ঠাই দিয়েছেন উপদেষ্টার মর্যাদায়, কাউকে বানিয়েছেন মন্ত্রী। ক্ষমতা হাতে পেয়ে এরা দান-খয়রাত, আর নিজেদের থলি ভরতে সরকারকে করে তুলেছেন চরম দূর্নীতিগ্রস্থ। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাহকো (SAHCO) কোম্পানির কর্ণধার যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তেমনি একজন। কৈ এর তেলে কৈ ভেজে তিনি নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসা। এতে দেশের বারোটা বাজলেও তাতে তার কি যায় আসে? এরশাদ আমলে সামরিক জান্তার ছত্রচ্ছায়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন সাহকো। শিল্প প্রতিষ্ঠান যতটা গড়েছেন, তার চেয়ে বেশি সম্পদ কামিয়েছেন কমিশন এজেন্টের ফাঁপর দালালি করে। তার সম্পদ আহরণের কাহিনী আলাদীনের চেরাগের যাদুকরি কাহিনীকেও হার মানায়।

যাই হোক, যোগাযোগ মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক একাধিক বার দূর্নীতির অভিযোগ এনেছে। সরকারের উচিত ছিল শুরুতেই তদন্তে যাওয়া। তা না করে গায়ের জোড়ে তারা এ অপবাদ উড়িয়ে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল এরশাদের সময়কার স্বৈরাচারের একজন ঘনিষ্ঠ আমলা। নিজের একটি কেতা দুরস্থ ভাবমূর্তি থাকলেও বয়স এবং অন্যান্য কারনে সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে যাবার এক ব্যক্তি। দেশের স্বার্থ কখনো তার কাছে বড় হবার নয়।

আজ যখন বিশ্বব্যাঙ্ক পদ্মা সেতুতে তাদের সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নিল, তখন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি সাবেক দুই উপদেষ্টা আকবর আলী খান এবং মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন- এতে সেতুর ব্যয় বেড়ে যাবে। কারন বিশ্বব্যাংকের ঋণের সুদ, মালয়েশিয়ার শর্তের বেড়া জাল থেকে অনেক নমনীয়। আজ এই একটি কারনে আওয়ামী লীগ হয়তো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা হারালো। এ পরিণতি থেকে দলটির উপলব্ধি করা উচিত- পচা শামুকে পা কাটে। পচা শামুকদের নিয়ে রাজনীতি করা যায়, কিন্তু তাদের হাতে দেশের দায়িত্ব দেয়া যায় না।

শেষ কথা
বিশ্বব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে দেশের ক্রেডিট স্কোরের উপর প্রতিক্রিয়া নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে যে –BB ক্যাটাগরির সুবিধা ভোগ করছে, তা নেমে আসতে পারে CCC ক্যাটাগরিতে। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য প্রদত্ত বিদেশী ঋণের সুদের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ যে সুদের সুবিধা ভোগ করে, তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। একই সঙ্গে দুদককেও প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে এর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।

নিউইয়র্ক, ৩০ জুন ২০১২