প্রফেসর ইউনূসের প্রতি কেন এই প্রতিহিংসা?

জহিরুল চৌধুরী
Published : 19 August 2012, 05:56 AM
Updated : 19 August 2012, 05:56 AM

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম পর্বের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) ছিলেন ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য মরিয়া। আর এ আমলে হয়ে উঠেছেন নোবেলের জন্য বেশামাল। আমার মনে পড়ে ২০০০ সালে জাতিসঙ্ঘের মিলেনিয়াম সামিট কভার করার জন্য যখন প্রথম নিউইয়র্কে এসেছিলাম দৈনিক সংবাদের হয়ে, সে সময় তিনি বোস্টন গিয়েছিলেন তার ১১তম পিএইচডি'র জন্য। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র সংবাদ কর্মীরও সেদিন মনে হয়েছিল- নিউইয়র্ক থেকে বোস্টন আসা-যাওয়া এবং পিএইচডি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ বাবত আট ঘন্টার অপচয় কতটা অপ্রয়জনীয়! কিন্তু তার যাজক-উপদেস্টারা তাকে এমনই উপদেশ দিয়েছিলেন যে, আর মাত্র কয়েকটি পিএইচডি হলেই নোবেল পুরষ্কার আঁচলে বাঁধা পড়বে। দুর্ভাগ্যবশত নোবেলটি তার কোলে না পড়ে পড়লো প্রফেসর ইউনূসের কোলে। নোবেলের ৭৫ বছরের ব্যবধানে নাকি বাংলাদেশের ভাগ্যে ছিল 'শান্তি'র ট্রফিটি। যে শান্তির ট্রফিটি পার্বত্য শান্তির সুবাদে ছিল শেখ হাসিনার ভাগ্যে, সেটিই ইউনূস সাহেব বাগিয়ে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ছল ছাতুরিতে! কি সাংঘাতিক জোচ্চুরি!

গ্রামীণ ফোনকে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে শেখ হাসিনা ভেবে ছিলেন তিনি ইউনুস সাহেবকে কিনে নিয়েছেন। সেই ইউনূস সাহেবই কি না ধৃষ্টতা দেখালেন তার রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশ করে! আর এই বিকল্প ভাবনা কি না মানুষকে প্রচলিত দ্বি-দলীয় পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ করে! শেখ হাসিনা দমে যাবার পাত্রী নন। তার পণ্ডিত মন্ত্রী সুরঞ্জিতের ভাষায়- "বাঘে ধরলেও ছাড়ে, শেখ হাসিনায় ধরলে ছাড়ে না"। পূনরায় ক্ষমতা লাভের সুযোগে এবার তিনি প্রফেসর ইউনূসের সব ক'টি বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে চান! আমরা তাহলে এবার ফিরে দেখি কি ছিল প্রফেসর ইউনূসের "আমার দল"এ? কেন তিনি এমন একটি ভাবনা প্রকাশ করে প্রতিহিংসার দ্বার খুলে দিলেন? আমি এখন মনে করতে পারছি- প্রফেসর ইউনূস তার এই রাজনৈতিক ভাবনাটি ব্যক্ত করেছিলেন "গণ ফোরামের কনভেনশনে" ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনে।

(আমি "আমার দল"-এর চৌম্বক অংশটুকুই এখানে তুলে ধরতে চাই)
রাজনীতি মানুষকে ভালোবাসার পেশা
রাজনীতিকে আমি ভয় করি। দেশের রাজনীতির হাল হকিকত দেখে কেউ একে ভালবাসে এ কথা আমার মনে হয় না। রাজনীতি যারা করে না তারা যেমন একে ভয়ের চোখে দেখে, আমার মনে হয় রাজনীতি যারা করে তারাও একে ভয়ের চোখে দেখে। অথচ রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল মানুষের একটি মহান পেশা। মানুষকে সেবা করার পেশা। সমাজকে পথ দেখাবার পেশা। মানুষকে ভালোবাসার পেশা।

যে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল মানুষকে ভালোবাসার পেশা, সেটা আমাদের হাতে রূপ নিয়েছে হিংসা চরিতার্থ করার পেশায়, বিদ্বেষকে ঘনীভূত করার পেশায়, হানাহানি, এমনকি খুন খারাবির পেশায়। তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এক বন্ধুকে দিয়ে আরেক বন্ধুকে হত্যায় উদ্বুদ্ধ করার পেশায়। বলুন এ অবস্থায় রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতিকে ভয় না করে উপায় কী? রাজনীতিবিদরা আইনের শাসনের কথা বলেন, কিন্তু তারাই আইন মানেন না। সমাজে যারা আইন ভাঙ্গেন তারা এদেরকে প্রশ্রয় দেন। তাদেরকে নেতার সারিতে বসিয়ে দিতেও কুন্ঠা বোধ করেন না। রাজনীতিবিদরা গণতন্ত্রের জন্য শেষ রক্ত বিন্দু দেয়ার ঘোষণা দেন, কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্র পরিহার করে চলেন।

রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অপ্রধান সুরগুলো হারিয়ে যায় না। কখনো তার মধ্য থেকে কোন কোন সুর রূপান্তরিত হয়ে অন্য সুরে পরিণত হয়। তাই রাজনীতিবিদের ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মানুষের মনের সুর ধরতে পারেন। যে সব সুর মানুষের মনে এখনো জাগেনি। কিন্তু জাগার সময় এসেছে, সে সুর তিনি জাগাতে পারেন। পরিস্থিতির সহযোগিতায় সে সুরকে তিনি প্রধান সুর করতে পারেন। যিনি পারেন, তিনিই সার্থক নেতা।

আমাদের রাজনীতি
আমরা সর্বত্র সকল সময় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করি। এটা আমাদের অবসর বিনোদনের একটা সহজ উপায়। বুদ্ধি চর্চারও একটা পন্থা। আমাদের আশা অনেক। কিন্তু তা পূরণ হওয়ার লক্ষণ কখনো আমরা দেখি না। যে কাজ যেভাবে অগ্রসর হবে বলে আশা করেছিলাম সেটা সেভাবে অগ্রসর হয় না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কখনো কোন রীতিরেওয়াজ নিয়ম ও আইনের ছক ধরে চলে না। প্রত্যাশিত পথকে এড়িয়ে চলাই যেন এর নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। …।

মানুষ রাজনীতি করবে মানুষের কল্যাণের জন্য। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নয়। প্রতিপক্ষ যারা তারাও দেশের মানুষের সমষ্টি। তাদের ঘায়েল করারতো কোন অর্থই হয় না। তারাও এ দেশের নাগরিক। তাদের ইচ্ছার দাম অন্য কারো দামের চাইতে কোন অংশে কম নয়। রাজনীতি হবে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য। আমরা রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোর সবকিছু ভূলে গিয়ে একটি তাৎক্ষণিক লক্ষ্য নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ি- প্রতিপক্ষকে ঠেকাও। এরজন্য একটাই যুক্তি। প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় এলে তারা আমাদের অস্তিত্ব রাখবে না। এক দল আরেক দলের প্রতি এরকম হুমকি হয়ে পড়লে দেশের মানুষ কি আর নিরাপদ থাকতে পারে?

মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই রাজনীতি
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই রাজনীতি। মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্যই রাজনীতি। অথচ আমরা রাজনীতি করে যাচ্ছি মানুষকে বিভক্ত করার জন্য। কোন কথাটি দেশের মানুষকে বেশি করে বিভক্ত করবে আমরা খুঁজে পেতে সে কথাটিই আবিষ্কার করি এবং কারণে অকারণে উঁচু গলায় সেটা উচ্চারণ করি। কোন কথাটি অন্য দলের মানুষের মনে বেশি আঘাত দেবে সেটা ব্যবহার করার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত। …।

আমাদের রাজনীতি বিভক্তিকরণের রাজনীতি
শব্দের লেবেলে এটে মানুষকে বিভক্ত করা কেন? আমাকে যে লেবেলের নীচেই রাখুন না কেন, আপনি কি আমার বাঙালীত্ব আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবেন? দুনিয়ার সামনে বাংলাদেশী হিসেবে আমার পরিচয় কি আপনি মুছে দিতে পারবেন? আমি নিজের পরিচয় সম্বন্ধে সচেতন থাকতে চাই। কিন্তু তার কোনটাকে নিয়ে আমি বাড়াবাড়ি করতে চাই না। আমার মূল পরিচয়েই আমি সব চাইতে বেশি প্রশান্তি খুঁজে পাই। আমি মানুষ। আমি সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীর সকল জীবের আত্মসম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার উপর। …।
বিভক্তিকরণের রাজনীতি আমাদেরকে প্রতিশোধের রাজনীতির দিকে নিয়ে গেছে এবং যেখানে এক গোলক ধাঁধার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে।

ক্ষমার মধ্যেই শক্তি সুনিশ্চিত হবে
…। এই দ্রুত অগ্রসরমান পৃথিবীতে নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার অধিকারটুকু আদায় করতে হলেও আমাদের সামনে এগুতে হবে। নতুন কাজে হাত দিতে হবে। আমাদেরকে চলতে শিখতে হবে। আমাদেরকে চলার গান কে শেখাবে? বারো কোটি মানুষকে (এখন ষোল কোটি) নিয়ে একটা দিন বসে থাকলেও যে আমরা অন্য জাতির তুলনায় বহুটা পথ পিছিয়ে যাই! আমাদেরকে তো কোন্দল নিস্পত্তির আশায় বসে থাকার একটা মুহূর্তও সময় নেই। বারো কোটি মানুষকে বসিয়ে রাখা দূরের কথা, একটি মানুষকেও বসিয়ে রাখার উপায় আমাদের নেই। চারদিকে করার মতো এতো সব কাজ ছড়িয়ে আছে, মানুষ বসে থাকবেও বা কেন?

একই পথে ঘুরপাক খাচ্ছি
আমি যতবারই আমার রাজনৈতিক এক নেতাবন্ধুর কাছে অভিযোগ করি যে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো (তার দলসহ) মেলায় পথ হারানো শিশুর মত একই পথে বার বার আসছে-যাচ্ছে। ততই ক্ষেপে গিয়ে সে আমাকে বলেঃ দ্যাখো, বাজে বকো না। যেটা বুঝ না সেটা নিয়ে কথা বলো না। ব্যাঙ্ক চালানো আর রাজনীতি এক জিনিস নয়। আমি তাকে বুঝাই- আমি রান্না করতে না জানতে পারি, কিন্তু কোনটায় স্বাদ হলো কোনটায় হলো না তাও বলতে পারবো না?

একটি রাজনৈতিক দলের দিবাস্বপ্ন
…। আমার ধারণা আমদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গতিহীনতার, দিকনির্দেশণাহীনতার সবচেয়ে বড় কারন হলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতে দলের কর্মীদের অবস্থান ও ভূমিকা। দলের কর্মীরা কতকগুলো শব্দ অথবা বাক্যকে পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কর্মীদের মোট কাজের মধ্যে বৃহত্তর অংশ হচ্ছে জনসভা সফল করার জন্য লোকজন জড়ো করা। হরতাল সফল করার জন্য যথেস্ট ভয়ভীতির আয়োজন রাখা, বিশেষ বিশেষ দিবস উদযাপনের আয়োজন করা (পোস্টার লাগানো, চিকা মারা ইত্যাদি), দলের উচ্চতর পর্যায়ে সম্মেলনে লোকজন যোগাড় করে নিয়ে যাওয়া, বড় নেতারা সফরে এলে তাদের জন্য যথাযোগ্য অভ্যর্থনার আয়োজন করা, স্থানীয় তদবির করা, প্রতিপক্ষকে সামাল দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা, দলের ক্ষমতা প্রকাশ করার সুযোগ হাতছাড়া না করা, ইত্যাদি।

কর্মীই হবে দলের নীতি-নির্ধারণের কারিগর
আমার কল্পিত রাজনৈতিক দলে আমি কর্মীকে দলের একজন সংগঠক, দলের নীতি বাস্তবায়নে একজন প্রথম কাতারের সৈনিক এবং দলের নীতি নিরধারণে একজন তাত্ত্বিক হিসাবে দেখতে চাই। আমার দিবাস্বপ্নের রাজনৈতিক দলটিকে এখানে আমরা "আমার দল" নামে অভিহিত করবো (নামটা মন্দ হয়নি… পত্রিকার পাতায় "আমার দলের প্রার্থী পরাজিত" একথা পড়তে যে কারো মনে কষ্ট হবে।) এই দল গ্রাম থেকে শুরু হবে। গ্রামের তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পাঁচজন তরুণকে নিয়ে কর্মীদের একটি গ্রুপ হবে। …। তরুণরা যারা আমার দলের নীতি ও কার্য পদ্ধতিতে বিশ্বাসী হবে তাদেরকে গ্রুপ গঠন করার পর দলের কর্মী হবার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আবেদনের পর তাদেরকে স্থানীয়ভাবে দলের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্ম পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সফল্ভাবে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করার পর তাদেরকে এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণার্থী কর্মী হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

গ্রুপ নিজেদের মধ্যে সভাপতি এবং সচিব নির্বাচন করবে। প্রতি বছর নির্দিস্ট দিনে সভাপতি ও সচিবের নির্বাচন হবে। এবং দায়িত্ব হস্তান্তর হবে। …। "আমার দলের" কাজ একযোগে সকল গ্রামে শুরু হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যে গ্রামে একটি ছেলে বা একটি মেয়েকে "আমার দলের" কর্মসূচিতে বিশ্বাসী পাওয়া যাবে, তাকে নিয়েই কাজ শুরু করা যাবে। ছেলেটি বা মেয়েটির কাজ হবে আরো চারজন ছেলে বা মেয়েকে উদ্ধুদ্ধ করা এবং একটি গ্রুপ গঠনের দিকে অগ্রসর হওয়া।

গ্রাম পর্যায়ের গ্রুপের সদস্যরাই হবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মী। তিনি হবেন দলের নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি মানুষের সংগঠক। সমাজ পরিবর্তনের সংগঠক। আগামীতে সমাজ যেখানে পৌছুতে চায়, তার আয়োজক। তিনি মানুষ থেকে শেখেন, দলকে শেখান। তিনি দলের কথা মানুষকে বোঝান। মানুষের সঙ্গে দলের দৈনন্দিন সম্পর্কের স্নায়ুতন্ত্র তিনি।…। তার দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই দলকে সজীব ও চলমান রাখবে।

"আমার দলের" রাজনীতি গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করার অর্থ এই হবে না যে, এর মাধ্যমে দ্রুত রাজধানীতে ক্ষমতার আসনে বসা যাবে। রাজধানীতে ক্ষমতার আসনে বসার লক্ষ্যকে "আমার দল" মূল লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করবে না। এই দলের লক্ষ্য হবে যে কোন অবস্থান থেকে মানুষের মধ্যে দ্রুত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন নিশ্চিত করা। সে পরিবর্তন যেন কোনক্রমে চাপানো পরিবর্তন না হয় সে জন্য মানুষের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে এই দল অগ্রসর হবে।

সরকারি কর্মচারিদের সেবা নিশ্চিত করবে
গ্রাম কমিটির কাজ হবে গ্রামের অন্যান্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, ব্যক্তিদের যথাসম্ভব সম্পৃক্ত করে গ্রামোন্নয়নের একটি পরিকল্পনা রচনা করা। পরিকল্পনা রচনার পর সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া। …। ইউনিয়ন পর্যায়ে যে সব সরকারি কর্মচারি আছেন (যেমন প্রাইমারি শিক্ষক, ব্লক সুপারভাইজার, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীগণ ও অন্যান্য) তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন কি না সে ব্যাপারে মনিটর করার জন্য দলের ইউনিয়ন কমিটিকে সাহায্য করা। ইত্যাদি।

গ্রামের কর্মী গ্রুপগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ইউনিয়ন কমিটি, ইউনিয়ন কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে থানা কমিটি গঠন করা হবে। …। একইভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। …। সকল পর্যায়ের কমিটিতে সর্বোচ্চ পদের তিনটির মধ্যে অন্তত একটি পদে মহিলা নির্বাচিত করতে হবে। সকল কমিটিতে মোট অন্তত তিনজন মহিলা থাকবেন।

দলের লক্ষ্য
যে লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে "আমার দল" সকল মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করবে সেগুলো ক্রমানুসারে নিম্নরূপঃ
পূর্বঘোষিত সময়সীমার মধ্যে-
দেশে দৃঢ়ভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা
সমাজকে দূর্নীতিমুক্ত করা
দেশ থেকে দারিদ্রের সকল চিহ্ন মুছে ফেলা
দেশকে সম্পূর্ণ নিরক্ষরতামুক্ত করা
অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা
সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা
দেশকে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া
হিংসা বিদ্বেষমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা
"আমার দলের" কাছে রাজনীতির অর্থ হবে সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ যাতে সম্মানের সঙ্গে, ব্যক্তি ও রাস্ট্রীয় স্বাধীনতার সঙ্গে, শান্তিতে প্রগতি নিশ্চিত করে বেঁচে থাকতে পারে।
এই দলের রাজনীতি ব্যক্তির অধিকারকে সুনিশ্চিত করবে। একজন নাগরিক যাতে আরেক জন নাগরিকের অধিকার খর্ব করতে না পারে তার আয়োজন নিশ্চিত করবে। জ্বালাও, পোড়াও, খতম কর, ধরণের বিভীষিকাপূর্ণ রাজনীতি যাতে জায়গা না পায় সে আয়োজন করবে।
মনোয়ন দেবে স্থানীয় কমিটি
দেশের সাধারণ নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচন, বা যে কোন নির্বাচনে এই দল থেকে কোন প্রার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনীত করা হবে না। সকল প্রার্থী স্থানীয় কমিটি দ্বারা মনোনীত হবেন। যারা স্থানীয় উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
…। নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী জয়ী হলে পরাজিত প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসবেন। তাদের সহযোগিতা কামনা করবেন। দেশের রাজনীতিতে পরাজিত প্রার্থীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রশংসামূলক বক্তব্য রাখবেন।
জনসভা করবে না
…। টাকার জোরে মিটিং-এর জোর। যেহেতু জনসভা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে "আমার দল" জনসভাকে জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে না। পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক, স্থানীয় বৈঠক, আলোচনা সভার মাধ্যমে মতের আদান প্রদান করবে।
আমরা সব জানি এমন ভাববো না
…। সকল ক্ষেত্রে আমার দল সকলের পরামর্শ গ্রহণ করবে এবং নিজেদের চিন্তাভাবনা অন্যদের অবগত রাখবে। …। ক্ষমতাসীন সরকার ভাল কাজ করলে এ দল প্রশংসা করবে। অভিনন্দিত করবে। …। সব সময় ভাল কাজ করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রাখবে। যখন দরকার হবে কঠোর সমালোচনা করবে। বিকল্প পথ দেখিয়ে দেবে। …।
গ্রাম সরকার ও উপজেলা সরকার
…। স্থানীয় সরকারকে সফল করার মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকার নিজের কর্মসূচিকে সফল করার উদ্যোগ নেবে। কেন্দ্রীয় সরকারের আয়তন বিপুলভাবে হ্রাস করা হবে। কিন্তু এই সরকার দক্ষতায় সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে। বাংলাদেশকে সার্ক দেশ সমূহের মধ্যে সবচাইতে দক্ষ অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক শক্তিকে প্রয়োগ করবে।
স্থানীয় পুলিশ
"আমার দল" ক্ষমতায় গেলে পুলিশি ব্যবস্থাকে পাল্টে ফেলবে। স্থানীয় পুলিশ ব্যবস্থা চালু করবে। উপজেলা সরকারের নিজস্ব পুলিশ থাকবে। স্থানীয় পুলিশ প্রধান একজন নির্বাচিত ব্যক্তি হবেন। …। কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী কেন্দ্রীয় সরকারের আইন রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
এই দল বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে দেবে। উপজেলা পর্যায়ে বিচার ব্যবস্থা চালু করবে। …। গ্রাম সরকার সালিশের মাধ্যমে যে সমস্ত মামলা নিস্পত্তি করতে পারবে না সেগুলো তাদের সুপারিশক্রমে উপজেলায় যাবে। গ্রাম সরকারের সালিশ কোন এক পক্ষ মেনে না নিলে তিনি মামলাটি উপজেলা আদালতে নিয়ে যেতে পারবেন।
আমার দলের সরকার দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। কোন সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে প্রতি ঘন্টা সরবরাহ বন্ধ থাকার জন্য উচ্চ হারে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। …।
মন্ত্রীদের জন্য সিংহাসনাকৃতির চেয়ার পরিবর্তন করে সাধারণ চেয়ারের ব্যবস্থা করবে। মন্ত্রী যেখানেই যাবেন সেখানে দুই ডজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যাতে তাকে ঘিরে রাখতে না পারেন সে ব্যবস্থা করবে।
প্রধান মন্ত্রী যেখানে যাবেন সেখানে যাতে সারা বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাজিরা দিতে না হয় তার ব্যবস্থা করবে।
তদবির মন্ত্রণালয় হবে
…। একজন দক্ষ মন্ত্রী এর দায়িত্বে থাকবেন। দেশের সর্বত্র এর অফিস স্থাপন করা হবে। এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকল প্রকার তদবির সাদরে গ্রহণ করা হবে। আইনের বরখেলাফ না করে যে সব তদবির পূরণ করা যাবে সে সব তদবিরের সূরাহা করা যাবে। সকল ক্ষেত্রে তদবিরের ফলাফল তদবিরকারীকে অফিসিয়ালি জানিয়ে দেয়া হবে।
…।
সবার উপরে মানুষ সত্য
সরকারের কোন অংশ যত গুরুত্বপূর্ণই হউক, যদি মানুষের অবমাননা বা হয়রানির কারন হয়, যদি মানুষের সৎভাবে দৈনন্দিন জীবন কাটাবার পথে বাধার সৃষ্টি করে, মানুষের সৎ জীবিকা অর্জনে সহায়ক না হয়ে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়- "আমার দলের" সরকার সে অংশ সম্পূর্ণ রূপে বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেবে। তার অভাব পূরণের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কাজ সমাধা করার উপযুক্ত বিকল্প কাঠামো পরবর্তীতে গড়ে তোলা হবে।
মানুষের চেয়ে জরুরি, মানুষের চেয়ে মূল্যবান এ সরকারের নিকট আর কিছুই হতে পারে না। "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই"… এই বাণীই হবে সরকারের মূলমন্ত্র।
পাল্টে ফেলতে পারি এই হতভাগা দেশটিকে যদি…
…। বাংলাদেশের মানুষ বড় সৃজনশীল। বাংলাদেশের তরুণরা অসাধ্য সাধন করতে পারে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। শুধু দরকার সংগঠনের। শুধু দরকার মানুষকে পাগল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি। তাইওয়ান বাঘ হলো, কোরিয়া বাঘ হলো, চীন বাঘ হতে যাচ্ছে, ভিয়েতনাম নাকি বাঘের পালে প্রায় ঢুকে পড়লই বলে। বাংলাদেশের তরুণরাও এদেশকে বাঘ বানাতে পারে যদি তাদের মুরব্বিরা তাদের চালাতে জানে। কাজের মন্ত্র শিখিয়ে দিতে পারে। তখন বাংলাদেশের তরুণরাও মাথা উঁচু করে বড় গলায় দুনিয়াকে বলতে পারবে "বাঘ দেখেছো, রয়েল বেঙ্গল টাইগার দ্যাখোনি"। এবার দেখাবো খন।
একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে
বাংলাদেশে নদীর একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এদল ভাঙ্গে, ওদল গড়ে। বাংলাদেশের মানুষের এটা গা সওয়া ব্যাপার। এর কোনটাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে নতুন কোন বার্তা নিয়ে আসে না। দলের ভাঙ্গা গড়া নিয়ে খবরের কাগজ ক'দিন গরম থাকে। তারপর আবার সব ঠাণ্ডা হয়ে যায়। নেতারা দল বদলায়। তার সঙ্গে বংশবদ কর্মীরাও দল বদলায়। যে সহকর্মী বন্ধুরা তাদের সঙ্গে দল পাল্টালো না তাদের মাথা ফাটায়, তাদের গলায় ছুরি চালায়, গোলাগুলি করে। এটাই না কি দল ভাঙ্গার নিয়ম। কিন্তু এতো কিছু হওয়ার পরও রাজনীতি বদলায় না। দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মানুষের আশংকা কমে না, বরং বাড়ে।
…। আপনারা কি পারবেন তাদেরকে বিশ্বাসী করে তুলতে? দেশের নেতৃত্বের উপর তাদের বিশ্বাস আবার আনতে? তাদের নিজেদের উপর বিশ্বাস আনতে? এ দেশের অন্তর্নিহিত শক্তির উপর বিশ্বাস আনতে? এ দেশের ভবিষ্যতের উপর বিশ্বাস আনতে?
(ক'দিন থেকে আমার ডান হাতের কুনুই-এ কিছুটা জখম। তা না'হলে আমি হয়তো পুরোটাই টাইপ করে ফেলতাম!) গণ ফোরাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। একদিন হয়তো বিলুপ্তও হয়ে যাবে। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের রাজনৈতিক ভাবনা পথ দেখিয়ে যাবে এ দেশের আশাহীন মানুষকে! আমি বিশ্বাস করি একদিন স্বপ্নের স্বদেশ ভূমিকে আমরা ফিরে পাবো। যে হিংসাত্মক রাজনীতি এই সৃজনশীল স্বপ্নচারী মানুষটিকে তীরে তীরে বিদ্ধ করছে, একদিন তাদেরও হয়তো জ্ঞান ফিরবে। তখন হয়তো আমাদের বলতে হবে- বড্ড দেরি হয়ে গেছে!